নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড. এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য ভবিষ্যতেও দেশ ও জাতির প্রয়োজনে যে কোন ধরনের ত্যাগ স্বীকার করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের সেবায় নিবেদিত থাকতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।

বাণীতে সেনাপ্রধান বলেন, ‘১৯৭১ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় বীর সেনানীরা মুক্তিকামী আপামর জনতার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে অপ্রতিরোধ্য আক্রমণের সূচনা করেছিল। যার ফলে ত্বরান্বিত হয় আমাদের চূড়ান্ত বিজয় এবং বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি-বাংলাদেশ। এ কারণেই একুশে নভেম্বর ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসেবে আমাদের গৌরব ও অনুপ্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে। আজকের এই মহতী দিনে আমি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রাণপ্রিয় দেশ ‘বাংলাদেশ’। লাখো প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন মানচিত্র এবং লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। প্রতি বছর ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ‘৭১ এর ভয়াবহ দিনগুলোতে বাঙালি জাতির নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ ও ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা। আজকের এই বিশেষ দিনে আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, আমাদের স্বাধীনতার মূল রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি বাঙালি জাতির মুক্তি ও কল্যাণের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। আমি শ্রদ্ধাভরে আরো স্মরণ করছি আমাদের প্রিয় সশস্ত্র বাহিনীসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যারা মহান স্বাধীনতার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং যুদ্ধাহত হয়েছেন। আমি বিশেষভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেই সকল বীর শহিদদের প্রতি যাঁরা মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং তৎপরবর্তী সময়ে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। এই মহান দিনে আমি সকল শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’

সেনাপ্রধান ড. এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মত সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিরক্ষা, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আর্তমানবতার সেবা প্রদানসহ বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আমাদের অকুতোভয় বীর সেনানীরা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা কার্যক্রমে নিজেদের আন্তরিকতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও উন্নত পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে।’

সেনাবাহিনীর প্রতি অবিচল আস্থা প্রদর্শন ও সেবামূলক সকল কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা প্রদানের জন্য এই সুমহান দিনে দেশের সকল নাগরিককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সকলের গর্বের প্রাণপ্রিয় সেনাবাহিনী এখন অনেক আধুনিক ও সক্ষম এবং দেশে ও বিদেশে একটি দক্ষ, পেশাদার ও অনুকরণীয় বাহিনী হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি উন্নত ও বিশ্বমানের সেনাবাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণার জন্য তার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জাতির পিতার ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এখন অধিকতর দক্ষ এবং সদা প্রস্তুত। এই সুদক্ষ ও চৌকস বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখার দৃঢ় প্রত্যয়ে নিবেদিতভাবে কাজ করে যাবে ইনশাআল্লাহ্।’

‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস- ২০২৩ উপলক্ষ্যে মহান এ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ দৈনিক জাতীয় পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি এই মহতী উদ্যোগের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। আমাদের নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে এ প্রকাশনা বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। পরিশেষে, আমি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও সাফল্য কামনা করছি। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহায় হোন। আমিন। জয় বাংলা’-যোগ করেন সেনাপ্রধান।

কালের আলো/এসআরকে/এমএইচএ