প্রিয় লিটন, ‘দুর্ব্যবহার’ নয় ব্যাটে জবাব দিন
প্রকাশিতঃ 10:57 am | October 17, 2023
তানজীম আহমেদ :
‘নানামুখী সমস্যা’ বাংলাদেশ দলকে ঘিরে রেখেছে। একে তো বিশ্বকাপ ক্রিকেটে আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখা যাচ্ছে না। প্রত্যাশার বেলুন দিনকে দিন চুপসে যাচ্ছে।
সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখানো সাকিব আল হাসানের দল এখন রীতিমতো ধুকছে। তার ওপর আবার মাঠের বাইরের নেতিবাচক ঘটনায় শিরোনাম হতে হচ্ছে। আর এই কাজটি খোদ ওপেনার লিটন দাসের কর্মকাণ্ডে সামনে চলে এসেছে, বিস্মিত সবাই। ভারতের পুনের হোটেলের লবিতে দেশ থেকে আসা সাংবাদিকদের লিটন যেভাবে নিরাপত্তা কর্মীদের দিয়ে বের করে দিতে বলেছেন তা মোটেও কাম্য ছিল না। যদিও আজ তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিষয়টির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এমনিতে বিশ্বকাপে তিন ম্যাচে শুধু আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের শক্তি দেখাতে পেরেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঠিক উল্টোটি। ওপেনার হয়ে লিটনের ব্যাট শুধু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেসেছেন। ৬৬ বলে ৭৬ রান করে বড় স্বপ্ন দেখিয়েছেন। যদিও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৮ বলে ১৩ ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম বলে শূন্য রানে লজ্জায় ফেলে দেন। চেন্নাইয়ের এম এ চিদম্বরম স্টেডিয়াম থেকে মেরিনা বিচের গর্জনে হয়তো তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। তা না হলে জ্বলে ওঠার ম্যাচে কেনই বা প্রথম বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আত্মাহুতি দেবেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দশম ব্যাটার হয়ে শূন্য রানে সাজঘরে ফিরবেন। এ নিয়ে সমালোচনা কম হচ্ছে না। বাংলাদেশ কেন পারছে না, হচ্ছে কাটাছেঁড়া।
ঠিক এই সময়ে লিটনের পুনের হোটেলের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো! সংবাদ কর্মীরা সবসময় দেশের খেলাধুলার খবর দিয়ে থাকেন। এমনিতে তো বিশ্বকাপে মিডিয়া থেকে দূরে রয়েছেন সবাই। কেন, কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত তা এখনও বোধগম্য নয়। ভারত থেকে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী যেখানে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড দলও তাদের খেলোয়াড়দের নিজেদের মিডিয়ার জন্য আলাদা সেশন রেখেছেন। সেখানে বাংলাদেশ দল কিনা ‘আইসোলেটেড’ থাকতেই পছন্দ করছেন।
হয়তো বাড়তি চাপ থেকে দূরে থেকে নির্ভার হয়ে খেলাই বড় উদ্দেশ্য। কিন্তু সেটাতো মাঠের লড়াইয়ে প্রমাণ করতে হবে।
মিডিয়া কর্মীদের ক্রিকেট দলের প্রতি ভালোবাসা কম নয়। আজ বাংলাদেশের ক্রিকেট এই পর্যন্ত আসার পেছনে তাদের অবদান কম নয়। ভালো কিংবা খারাপ সময়ে পাশে রয়েছেন তারা। এটা অন্তত লিটনের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটারের না বোঝার কথা নয়।
পুনের হোটেলে এমন কী হয়েছে যে নিরাপত্তা কর্মীদের দিয়ে হোটেল ছাড়তে বলা হবে। যেখানে অন্য সতীর্থরা ‘হাই…হ্যালো’ করছিলেন। লিটন একবারও ভাবলেন না বিদেশের হোটেলে সেই নিরাপত্তা কর্মীরা কী ভাববেন। নিজ দেশের ক্রিকেটার হয়েও নিজেদের মিডিয়ার সঙ্গে দুর্ব্যবহার! নিশ্চয়ই এমন আচরণ হোটেলের সংশ্লিষ্ট অন্যদের কানে পৌঁছে যাওয়া কঠিন কিছু না। নিরাপত্তা কর্মীদের দিয়ে এমন ‘অপমান’ না করলে কি চলতো না? এতে তো দেশের ক্রিকেটের বদনাম হচ্ছে।
যদিও লিটনের এমন দুর্ব্যবহার নতুন কিছু নয়। আগেও এভাবে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন।
বাংলাদেশ দলের বর্তমানে যা অবস্থা তাতে করে পরের ম্যাচগুলোতে জেতার কথা মুখ-ফুটে বলাটা একটু কঠিনই। ১৯ মার্চ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ। সেই ম্যাচটি অগ্নিপরীক্ষার মতোই। কোথায় নমনীয় হয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর রসদ জোগাবে, সেখানে লিটনের এহেন কর্মকাণ্ড পুরো দলকে আরও ব্যাকফুটে ফেলে দেবে নিঃসন্দেহে।
এমনিতে তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে দল ধুঁকছে। ওপেনার তামজিদ তামিম মোটেও সুবিধা করতে পারছেন না। লিটনের সঙ্গে জুটি বেঁধে না হচ্ছে বড় ইনিংস, না আসছে নিজেদের ব্যাট থেকে রান।
আগে থেকেই লিটনের ফর্মহীনতা চলছিল। ভারতে এসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আশা জাগানিয়া পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা দেখা যায়নি। তাই লিটনসহ অন্যদের এখনই সাবলীলভাবে কিছু দেখানোর সময়।
বিজ্ঞরা বলেন–– ‘যেই গরু দুধ দেয় তার লাথিও মাঝে মধ্যে সহ্য করতে হয়।’
তাই লিটন দাসের উচিত মিডিয়ার প্রতি চড়াও না হয়ে সামনের দিকে ব্যাটে ঠিকঠাক জবাব দিন। তাহলেই সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকতে পারবেন। মেজাজও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মিডিয়ার প্রতি তখন নেতিবাচক দৃষ্টিও আর থাকবে না। লিটন পারবেন তো এখন ফর্মে ফিরতে? ভারতের বিপক্ষে মোক্ষম জবাবের অপেক্ষা তাহলে!
লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার, বাংলা ট্রিবিউন