টিকিট ছাড়া যাত্রী ঠেকাতে ৪ স্টেশনে ‘বাঁশ থেরাপি’

প্রকাশিতঃ 2:39 pm | March 25, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। স্টেশনে স্টেশনে টিকিট প্রত্যাশীদের দুর্ভোগ কমাতে এবারও সব অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে।

অন্যদিকে টিকিটবিহীন যাত্রী ঠেকাতে গতবারের মতো এবারও ৪টি স্টেশনে বাঁশের জিগজ্যাগ তৈরি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগ।

তবে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই উদ্যোগ গতবারের মতো এবারও শেষের দিকে ভেস্তে যেতে পারে। তারা জানান, রেলে সক্ষমতা বাড়ানোই মূল কথা। অন্তত চাহিদার কাছাকাছি জোগানের ব্যবস্থা করতে হবে রেলওয়েকে।

আগামী ৩ এপ্রিল ভোর ৬টায় রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে ট্রেনে ঈদ যাত্রা। ঈদ স্পেশাল ট্রেনসহ ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর ট্রেনের মোট আসন সংখ্যা ৩৩ হাজার ৫০০টি। গতবারের চেয়ে এবার আসন সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ হাজার ৭২২টি।

রবিবার (২৪ মার্চ) ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গতবারের মতো এবারও বাঁশের জিগজ্যাগ তৈরি করা হচ্ছে। পাঁচটি পথ রয়েছে এই জিগজ্যাগে। জিগজ্যাগের প্রথম পথটি গিয়ে মিলেছে কাউন্টারের সামনে। যেখান থেকে যাত্রীরা ট্রেন ঢাকা স্টেশন ছেড়ে দেওয়ার আগে স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনতে পারবেন। তারপরের তিনটি পথ দিয়ে মূলত যাত্রীদের প্রবেশ করতে হবে স্টেশন অংশে। আর পঞ্চম পথটি তৈরি করা হয়েছে, যে সকল যাত্রী ট্রেন থেকে নেমে ঢাকায় প্রবেশ করবেন তাদের জন্য।

আরও দেখা গেছে, পুরো স্টেশন ঘষেমেজে পরিষ্কার করা হচ্ছে। রং করা হচ্ছে ছাদসহ প্রতিটি দেওয়াল। ঝাড়বাতিতে সাজানো হচ্ছে পুরো স্টেশন।

যারা টিকিট সংগ্রহ করেছেন তারা নির্বিঘ্নে যেন ট্রেনে চড়তে পারেন এবং কেউ যেন বিনা টিকিটে প্ল্যাটফর্মে যেতে না পারেন সেজন্যই এই আয়োজন। মূলত বাঁশ দিয়ে তৈরি এসব জিগজ্যাগ বোটলনেক সিস্টেমে (একাধিক পথ একসঙ্গে এসে মিলিত হওয়া) ৩টি থেকে ২টি প্রবেশ পথে গিয়ে মিলেছে। এসব জিগজ্যাগের মুখেই চেক করা হবে যাত্রী ও সহযাত্রীদের টিকিট ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। এজন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে সব যাত্রীকে ভ্রমণকালে টিকিটসহ জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে অনুরোধ করেছে রেলওয়ে। একইসঙ্গে সময় নিয়ে যাত্রীদের স্টেশনে আসতে বলা হয়েছে।

এছাড়া স্টেশনের শুরুতেই বসানো হবে র‍্যাব-৩, বাংলাদেশ রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী (আর.এন.বি) এবং পুলিশের কন্ট্রোল রুম। তারপরেই রয়েছে বাঁশের তৈরি জিগজ্যাগ। এখানেই যাত্রীদের টিকিট চেকিং করা হবে। একই ব্যবস্থা রয়েছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন, বিমানবন্দর স্টেশন ও জয়দেবপুর জংশনেও।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রার সুবিধার্থে ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করা সব আন্তঃনগর ট্রেনের ডে-অফ (সাপ্তাহিক ছুটি) বাতিল করা হয়েছে। আগামী ৩ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এসব ট্রেনের কোনো ডে-অফ থাকবে না। ঈদের পরে যথারীতি সাপ্তাহিক ডে-অফ কার্যকর থাকবে। এছাড়া ঈদের দিন কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না।

ঈদুল ফিতরে চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (১ ও ৩) চট্টগ্রাম-চাঁদপুর; চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (২ ও ৪) চাঁদপুর-চট্টগ্রাম; ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল (৫ ও ৬) চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম; দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল (৭ ও ৮) ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে ৫ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এবং ঈদের পরে ৫ দিন চালানো হবে।

কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল (৯ ও ১০) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ঈদের আগে (৮ ও ৯) এপ্রিল ও ঈদের পরের দিন থেকে ৩ দিন চলাচল করবে।

ঈদ স্পেশাল (১৫ ও ১৬) জয়দেবপুর-পার্বতীপুর-জয়দেবপুর রুটে ঈদের আগে ৭-৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৩ দিন এবং ঈদের পরের দিন থেকে ৩ দিন চলাচল করবে।

এছাড়া শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল (১১ ও ১২) ভৈরব বাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব বাজার; শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল (১৩ ও ১৪) ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে শুধু ঈদের দিন চলাচল করবে।

রেলওয়ের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সরদার সাহাদাত আলী বলেছেন, ঈদে সময়ানুবর্তিতা রক্ষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও জংশন স্টেশন এবং সিগন্যাল কেবিনে কর্মকর্তা ও পরিদর্শকদের তদারকির মাধ্যমে ট্রেন অপারেশন পরিচালনা করা হবে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও ট্রেন শিডিউল অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে রেলপথ পেট্রোলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। রেল ব্রীজসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিগনালিং ব্যবস্থা, কোচ এবং ইঞ্জিনের নিবিড় পরিচর্যা ও পরীক্ষা সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুর্ঘটনাস্থলে প্রেরণের লক্ষ্যে রিলিফ ট্রেন সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হবে।

তিনি আরো বলেন, ঈদে অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য মোট ৮৬টি (পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ থেকে ৫০টি এমজি ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ থেকে ৩৬টি) বিজি যাত্রীবাহী কোচ সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য মোট ২৪৮টি (পূর্বাঞ্চল ১৩২টি ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে ১১৬টি) লোকোমোটিভ যাত্রীবাহী ট্রেন ব্যবহারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেছেন, সাংবাদিকরা অনেক সময় বলে থাকেন যে রেলের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে সহজ ডট কমের লোকজন জড়িত। আমরা বিষয়টি অবগত আছি। তাদের সতর্ক করা হয়েছে। আমরা যাত্রীদের সেবার মান বাড়াতে চাই। যাত্রীদের অসুবিধায় ফেলে আমরা কাউকে কোনো সুযোগ সুবিধা দিতে চাই না। সে যেই হোক না কেন। টিকিট কালোবাজারি রোধে আমরা একটু সিক্রেট ব্যবস্থা নিয়েছি। আপাতত এতটুকুই বললাম। আমরা নতুন কিছু যুক্ত করেছি।

কালের আলো/জিকেএম/এসবি