বিশ্বকাপ ঘিরে জুয়ার ফাঁদ, ৫০ লাখ টাকা পাচার করে ধরা ৪

প্রকাশিতঃ 5:00 pm | October 24, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিদেশ থেকে অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট পরিচালনার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

যাদের একজন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে শিক্ষার্থী নিশাত মুন্না (২০)। তিনি NISHAT MUNNA নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল এবং Nishat Munna (সাইলেন্ট কিলার) নামে একটি ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন রোস্টিং/বিতর্কিত ভিডিও তৈরি করে প্রচারের করতেন। ২০২২ সালের শুরুর দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গ্রুপের বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন দেখে অনলাইন জুয়ার প্রতি আসক্ত হন নিশাত মুন্না।

এছাড়াও অনলাইনে বেটিং সাইটের প্রসারের জন্য ভিডিও বানাতে নিশাতকে দেশের বাইরের বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর জন্য ভিডিও প্রতি তাকে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেওয়া হয়। এরপরই নিশাত অনেক টাকা লাভের আশায় বিভিন্ন বেটিং সাইটের প্রচার ও অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হন।

এতে করে তিনি নিজেও অনলাইন জুয়ার কার্যক্রম শুরু করেন। গত দেড় বছর ধরে বাংলাদেশ এজেন্ট হিসেবে অনলাইনে বিভিন্ন সাইটে জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন নিশাত মুন্না।

যুবকদের অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে টাকা আয়ের লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন একাউন্ট তৈরি করার জন্য একটি চক্র গড়ে তুলেন নিশাত। তার চক্রের আট সদস্যদের মধ্যে মূলহোতা নিশাত মুন্না ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এর আগে, সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর ও রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের কার্যক্রম দেশে পরিচালনার মাধ্যমে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া একটি চক্রের মূলহোতাসহ চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১ এবং র‍্যাব-১১ এর যৌথ টিম।

চক্রের গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন মূলহোতা মো. নিশাত মুন্না (২০), মো. কামরুল ইসলাম শুভ (২৭), মো. সুমন (৩৫) ও মো. নাজমুল হোসেন বাবু (৩১)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ১৬টি মোবাইল ফোন, ১৮টি সিম কার্ড, একটি সিপিইউ, একটি মনিটর উদ্ধার করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা অনলাইন জুয়ার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয় স্বীকার করেছেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বিগত দেড় বছর ধরে চক্রটি বাংলাদেশে বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের দেশিয় কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম মূলহোতা নিশাত মুন্না। তার নেতৃত্বে চক্রের ৭-৮ জন সদস্য বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের প্রচার, একাউন্ট খোলা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন হুন্ডির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে অর্থ পাঠানোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

তিনি বলেন, মূলত ফুটবল বিশ্বকাপ, ক্রিকেট বিশ্বকাপ, আইপিএল, বিপিএল, বিভিন্ন ফুটবল লীগ/টুর্নামেন্ট ও অন্যান্য খেলাকে কেন্দ্র করে দেশের উঠতি বয়সের তরুণদেরকে টার্গেট করে এই অনলাইন জুয়ার প্রচার করত চক্রটি। এ চক্রের কেউ বিভিন্ন বিদেশি বেটিং সাইটের বাংলাদেশের প্রচার/মার্কেটিং এর কাজ করে আগ্রহী ব্যক্তিদের বিভিন্ন সাইটের একাউন্ট খুলে দিত। আবার কেউ একাউন্ট করা ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তা হুন্ডির মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম পরিচালনাকারীর কাছে পাঠাত।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তারা বিভিন্ন ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে কন্টেন্টের সঙ্গে জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন, সরাসরি মানুষের কাছে বলার মাধ্যমে এই জুয়ার সাইটের প্রচারের কার্যক্রম পরিচালনা করত। পরে বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী ব্যক্তিরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পাঠানো লিংকের মাধ্যমে একাউন্ট খুলত। কোন নতুন গ্রাহক তাদের মাধ্যমে বেটিং সাইটে একাউন্ট খুললে তারা কমিশন পেত। তারা 1xBet, MeltBet, Pari Match, Velkiex, Bj Baji Casino, Ludo Match সহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের কার্যক্রম দেশে পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ছিল। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি কর্তৃক অনলাইন জুয়া বা বাজি সংক্রান্ত বিভিন্ন অ্যাপস এবং ওয়েবসাইট ইতোপূর্বে বন্ধ করা হলে তারা ডোমেইন পরিবর্তন করে পুনরায় অনলাইন প্লাটফর্মগুলোয় জুয়া চালু করত।

চক্রটি নামে-বেনামে একাধিক সিম সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের নিকট হতে অনলাইন জুয়ার অর্থ সংগ্রহ করত এবং প্রাপ্ত অর্থ থেকে নিজেদের লভ্যাংশ রেখে অবশিষ্ট টাকা তারা হুন্ডির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম পরিচালনাকারীর নিকট পাঠাত বলে জানান। তারা নিজেদের প্রাপ্ত লভ্যাংশের টাকা দিয়ে অনলাইনে জুয়া খেলত বলে জানায়। তারা অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে এখন পর্যন্ত অর্ধ কোটি টাকার অধিক অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন র‍্যাব কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

কালের আলো/ডিএসবি/এমএএ