জাতির পিতা সবসময় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 2:16 pm | October 17, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
জাতির পিতা সবসময় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন। তিনি এ দেশে নারীদের সার্বিক উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার পর যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেখানে কিন্তু নারীর সমঅধিকারের কথা বলা আছে। নারী শিক্ষা অবৈতনিক করেছিলেন। নারী নেতৃত্ব যাতে গড়ে ওঠে, তার জন্য পার্লামেন্টে সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করেন।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে নবনির্মিত ‘জয়িতা টাওয়ার’ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে গণভবনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল ১০টার পর তিনি জয়িতা টাওয়ারের উদ্বোধন করেন। এসময় বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা সঙ্গে ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মেয়েদের ওপর বিএনপির অত্যাচার, নির্যাতন, অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছিল। আমাদের যুব মহিলা লীগের মেয়ে, আমাদের আওয়ামী লীগের মেয়েদের ওপর যে অত্যাচার তারা করেছিল, তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। গ্রেপ্তার করা, থানা নিয়ে আটকানো, নানাভাবে তাদের নির্যাতন করা হয়। এর প্রতিবাদ আমাদের মেয়েরা করে গেছে। আমাদের পুরুষরা যখন রাস্তায় নামতে পারেনি, তখন আমাদের যুব ও আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীরা সাহসের সঙ্গে রাস্তায় নেমেছে। যার ফলে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বিশ্বাস করতেন, সমাজের অর্ধেক হচ্ছে নারী, তাদের অবহেলিত রেখে একটি সমাজ গড়ে উঠতে পারে না। নারীরা শুধু আমাদের অধিকার দাও বললে চলবে না, নারীদের অধিকার নারীদের আদায় করে নিতে হবে। নারীদের অধিকার নিজের গুনে অর্জন করতে হবে।
নারীরা পিছিয়ে থাকবে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বেগম রোকেয়া আমাদের প্রথম শিক্ষা দিয়ে গেছেন। নারী শিক্ষায় বেগম রোকেয়ার যে অবদান, তিনি স্বপ্ন দেখতেন নারীরা একদিন জজ, ব্যারিস্টার হবেন। আজ আমাদের দেশের নারীরা জজ-ব্যারিস্টার থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে আপন স্থান করে নিয়েছে এবং নিতে পেরেছে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ড, প্রতিটি জায়গা আমাদের নারীরা যাতে সমসুযোগ পায়, আমি ’৯৬ সালে সরকারে এসে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের উচ্চ আদালতে কোনো মহিলা জজ ছিল না, আজ উচ্চ আদালতে আমাদের নারীরা স্থান পেয়েছে। কোনো সচিব ছিল না, কোনো জেলায় ডিসি করা হতো না। আমি সরকারে আসার পর নারীরা ওসি হয়েছে, এসপি হয়েছে, বিভিন্ন পদ তারা পেয়েছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে নারীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীরা শুধু মাথা কুটে বললে হবে না, আমাদের অধিকার দাও। নিজের অধিকার নিজেকে অর্জন করতে হবে। এসময় তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের কবিতারও উদ্ধৃত করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী তার মায়ের গল্পৎ তুলে ধরে বলেন, একজন নারী পাশে থাকলে একজন পুরুষ কতদূর যেতে পারে বা একটা দেশ কতদূর যেতে পারে, এটাই তার প্রমাণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন রাজপথে পুরুষেরা নামতে পারেননি, আমাদের নারীনেত্রীরা আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন। আইভি রহমানসহ আমাদের অসংখ্য নারীনেত্রী জীবনও দিয়েছেন। আমি তাদের স্মরণ করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পাশে থেকে শক্তি-সাহস জুগিয়েছেন আমার মা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। বাবাকে বলতেন, তুমি কোনো চিন্তা করবে না। আমাদের পড়াশোনা করানো, সংসার সামলানো সবই দেখেছেন আমার মা।
তিনি বলেন, জাতির পিতা মানুষকে বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। বার বার কারাবরণ করেছেন। তিনিই আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার ডাকেই দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। তিনিই দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতির শুরুটা করে দিয়ে গেছেন।
সরকারপ্রধান বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আমরা জয়িতা ফাউন্ডেশন করেছি। নারীদের উৎপাদিত পণ্য পদর্শনীর জন্য এই টাওয়ার করেছি। গণভবনের মাটি আজ ধন্য, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দক্ষ ও সফল নারী উদ্যোক্তারা এখানে এসেছেন।
কালের আলো/পিএম/এনএল