বাজারে ঝাঁঝ কমেছে পেঁয়াজের : দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগে মিলেছে সফলতা

প্রকাশিতঃ 11:15 pm | March 18, 2024

কালের আলো রিপোর্ট :

বাজারে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের ঝাঁঝ। ১০০ টাকার ওপরের পেঁয়াজ রাজধানীর বাজারে কেজিতে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় নেমে এসেছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি ও দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় অস্থিরতা কাটিয়ে ফিরেছে স্বস্তি। চোখের জল-নাকের জল এক করে বাড়তি দরে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে না। অসাধু ও মুনাফাখোরদের মাথায় হাত পড়লেও বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার কার্যকর উদ্যোগে প্রথম ধাক্কায় সফল হয়েছে সরকার।

চাল ও সয়াবিন তেলের দামে নিয়ন্ত্রণ আনার পরপরই লঙ্কাকাণ্ড বাধানো উর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের বাজারের এমন স্বস্তির খবর বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু’র বাজার স্থিতিশীলতার নানামুখী প্রচেষ্টার ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, এসবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সাধারণ মানুষকে যৌক্তিক দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে সরকারের আন্তরিকতা প্রমাণিত হয়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নিজেও কথা দিয়ে কথা রেখেছেন। তিনি আগেই বলেছিলেন, ‘শিগগিরই ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে। আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ বাড়াবে।’ আবার, গত শুক্রবার (১৫ মার্চ) আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, চলতি সপ্তাহে ভারত থেকে পেঁয়াজের প্রথম ট্রাক আসবে। ভোক্তা দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ইচ্ছে ছিল রমজানের আগে এ পেঁয়াজ দেশে আনার। নানা কারণে হয়নি। তবে, এ সপ্তাহে প্রথম ট্রাক বাংলাদেশে আসবে। পর্যায়ক্রমে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ দেশে আসবে।’ প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্য কথার কথা নয় মোটেও। সোমবার (১৮ মার্চ) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে অন্তত দেখা মিলেছে সেই চিত্রের।

জানা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে গত ১৫ মার্চ ‘কৃষি বিপণন আইন ২০১৮’-এর ৪(ঝ) ধারার ক্ষমতাবলে ২৯টি দেশি কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বিজ্ঞপ্তিতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত দামে এসব কৃষিপণ্য কেনাবেচার অনুরোধ জানানো হয়। নির্ধারিত মূল্য তিনটি ভাগে করা হয়েছে। পণ্যের উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেঁধে দেওয়া হয়। মূলত দাম বেঁধে দিয়ে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে সব রকমের উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে কঠিন চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হতে চায় সরকার।

কী বলছে পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি?
সোমবার (১৮ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ার বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আবু হোসেন বলেন, ‘মোকামেও পেঁয়াজের দাম কমেছে। গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে পাবনায় পেঁয়াজের দাম অর্ধেক হয়ে গেছে। প্রতি মণ পেঁয়াজ ২ হাজার টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে, যা চার-পাঁচদিন আগে সাড়ে তিন হাজারের আশপাশে ছিল।’

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পবিত্র রমজান মাসে বেশি দামে বিক্রির আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন। এরমধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা এসেছে। ফলে তারা সেই পেঁয়াজ বাজারে ছাড়ছেন। আবার কৃষকেরাও নতুন পেঁয়াজ বাজারে বিক্রির জন্য তুলতে শুরু করেছেন। ফলে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার (১৭ মার্চ) পাবনা এলাকায় প্রতি মণ পেঁয়াজ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। দাম কমে যাওয়ায় বহু কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি না করে বাড়িতে ফিরে গেছেন। এক সপ্তাহ আগে ওই এলাকায় পেঁয়াজের মণ ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা ছিল। এমতাবস্থায় ঢাকার বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, দাম কিছু কমে আসায় ক্রেতারা খুশি মনে কিনছেন। কেউ এক কেজি, দুই কেজি কেউবা আবার কিনছেন পাঁচ কেজি।

পেঁয়াজ কেনার সময় এনামুল হোসেন নামের একজন ক্রেতা বললেন, রোজার প্রথমদিন পেঁয়াজ কিনেছি ৯০ টাকা করে, আজ তা ৬০ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১২০ টাকা। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ভুগিয়েছে পেঁয়াজের দাম। এখন কমছে। এতদিন খুব কম করে কিনছি। আজ অনেকদিন পরে একসঙ্গে দুই কেজি কিনলাম।

কালের আলো/এমএএএমকে