গফরগাঁওয়ে ডিবি পরিচয়ে ১৬ লাখ টাকা ডাকাতি, গ্রেফতার ৩
প্রকাশিতঃ 6:04 pm | October 14, 2023

ময়মনসিংহ প্রতিবেদক:
ময়মনসিংহের ভালুকায় ইসলামী ব্যাংকের শাখা থেকে ১৬ লাখ টাকা তুলে ফেরার পথে গফরগাঁও উপজেলা থেকে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে পৃথকভাবে মোট ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ডাকাতিতে ব্যবহার করা ব্যক্তিগত গাড়ি ও হাতকড়া উদ্ধার করে পুলিশ।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে পুলিশ কনফারেন্স রুমে সাংবাদিক সম্মেলনে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহমেদ ভুইয়া এসব তথ জানান।
এর আগে শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করেন। ওই তিনজন হলেন- সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার কোনাবাড়ি গ্রামের মো. আনোয়ার হোসেন, রাজবাড়ির বালিয়াকান্দি উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের লিটন গাজী ও ঢাকার আশুলিয়া থানার চারাবাগ এলাকার রুবেল মিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৬ অক্টোবর বেলা ১২ টার দিকে গফরগাঁও থানার চরমছলন্দ গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার ছেলে ব্যাবসায়ী সাদ্দাম হোসেন (৩১) ভালুকা ইসলামী ব্যাংক পিএলসি শাখা থেকে ১৬ লাখ টাকা উত্তোলন করে সিএনজি যোগে যাওয়ার সময় ডাকাতদল তার সিএনজি গতিরোধ করে ডিবি পরিচয় দিয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে মুখে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে সাদ্দাম কে তাদের প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যায় এবং তার কাছে থাকা ১৬ লাখ টাকা ও ২টি মোবাইল সেট রেখে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানা এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে প্রাইভেটকারে ডাকাতদল চলে যায়।
এ ঘটনায় ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন বাদী হয়ে গফরগাঁও থানায় একটি এজাহার দায়ের করলে নিয়মিত মামলা রুজু হয়।
ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার চাঞ্চল্যকর ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটনের দায়িত্বদেন জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেনকে। তার নেতৃত্বে এসআই শাহ্ মিনহাজ উদ্দিন, এসআই রেজাউল আমীন বর্ষণ, এসআই পরিমল চন্দ্র সরকার, এসআই কমল সরকার, এসআই রূপন কুমার সরকার ও সঙ্গীয় ফোর্সসসহ একটি চৌকস টিম ডাকাতির রহস্য উদ্ঘাটনের নিমিত্তে অভিযানে নামেন।
ডাকাতদলের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, গত ৮ অক্টোবর গাজীপুর চৌরাস্তায় বসে গ্রেপ্তারকৃত আনোয়ার, লিটন, রুবেল ও পলাতক আসামি সিরাজ, আরিফ, পলান, রফিক, বাবু, সালাম, শহীদসহ ১০ ডাকাত একত্রে ইসলামী ব্যাংক ভালুকা শাখায় ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক তিন ভাগে ভাগ হয়ে ভালুকার উদ্দেশে প্রথমে পলান, রফিক, সালাম মোটর সাইকেলযোগে, বাবু আর আরিফ লোকাল বাসে করে এবং আনোয়ার, লিটন, রুবেল, শহীন ও সিরাজ প্রাইভেটকারযোগে প্রায় একটার দিকে ভালুকা ইসলামী ব্যাংকে পৌঁছায়।
প্রাইভেটকারে থাকা ৫ ডাকাত ইসলামী ব্যাংক হতে আনুমানিক ১০০ গজ দূরে অবস্থান করে। পলান, রফিক, বাবু, আরিফ ব্যাংকের গেইটের বাহিরে পাহারা দেয় এবং সালাম ব্যাংকের ভেতরে ক্যাশিয়ারের আশেপাশে অবস্থান করে। সালাম ব্যাংকে অবস্থান করে মোবাইলে বাবুকে জানায়, একজন লোক গেঞ্জি পরা ও মুখে মাক্স লাগানো হাতে একটি নীল রংয়ের টাকার ব্যাগ নিয়ে ব্যাংক থেকে নিচে নামছে। পরে ডাকাত দলের সদস্যরা ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেনকে নজরে রাখে এবং গফরগাঁওয়ের শান্তিগঞ্জ নামক নির্জন স্থানে পৌঁছলে প্রাইভেটকারটি দ্রুত গতিতে গিয়ে সিএনজির সামনে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। ডিবি পুলিশের অভিযানে গাজীপুর ও ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুক্রবার রাতে ডাকাতদলের অন্যতম সদস্য সিরাজগঞ্জের মো. আনোয়ার হোসেনকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতের তথ্য মতে, ভোর রাতে ঢাকার সাভার ব্যাংক টাউন (আফতাব এর বাড়ি) থেকে উক্ত ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী রাজবাড়ীর লিটন কাজী ওরফে দেলোয়ার কাজী গ্রেপ্তার করে এবং আশুলিয়ার ভাড়াবাগ (সাজু গামেন্টস সংলগ্ন সালাম মিয়ার বাসা) থেকে অপর ডাকাত গোপালগঞ্জের মো. রুবেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মাঝে মো. আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে লুণ্ঠিত ৮০ হাজার টাকা, লিটন কাজী ওরফে দেলোয়ার কাজীর কাছ থেকে লুণ্ঠিত আড়াই লাখ টাকা এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার ১টি ওয়াকিটকি, ১টি হ্যান্ডকাফ ও ৩২টি ডিবির কটি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ডাকাত রুবেল মিয়ার কাছ থেকে লুণ্ঠিত ১ লাখ ৪০ হাজার উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা এর আগে ভালুকার জামিরদিয়া এমএল ডাইংয়ের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রাইভেটকারযোগে র্যাবের পরিচয় দিয়ে জনৈক শুভান আলীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও ৩১টি মোবাইল এবং ভালুকার হবিরবাড়ী সিডস্টোর বাদশাগ্রুপের কামাল ইয়ার্ল্ড লিমিটেডের সামনে প্রাইভেটকারযোগে র্যাবের পরিচয়ে জনৈক কানাই চন্দ্র বর্মনকে গতিরোধ করে তার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায়। এ চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তারকৃত লিটন কাজী ওরফে দেলোয়ার কাজীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টির অধিক ডাকাতিসহ দস্যুতা ও মাদক মামলা এবং মো. রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে ২টি ডাকাতি মামলা রয়েছে। ডিবির ওসি ফারুক হোসেন বলেন, মামলাটি তদন্ত চলছে। অবশিষ্ট লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধার ও ডাকাতির ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
কালের আলো/ডিএস/এমএম