শিক্ষা খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির কড়া সমালোচনা সংসদে

প্রকাশিতঃ 7:37 pm | June 30, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

দেশের শিক্ষা খাতের ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে জাতীয় সংসদে কড়া সমালোচনা করেছেন সংসদ সদস্যরা। তারা বলেছেন এই খাতে অনিয়ম এতটাই ভয়াবহ যে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। রবিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় এসব সমালোচনা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছয়জন সংসদ সদস্য ছাঁটাই প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক অনুপস্থিত ছিলেন। বাকি পাঁচজন বক্তব্য দেন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য (নাটোর-১) আবুল কালাম বলেন, সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি। শিক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতি, এটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। টাকা দেওয়া ছাড়া কোনো শিক্ষক অবসরভাতা পাচ্ছেন না। টাকা ছাড়া কিছুই হয় না।

অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সংসদ সদস্যদের অন্যান্য অভিযোগের জবাব দিলেও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলেননি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে আবুল কালাম বলেন, রেলের খালাসি পদে ২ হাজার ১০০ ছেলেমেয়ের চাকরি হয়েছে, যাদের সবাই অনার্স–মাস্টার্স পাস। এটা খুবই কষ্টের বিষয়। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাড়ানোর পক্ষে। কিন্তু আগামী অর্থবছরে কমপক্ষে পাঁচ লাখ অনার্স-মাস্টার্স পাস ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে কোনো শিক্ষিত বেকার না থাকে।

আরেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হামিদুল হক খন্দকার (কুড়িগ্রাম-২) বলেন, শিক্ষায় বরাদ্দ সব সময় জিডিপির লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে থাকে। শিক্ষাব্যবস্থায় বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, বৈষম্য লেগেই আছে। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক, শিক্ষাক্রম ও আঞ্চলিক বৈষম্য রয়েছে। মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা একই কর্মস্থলে পাঁচ-সাত বছর থেকে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

আরেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য (বরিশাল-৪) আসনের পংকজ নাথ বলেন, এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রশংসনীয়। তবে কুড়িগ্রামের চিলমারীর কেউ যদি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে নিয়োগ পান, তাহলে তিনি যোগদান করেন না। পার্বত্য এলাকায় আরও সমস্যা। এ কারণে শিক্ষক নিয়োগের পরেও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই নিয়োগ অঞ্চলভিত্তিক করার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

সংসদ সদস্যদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সভাপতি হওয়ার বিষয়ে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে কি না, তা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জানতে চান পংকজ নাথ। তিনি বলেন, ‘আসলে এমপিদের সবাই অপমান করে। সবাই এমপিদের অসম্মান করতে খুব উৎসাহ বোধ করেন।’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ভবন হয়েছে, কিন্তু শিক্ষার মানের পরিবর্তন হয়নি। আমার নির্বাচনি এলাকায় একটি সরকারি বিদ্যালয়ে ৪৩টি শ্রেণিকক্ষ আছে। পাঠদান হয়নি পাঁচটিতে।

এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, এমপিওভুক্তির আবেদন নেওয়া বন্ধ আছে। এমপিওভুক্তির জন্য বিভিন্ন টেবিলে যেতে হয়। ধাপে ধাপে টেবিল মানে ধাপে ধাপে দুর্নীতি।

ঝিনাইদহ-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদী প্রশাসনিক ব্যয় কমিয়ে শিক্ষা–গবেষণায় ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।

সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। দূরবর্তী জায়গায় অনেকে যোগদান করেন না, এটা ঠিক। তারপরও গত ৬ মাসে ৯৯ হাজার শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আইন সংশোধনের মাধ্যমে সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সংসদ সদস্যদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি হতে না পারা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কালের আলো/ডিএইচ/কেএ