১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন ৯২ শতাংশ বেড়েছে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 12:50 pm | October 11, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকার সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ায় ১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন ৯২ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত (মোট ২২ দিন) মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের সময় কেউ যাতে ইলিশ আহরণ করতে না পারেন সেজন্য জল, স্থল ও আকাশপথে পর্যবেক্ষণ চালানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১১ অক্টোবর) সচিবালয়ে মা ইলিশ সংরক্ষণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ইলিশ সম্পদের উন্নয়নে সরকার সমন্বিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় ইলিশের উৎপাদন আশাতীতভাবে বেড়েছে। বিগত ২০০২-০৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন উদ্বেগজনকভাবে কমে ১ দশমিক ৯৯ মেট্রিক টনে পরিণত হয়েছিল। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের আহরণ ছিল ২ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় ইলিশের আহরণ বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ দশকি ৭১ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৯২ শতাংশ বেড়েছে।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন,ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার কারণে ইলিশের দাম বেশি। এ ক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থার সমস্যা রয়েছে। ভোক্তা অধিকার, প্রতিযোগিতা কমিশন ব্যবস্থা এ বিষয়ে নেবে। তবে দায় নিতে চায় না মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের ইলিশ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, বাজারজাতে খরচ আছে। কয়েক স্তরে মুনাফার কারণে দাম বেড়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের সময় নির্ধারণ করেছে সরকার। এই ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আরোহণ, পরিবহণ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এই সময় কর্মকর্তারা জল, স্থল ও আকাশপথে পর্যবেক্ষণ করবেন জানিয়ে মৎস্যমন্ত্রী বলেন, যারা আইন মানবে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানোর পাশাপাশি মামলা দেওয়া হবে। বিভিন্ন মোহনায়ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্মকর্তারা নিয়োজিত থাকবেন। যারা ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকবেন তাদের ভিজিএফ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এই সহায়তা উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২২ সালে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের আওতায় ২ হাজার ৬২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত, ১০ হাজার ৮২১টি অভিযান পরিচালনা করে ৩১ দশমিক ৪১ মেট্রিক টন ইলিশ, ৯১৯ দশমিক ৮৫ লাখ মিটার নিষিদ্ধ জাল জব্দ এবং ২ হাজার ৯০৮টি মামলা দায়েরের মাধ্যমে ২ হাজার ১০৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও ৪৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া জব্দকৃত মালামাল নিলামে বিক্রি করে ২২ লাখ ১১ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে।
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় গত বছর ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকরণের ২২ দিনে প্রায় ৫২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। ফলে গত বছর প্রায় ৮ লাখ ৫ হাজার ৫১৫ কেজি ডিম উৎপাদিত হয়েছে।
সরকার পর্যাপ্ত ইলিশ উৎপাদনে সহায়তা করছে জানিয়ে
মন্ত্রী আরও যোগ করেন, এ বছর মা ইলিশ বা জাটকা ধরে ফেললে আগামী বছর ইলিশের উৎপাদন কমে যাবে। ইলিশের উৎপাদন কমে গেলে যারা ইলিশ আহরণ করে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বড় ইলিশ উৎপাদন হলে যারা এখন ইলিশ আহরণে সম্পৃক্ত তারাই সে সময় ধরবেন, তারাই বিক্রি করবেন, বেশি মূল্য তারাই পাবেন।
সাংবাদিকদের মন্ত্রী আরও জানান, পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা জলবায়ুর কারণে ইলিশের বিচরণ ও গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন হয়। অপরিকল্পিত ড্রেজিং, যানবাহন থেকে নির্গত পোড়া তেলের দূষণ, অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ আহরণসহ নানা কারণে ইলিশের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এরপরও সরকার ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট রয়েছে।
ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে এ সময় মন্ত্রী বলেন, ইলিশ এখন কূটনীতির অংশে পরিণত হয়েছে। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে সীমিত পরিসরে ইলিশ রপ্তানি হয়ে থাকে। যা প্রতিবেশি দুই দেশের বাণিজ্যিকসহ কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৫ হাজার ৫৪১ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা হয়েছে, যা থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৩৯ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৬০৯ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে, যা থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৬২ লাখ মার্কিন ডলার।
ইলিশের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ইলিশ উৎপাদনে ব্যয় না থাকলেও ইলিশ আহরণ, সংরক্ষণ ও পরিবহন খাতে ব্যয় রয়েছে। নিষিদ্ধ সময়ে যারা ইলিশ আহরণে বিরত থাকে তাদের জন্য ভিজিএফ সহায়তা, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ নানাভাবে সরকার সহায়তা করে। তবে ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা লাভের কারণে ইলিশের দাম যে পর্যায়ে সহনীয় থাকা উচিত, তার চেয়ে বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্তদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নানাভাবে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে তারা বেশ কিছু কাজও করেছে। মাছ আহরণের কেন্দ্র থেকে বিপণন পর্যন্ত আরও বেশি কঠোর নজরদারি এবং দেখভাল করা হলে ইলিশের দাম আরও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/ডিএস/এমএম