রায় স্থগিত নয়, আপিল করে শুধু জামিন চাইবেন খালেদা
প্রকাশিতঃ 3:16 pm | February 11, 2018

স্টাফ রিপোর্টার | কালের আলো:
দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে এখন কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দণ্ডিত হওয়ার পর তিনি নির্বাচন করতে পারবে কিনা এ নিয়ে সর্বমহলে আলোচনা চলছে। হাইকোর্টে আপিল করার পর রায় স্থগিত হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।
তবে খালেদা জিয়ার পক্ষে আপিল করে এখনই রায় স্থগিত চাইবেন না আইনজীবীরা। এ মুহূর্তে শুধু জামিন চাওয়া হবে। এর পর সময় সুযোগ মতো দণ্ড স্থগিতের জন্য আবেদন করা হবে।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী এবং বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “রায়ের সত্যায়িত অনুলিপির জন্য বিচারিক আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত অনুলিপি পাবো। অনুলিপি পাওয়ার পর হাইকোর্টে আপিল করবো। এটা হাইকোর্টের একক বেঞ্চে করতে হবে।”
আপিল আবেদন দাখিলের পর এর গ্রহণযোগ্য নিয়ে শুনানির জন্য দুই/একদিনের মধ্যে তারিখ ধার্য হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আপিলের সময় জামিনও চাইবো। এটা সংক্ষিপ্ত সাজা। আশা করি, আদালত জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করবেন। তবে, আমরা এখন দণ্ড স্থগিত চাইবো না। শুধু আপিল। আর আপিলের সঙ্গে জামিন আবেদন, কৌশল মতো পরে দণ্ড স্থগিত চাইবো।”
বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন নিম্ন আদালত।
আদালতে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা – এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এ নিয়ে কথা বলেছেন।
তারা বলছেন, নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্যতা নির্ধারিত হয় বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে।
এতে বলা হয়েছে, কেউ যদি কোনো ‘নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে’ দোষী সাব্যস্ত হয়ে দুই বছরের বেশি মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হন- তাহলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্যতা হারাবেন।
তবে মূল দণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত ব্যক্তি যদি উচ্চ আদালতে আবেদন বা আপিল করেন এবং সেই আপিল বিচারাধীন থাকে- তখনও নির্বাচনে লড়ার ওপর সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে কিনা- এ বিষয়ে আইনে কিছুটা অস্পষ্টতা আছে।
কর্মকর্তারা আরো বলছেন, কোনো দণ্ডিত ব্যক্তি যখন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন- তখনই রিটার্নিং অফিসারের ক্ষমতা থাকে আইনি ব্যাখ্যা সাপেক্ষে এই মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা খারিজ করার।
মনোনয়নপত্র যদি কোনো কারণে খারিজ হয়ে যায়, তাহলে সেই ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনের কাছে আপিল করতে পারেন – কিন্তু সে আবেদন নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ।
এর নিষ্পত্তি হতে হতে নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে, এমনও হতে পারে- বলেন ওই কর্মকর্তা।
কিন্তু আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো, এর পর খালেদা জিয়া কি এ বছরের শেষে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।
এ নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ খুব নিশ্চিতভাবে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলছেন, “খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কিনা তার চাইতেও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনের সময় তিনি জেলের ভেতরে থাকবেন না মুক্ত থাকবেন।”
আসিফ নজরুলের কথায়, খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে অংশ নিতে না-ও পারেন, তবুও তিনি যদি জামিনে থাকেন এবং প্রচারাভিযানে অংশ নিতে পারেন- তাহলে এই কারাদণ্ড বিএনপির জন্য নেতিবাচক না হয়ে বরং ইতিবাচক হতে পারে।
“কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, কোনো কারণে যদি বেগম জিয়া জামিন না পান এবং তার বিরুদ্ধে আরো মামলা রয়েছে সেটাও মনে রাখতে হবে- তিনি যদি ক্যাম্পেইনটা করতে না পারেন বিএনপি পরিস্থিতিটা কতটা কাজে লাগাতে পারবে – সেটা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ থাকবে” – বলেন তিনি।
“তাই বেগম জিয়া নির্বাচনের সময় জামিনে মুক্ত থাকবেন কিনা এটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে”- বলছিলেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
খালেদা জিয়াকে আসলে ঠিক কত দিন জেলে থাকতে হতে পারে?
রায়ের সত্যায়িত কপি হাতে পাওয়ার পরই কেবল খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিলের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন, এবং ততদিন পর্যন্ত খালেদা জিয়া বন্দী থাকবেন। এই রায়ের কপি পাওয়ারর কি কোনো সময়সীমা আছে?
আইনবিদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক শাহদীন মালিক বলছেন, “কোনো সময়সীমা বাঁধা নেই। তবে সার্টিফায়েড কপির আগে টাইপ করা কপি যাকে বলা হয় ট্রু কপি- সেটা হয়তো আইনজীবীরা আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকেই পেয়ে যেতে পারেন এমন কথা শোনা গেছে।
তিনি বলেন, “আইনি প্রক্রিয়ায় যেটা হয়, নারীদের ব্যাপারে, বয়েস বেশি হলে বা সাজা কম বলে- কারণ এটা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নয় এবং পাঁচ বছরের কারাদণ্ডকে কম সাজাই বলতে হবে- তাই এসব বিবেচনায় হয়তো আমার সাধারণ জ্ঞানের যেটা ধারণা হয় – জামিন হয়ে যেতে পারে।