জনস্বার্থের মামলায় বাড়ি ছাড়ার ‘বিরল রায়ের’ বিরুদ্ধে আপিল করবেন সালাম মূর্শেদী

প্রকাশিতঃ 8:40 pm | March 19, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

জনস্বার্থের মামলায় গুলশানের বাড়ি তিন মাসের মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়কে ‘বিরল’ বলছেন খুলনা-৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় তিনবারের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। তিনি বলেন, এর আগে কখনো উচ্চ আদালত এরকম রায় দেননি। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) হাইকোর্টের রায়ের পর গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে তিনি এসব কথা বলেন। বিষয়টির ব্যাখ্যা করে অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘কোনো (কম্পিটেন্ট) উপযুক্ত আদালত এর আগে সালাম মুর্শেদীর বাড়ি নিয়ে কোনো রায় দেননি। সরাসরি হাইকোর্টে এসে বাড়ি নিয়ে জনস্বার্থে মামলা করলেন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। এ ধরনের রায় বিরল। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।’

এর আগে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) আব্দুস সালাম মূর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি তিন মাসের মধ্যে ছাড়তে হবে বলে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে তাকে গুলশানের বাড়ি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক। সালাম মূর্শেদীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী, অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।

‘বিরল আদেশ’ ও পরিত্যক্ত সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন

হাইকোর্ট সালাম মূর্শেদীর বাড়িটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করলেও তাঁর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, স্বাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণিত হলেই কেবল বাড়িটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি বলা যাবে। তিনি বলেন, ‘আদালত আজ রুল নিষ্পত্তি করেছে। দুদকের মামলার বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। আমাদের সম্পত্তির বিষয়ে কোন কমেন্টস করেনি। আমরা কীভাবে সম্পত্তি পেয়েছি, মালিকানা নিয়েও কোন মন্তব্য করেননি। শুধু বলেছেন, এটি একটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। এজন্য ৩ মাসের মধ্যে সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে নির্দেশ দিয়েছে। এ ধরণের আদেশ বিরল , হাইকোর্ট ডিভিশন থেকে ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির মামলা উচ্চ আদালতে বিবেচনার জন্য এসেছে তখন থেকে এ পর্যন্ত এরকম হয়নি। অবশ্যই এই রায়ের বিরুদ্ধে আমি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংস্থা আপিল করবে।’

সেল পারমিশনের মাধ্যমেই আমাদের কাছে সেল করা হয়েছে

তিনি বলেন, ‘এখানে রাউজকের স্ট্রং কেইস রয়েছে। গুলশানের পুরো এলাকাটি রাজউকের। রাজউক সম্পত্তিটি অবমুক্ত করেছে। সেল পারমিশনের মাধ্যমেই আমাদের কাছে সেল করা হয়েছে। আমরা আদালতকে বলেছি, রাজউকের সেল পারমিশনের বাইরে একজন ক্রেতার কোন কিছু দেখার থাকে না। মাননীয় আদালত এসব বিষয়ে কোন আলোকপাত না করে ডাইরেক্ট করে বলে দেন এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। এই পরিত্যক্ত সম্পত্তির জন্য এটি ছেড়ে দিতে নির্দেশ দেন।’

আবেদ খান, মওদুদ ও মূর্শেদীর ঘটনা এক নয়

গণমাধ্যমকর্মীরা এর আগে সাংবাদিক আবেদ খান, প্রয়াত বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এর বাড়ি ছাড়ার বিষয়টি উত্থাপন করেন। এ সময় আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘যখন আবেদ খান সাহেবের বাড়ির মামলা হয়, উচ্চ আদালত থেকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে রায় ঘোষণার পর তাকে ছাড়তে হয়। সালাম মূর্শেদীর বেলায় উচ্চ আদালতের কোন রায় নেই। ফর দ্যা ফাস্ট টাইম একটি জনস্বার্থের মামলায় কোর্ট ধরে নিয়েছে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। যার ফলে তাকে ছাড়তে বলেছে। আমরা পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য অপেক্ষা করছি।’

একজন সাংবাদিক বলেন, এর আগে আমরা দেখেছি মওদুদ সাহেবকে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে? এ প্রশ্নে আইনজীবী বলেন, ‘মওদুদ সাহেবের বাড়িটি রায় হওয়ার পর ছাড়তে হয়েছে। এটি কিন্তু রায় হওয়ার পর না…..। মওদুদ সাহেবের বিভিন্ন জায়গায় রায় ছিল। আগে একটি কম্পিটেন্ট কোর্টকে (উপযুক্ত আদালত) বলতে হবে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। কোন কোর্ট আমাদের এটি বলেনি।’

দুদক আগে প্রমাণ করুক জালজালিয়াতি হয়েছে

দুদকের আইনজীবীর বক্তব্যের বিষয়ে সালাম মূর্শেদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘দুদক জালজালিয়াতির অভিযোগের কথা বলেছে। কিন্তু এটি প্রমাণিত হয়নি। জাল জালিয়াতি হলে দুদক সরাসরি রায় দিয়ে দিতো এফআইআর (অভিযোগ) করতো না। আগে এটি প্রমাণ করুক এখানে জালজালিয়াতি হয়েছে। দুদক কোন চার্জশিটও দেয়নি।’

সালাম মূর্শেদীর বাড়ি পরিত্যক্ত সম্পত্তি নয়

আব্দুস সালাম মূর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়িটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি বলতে নারাজ তাঁর আইনজীবী। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘অবশ্যই এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি না। পরিত্যক্ত সম্পত্তির যখন আইন আছে তার আগেই আমাকে অবমুক্ত করে দিয়েছে। রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন তারা পুরো গুলশানের মালিক। আমরা যে প্রোপার্টি দেখছি এই প্রোপার্টির মধ্যে পরিত্যিক্ত সম্পত্তির আগে অন্য কাগজ আছে। আমরা আগের কাগজ নিয়ে কাজ করছি। এটি আমরা লিজ নিয়েছি, লিজে এটি বিক্রি করেছে। ১৯৫৮ ও ১৯৬০ সালে গুলশান, বনানী ও বারিধারার প্রতিটি প্লট কোন না কোন পাকিস্তানি পেয়েছে, কয়টা বাঙালি প্লট পেয়েছে? তাঁর মানে কী সবই পরিত্যক্ত সম্পত্তি?, পাল্টা প্রশ্ন রাখেন অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ।

কালের আলো/এমএএইচ/বিএস