বাংলাদেশে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ

প্রকাশিতঃ 3:39 pm | May 17, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

গ্লোবাল বারডেন অফ ডিজিজ স্টাডি (জিবিডি), ২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান তিনটি কারণের একটি উচ্চ রক্তচাপ। ডব্লিউএইচও’র গ্লোবাল রিপোর্ট অন হাইপারটেনশন ২০২৩ এর তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে দুই লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগজনিত অসুস্থতায় মারা গেছেন।  যার মধ্যে ৫৪ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ।

উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ মোকাবেলায় সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের ওষুধ তালিকায় উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিস এর ওষুধ অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের ওষুধ তালিকায় উচ্চ রক্তচাপের জন্য এমলোডিপিন ও মিলিগ্রাম ও ডায়বেটিসের জন্য মেটফরমিন ৫০০ মিলিগ্রাম সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ মোকাবেলার ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এছাড়াও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য খাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনায়ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ করে ২০২৫ সালের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রাদুর্ভাব তুলনামূলকভাবে ২৫ শতাংশ কমানোর (relative reduction) জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বাইরে উচ্চ রক্তচাপ ব্যবস্থাপনায় জাতীয় গাইডলাইন এবং এর চিকিৎসায় ন্যাশনাল প্রোটোকল প্রণয়ন করা হয়েছে।

এর বাইরেও সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদী (২০১৭-২০২২) হেলথ, পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রিশন সেক্টর প্রোগ্রাম (৪র্থ এইচপিএনএসপি)-এ অসংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনায় উচ্চ রক্তচাপকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও উচ্চ রক্তচাপ পরিমাপের পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যেখানে ২০২৫ সালের মধ্যে হৃদরোগসহ অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যুহার ২১:৬ শতাংশ থেকে ১৬.৮ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করা, চিকিৎসা প্রদান এবং ফলোআপ কার্যক্রম শক্তিশালী করা হচ্ছে। কার্যক্রমটি দেশের ১৮২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং চারটি সদর হাসপাতালে সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে দেশের জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ এবং মোট জিডিপির ৫% বরাদ্দ হওয়া উচিত। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে দেশের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের ৫ শতাংশ এবং মোট জিডিপির মাত্র ০.৭৬ শতাংশ। গত অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫.৪ শতাংশ এবং জিডিপির ০.৮৩ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য খাতে সরকারের মোট অর্থায়নের মধ্যে ৫ শতাংশেরও কম ব্যয় হয় অসংক্রামক রোগ সংক্রান্ত বাজেটে।

চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগের প্রকোপ মোকাবেলায় এ খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি তথা টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ব্যক্তির ওপর চিকিৎসাজনিত ব্যয়ের বোঝা হ্রাস করা সম্ভব হবে না।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে ওষুধ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এখাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি সবাইকে ফাস্ট ফুডজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা, ধুমপান বর্জন করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ নানা পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘সঠিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করে চিকিৎসক নিশ্চিত করলে আজীবন এই ওষুধ সেবন করতে হবে। কেউ কেউ সমস্যার সমাধানে তেঁতুল কিংবা টকজাতীয় জিনিস খেয়ে থাকেন এটা ভ্রান্ত ধারণা। টকজাতীয় জিনিসের সঙ্গে রক্তচাপ কমার কোনো সম্পর্ক নেই।’

নিজেদের কার্যরক্রম নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) এর লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, ‘আমরা পর্যায়ক্রমে দেশের সব কটি উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। এই কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ ও অসংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।’

আর ওষুধের বিষয় নিয়ে এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) এর উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা আশা করছি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সকল কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’

কালের আলো/এমএইচ/এসবি