বিশেষ বিসিএসে বেশি, সাধারণ বিসিএসে কমেছে নারী ক্যাডারের সংখ্যা

প্রকাশিতঃ 9:49 pm | May 10, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:

২০১৭ সালে ৩৬তম বিসিএসে ২ হাজার ৩২৩ জনকে চূড়ান্ত সুপারিশ করে পিএসসি। এরমধ্যে নারী ক্যাডার ছিলেন ৬০৯ জন, যা মোট নিয়োগপ্রাপ্তদের ২৬ দশমিক ২২ শতাংশ। বিপরীতে পিএসসি প্রকাশিত ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সর্বশেষ ৪৩তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২ হাজার ১৬৩ জনকে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নারী প্রার্থী মাত্র ৪২১ জন। বাকি এক হাজার ৭৪২ জনই পুরুষ।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে নারী ক্যাডারের সংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, আগের পাঁচ বিসিএসে নারীদের নিয়োগের হার ছিল এক-চতুর্থাংশ, অর্থাৎ ২৫-২৬ শতাংশের ঘরে। সর্বশেষ ৪৩তম বিসিএসে সেটি নেমেছে ২০ শতাংশেরও নিচে। অবশ্য এর নেপথ্যে রয়েছে কোটা বাতিল। তবে বিশেষ বিসিএসে নারীদের নিয়োগ পাওয়ার হার তুলনামূলক বেশি।

জানা যায়, সরকারি চাকরিতে দীর্ঘদিন ১০ শতাংশ নারী কোটা ছিল। ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর সরকার কোটা পদ্ধতি বাতিল করে। এতে বিসিএসেও নারী কোটা বাতিল হয়। ৩৮তম বিসিএসে সর্বশেষ নারী কোটা বহাল ছিল। ৩৯তম বিসিএস ছিল ‘বিশেষ বিসিএস (স্বাস্থ্য)’।

৪০ ও ৪১তম বিসিএসে নারী কোটা না থাকলেও নারী প্রার্থীদের নিয়োগ পাওয়ার হার ছিল ২৬ শতাংশের ঘরে। তখন বলা হয়েছিল কোটা বাতিল হলেও নারী ক্যাডার কমেনি। ৪২তম বিসিএসও ছিল বিশেষ। সর্বশেষ ৪৩তম বিসিএসে ব্যাপক হারে নারী ক্যাডার কমেছে।

পিএসসির কর্মকর্তারা অবশ্য এখন বলছেন বিসিএসে নারী ক্যাডার কমে যাওয়ার পেছনে নারী কোটা বাতিলের একটা প্রভাবও রয়েছে। তবে এ বিষয়ে কেউ সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি।

পিএসসির সদস্য সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘ছেলেরা চাকরির ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়। মেয়েরা অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা বেশি করে, সেখানে ভালো ফল করে। অনেক ছেলে তো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই চাকরির পড়াশোনা শুরু করে। পাশাপাশি বাইরের জ্ঞানেও তারা এগিয়ে থাকে। বিশেষ করে সমসাময়িক ঘটনা, গণমাধ্যমের খবরে তারা চোখ রাখে। এজন্য ছেলেরা এগিয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘খুব সাধারণভাবে চিন্তা করুন, দেখবেন বিসিএস পরীক্ষার সময় মেয়েদের বিয়ের বয়স হয়। আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটই এমন। এতে অনেকেই সন্তান নিয়ে সংসারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এসব কারণে বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।’

পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন অবশ্য মেয়েরা খুব পিছিয়ে তা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘বিসিএসে এখনো আবেদনের হার ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের তুলনামূলক কম। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় সব পর্যায়েই তো নারী প্রার্থীদের অংশগ্রহণের হার কম। তারপরও বলবো মেয়েরা আগামীতে ভালো প্রস্তুতি নিয়ে মেধা দিয়ে আরও ক্যাডার হবেন।’

সাধারণ বিসিএসে নারী ক্যাডার কম হলেও বিশেষ বিসিএসে তাদের নিয়োগ পাওয়ার হার তুলনামূলক বেশি। পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনে সর্বশেষ ৩৯ ও ৪২তম বিসিএসের যে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে, তা থেকে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ দুটি বিসিএসে শুধুমাত্র চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

৩৯তম বিশেষ বিসিএসে মোট ৬ হাজার ৭৯২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ১৯২ জনই নারী। বাকি ৩ হাজার ৬০০ জন পুরুষ। শতাংশের হিসাবে ৪৭ শতাংশ নারী এবং ৫৩ শতাংশ পুরুষ। ৪২তম বিশেষ বিসিএসে অবশ্য নারী ক্যাডার আরও বেড়েছে। এ বিসিএসে ৪ হাজার ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হয়। এরমধ্যে নারী এক হাজার ৯৬১ জন এবং পুরুষ ২ হাজার ৩৯ জন। সে হিসাবে ৪৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশই নারী এবং ৫০ দশমিক ৯৮ শতাংশ পুরুষ।

কালের আলো/একে/এমবি