অবিকল্প মেয়র টিটু
প্রকাশিতঃ 7:02 pm | February 26, 2024

দেশের বারোতম সিটি করপোরেশন ময়মনসিংহ। দ্বিতীয়বারের মতো ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট আগামী ৯ মার্চ। এই নির্বাচনকে ঘিরে জোরদার হচ্ছে জনপ্রত্যাশা। বিএনপি না এলেও এবারের ভোট হবে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ এবং উৎসব মুখর। দলীয় ব্যানারে না হওয়ায় উন্মুক্ত ভোটে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লড়াই। সদ্য বিদায়ী মেয়র ইকরামুল হক টিটুতেই কী আস্থা না কী নগরবাসী চান নতুন মুখ? এসব বিষয়কে সামনে রেখে চলছে জল্পনা। ভোট কেমন হবে, নতুন মেয়রের কাছে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের ৩ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব। ময়মনসিংহ মহানগরী ঘুরে এসে প্রতিবেদন লিখেছেন আমাদের জ্যেষ্ঠ নিজস্ব প্রতিবেদক রাইসুল ইসলাম খান অনিক।
তাঁর সঙ্গে প্রতিবার যারা মনোনয়ন যুদ্ধে ধরাশায়ী হয়েছেন এবার তাঁরাই ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন। উন্মুক্ত ভোট হওয়ায় তাঁরা সুযোগ খুঁজছেন। কিন্তু অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে গড়গড়িয়ে এগোচ্ছে বিদায়ী মেয়র মো.ইকরামুল হক টিটুর বিজয়রথ। ‘চিরদিন কারও সমান নাহি যায়’ এই আপ্তবাক্য টিটুর জন্য যেন একেবারেই বিপরীত। কথাটির জুতসই ব্যাখ্যায় বয়োবৃদ্ধ আব্দুর রাজ্জাকের সরল উচ্চারণ— ‘মেয়রের জন্য সব দিনই সমান। পরিবারের সদস্যদের মতোই সবাইকে আপন ভাবেন। তাঁর আত্মীয় পরিচয়ে কোন লম্ফঝম্ফ নেই। আর অন্য অনেকের এক পরিবারে সবাই নেতা। বছরের সব দিনেই মেয়র আমাদের পাশে থেকেছেন, ভালোবাসা কুড়িয়েছেন। ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে ভোটারদের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছেন। তাঁর সঙ্গে খেলার মতো কেউই নেই।’
আব্দুর রাজ্জাকের আলাপেই নির্বাচনী উত্তাপ স্পষ্ট। নির্বাচনী উত্তেজনায় অন্যদের মতো তাঁর কাছেও এখনকার দিনগুলো অন্যরকম। গত শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ভোট প্রসঙ্গে নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ড গলগন্ডা এলাকার সোহাগ মিয়ার চায়ের দোকানে বসে এমনটিই বলছিলেন তিনি। রাজ্জাকের মতো আরও অনেকেই বিকেল বা সন্ধ্যার সময়টায় চায়ের দোকানের আড্ডায় হাজির হয়ে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠছেন প্রতিনিয়ত। ভোটে কার জনপ্রিয়তা কেমন, তা যাচাই করতে সহজ একটি উপায় হচ্ছে— চায়ের দোকানে হাজির হয়ে পাবলিক পালস অনুধাবণ করা। কারণ সব পেশার মানুষ আসেন, বসেন চায়ের দোকানে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মিলিয়ে নেন ভোটের নানা হিসাব-নিকাশ।
‘মামা, দুধ-চিনি বাড়িয়ে এক কাপ চা দিন’— বলেই হাঁক দিলেন রাজমিস্ত্রী গাজী মিয়া (৪৫)। ক্রমশ ভিড় বাড়ছে দোকানে। সময় গড়াতেই জড়ো হলেন স্থানীয় একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা করিম মীর থেকে শুরু করে তরুণ ভোটার সাজ্জাদ হোসেনও। প্রশ্ন শেষ করার আগে নতুন ভোটার সাজ্জাদের পাল্টা প্রশ্ন মেয়র টিটুর বিকল্প কে? সবাই কী নগরবাসীর পাশে ছিল? এক পক্ষেই অনেক প্রার্থী। কিন্তু মেয়রের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কী এক করতে পেরেছেন? নিজেরা নিজেদেরই ভোট নষ্ট করবে। এটিও মেয়র টিটুকে বাড়তি সুবিধা দেবে।’
চায়ের কাপে ঝড় উঠছে যেন! সেই ঝড় আরও বাড়িয়ে দিলেন বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা ময়মনসিংহ মহানগরীর সভাপতি মারুফ হোসেন মুন্না। কর্মীদের নিয়ে দলবেঁধে ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মো.ইকরামুল হক টিটুর জন্য ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ছুটছেন। তাঁর ভাষ্যে— ভোটের পাটিগণিতে নগরীর তল্লাটে তল্লাটে নিশ্চিন্ত মেয়র টিটু। ধারাবাহিক উন্নয়ন, জনসম্পৃক্ততা, সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সমান মূল্যায়ন, দলের ভেতরে শক্ত অবস্থান, ভোটারদের সচেতনতা ও বোধবুদ্ধি টিটুর ভরসা ও শক্তি।’
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ঠিক ততই ভাবনা-চিন্তা বাড়ছে ভোটারদের। এবার ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছেন ভোটাররা। নিজেদের ভোটের মাধ্যমেই পছন্দের মেয়র প্রার্থী নির্বাচন করতে অপেক্ষায় আছেন নগরীর বাসিন্দারা। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক প্রার্থী মেয়র পদে ভোট করছেন। ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের বিদায়ী মেয়র মো.ইকরামুল হক টিটু, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এহতেশামুল আলম ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান মিল্কী টজু মেয়র পদে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। জাতীয় পার্টি থেকে ভোটের মাঠে আছেন শহীদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল।
প্রথমবারের মতো এবারও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ইভিএমে। ১২৮ কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯০ জন ভোটার। মেয়র পদে ৫ প্রার্থী ছাড়াও নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন ৬৯ জন।
নগরীর পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানের পাশাপাশি গণপরিবহনের যাত্রীদের মধ্যেও চলছে নির্বাচনী আলাপচারিতা। কোন প্রার্থী আসন্ন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হতে পারেন, কাউন্সিলর নতুন না পুরাতন, এমন আলোচনা আর বিশ্লেষণে মুখরিত চায়ের দোকান।
সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের চর গোবাদিয়া সড়কের পাশেই স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘আনজু আপা’র চায়ের দোকান। এখানেই কথা হলো একটি রাইস মিলের মালিক হাবিবুর রহমান হাবিবের সঙ্গে। মেয়র পদে ভোটের হালহকিকত জানতে চাইলে উত্তর দিলেন মেয়র টিটু বিকল্পহীন। সব জরিপেই এই সত্য উপস্থাপিত। উন্নয়ন আর কর্মগুণে আলো ছড়িয়ে নগরবাসীর কাছে সরকারের পাশাপাশি নিজের ভাবমূর্তিও ঝকমকে করেছেন। তাঁর ভোটভাগ্য অনুকূলে, কোন হার নেই। এমন যোগ্য প্রার্থীকেই সবাই ভোট দিবে।’ পাশ থেকেই বাবলু মিয়া নামের একজন বলেন, ‘সব সময় হাতের নাগালে মেয়র টিটু। নিজেদের দু:খ-সুখ ভাগাভাগি করা যায় এমন ব্যক্তিরই জয়ের পাল্লা ভারী।’
কোথাও কোথাও আলোচনায় ওঠে এলো নাগরিক ভোগান্তির বিষয়টিও। শম্ভুগঞ্জের এক বাসিন্দা বললেন, ‘নগরীর প্রধান সমস্যা যানজট। শম্ভুগঞ্জ থেকে পাটগুদাম এলাকায় পৌঁছতেই দফারফা। এই ভোগান্তির অবসান হওয়া দরকার। এই জনভোগান্তি নিরসনে ক্যারিশমা দেখাতে পারবেন, সমান তালে উন্নয়ন করতে পারবেন এমন প্রার্থীকেই সবাই বেছে নিবে। নতুন করে আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি দেওয়া লোকজনের ওপর ভোটারদের আস্থা কম।’
নগরীর পথে পথেই এখন আলাপের বিষয়বস্তু সিটি ভোট। ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি করেন আব্দুস সোবহান। তিনি বলেন, ‘সমস্যা এবং সঙ্কটমুক্ত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন চাই। যিনি সার্বক্ষণিক জনগণের সঙ্গে থাকবেন, আমাদের খোঁজ খবর রাখেন-রাখবেন এবং উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে নগরীকে এগিয়ে নিতে পারবেন তিনিই হবেন আমাদের আরাধ্য মেয়র।’
ময়মনসিংহের একজন গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ‘মেয়র হিসেবে হঠাৎ হঠাৎ জনসম্মুখে আবির্ভাব হওয়া কাউকে চাই না। পাশাপাশি মেয়র যিনি হবেন তাঁর মধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার গুণাবলী ও মানসিকতা থাকতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি মহানগরের গোড়াপত্তনে দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের প্রতিই আমাদের আস্থা থাকবে।’
কালের আলো/ডিএস/এমএম