চাপ সামলে সফল কূটনীতিতে ঢাকা
প্রকাশিতঃ 9:00 pm | September 12, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
ব্রিকসের পর জি-২০ সম্মেলন। যেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানেই চমক। মাত্র ১৮ দিনে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত, রাশিয়া, সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ বিশ্বের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে অনন্য এক রেকর্ড গড়েছেন। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অতীতে কোন রাষ্ট্রপ্রধান কখনও করে দেখাতে পারেননি। বিশ্ব রাজনীতিতে তিনি শক্ত করেছেন নিজের অবস্থান। মর্যাদা ও ভাবমূর্তি বাড়িয়েছেন দেশের। কূটনৈতিক চাপ সামলে রীতিমতো ঘুরে দাঁড় করিয়েছেন বাংলাদেশকে।
প্রধানমন্ত্রীর গাইড লাইনে এখন দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনও। চলতি সেপ্টেম্বরে জোর কূটনৈতিক তৎপরতায় দৃষ্টি কেড়েছেন। এই মাসে ঢাকার কূটনৈতিক ক্যালেন্ডারে তিনি যুক্ত করেছিলেন একাধিক হাই-প্রোফাইল পরিদর্শন ও নানা চুক্তিতে। বিশ্ব নেতৃত্বকে বার বার বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ কোন বিশেষ বলয়ে নেই। লেজুড়ও নয় কোনো দেশের। বরং একটি ‘ভারসাম্যপূর্ণ ও স্বাধীন’ পররাষ্ট্রনীতি বজায় রেখে চলে বাংলাদেশ।
ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে নতুন বছরে বেড়েছে স্পর্শকাতরতা। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ, বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি প্রয়োগ করবে এমন বক্তব্যও হরহামেশা উচ্চারিত হচ্ছে। শুধু তাই নয় ড. ইউনূস নিয়েও নতুন চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। এসব টানাপোড়েন কাটিয়ে আপাতত স্বস্তিতে রয়েছে সরকার। বিশেষ করে দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সেলফি ও আন্তরিক কথোপকথন গলিয়েছে দু’দেশের সম্পর্কের বরফ। এই সেলফি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের চলমান রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই ছবি দুই দেশের বন্ধুত্বেরও প্রতীক। ড. মোমেন নিজেও ক’দিন আগে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অত্যন্ত উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ চ্যাট ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে গভীর সুসম্পর্ককে চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশের সাথে আমেরিকার একটি খুব সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে এবং আগামী ৫০ বছরে এটি আরও শক্তিশালী ও দৃঢ় হবে।’
তবে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি বলে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন ড.মোমেন। এদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: দ্য ইয়ুথ পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক সেমিনারেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে বেশ চাঙ্গা ও ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেছে। বিশেষ করে গত বৃহস্পতিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ’র ঢাকা সফর, গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে বরণ এবং প্রায় ১৮ ঘন্টার ভিন্ন মাত্রার সফরে তার বাংলাদেশ মাতিয়ে অবস্থান সবকিছু ঢাকার কূটনীতিক সাফল্যের পারদে নতুন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। গত ৫৩ বছরে দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ কূটনীতিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় দেশি-বিদেশী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ড.মোমেনের নরম-গরম কৌশল কূটনীতিতে আলোচনার মূল উপজীব্য হয়ে ওঠেছে। মঙ্গলবারও (১২ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: দ্য ইয়ুথ পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক সেমিনারে ড.মোমেন স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন আর সেই তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ নয়। গত কয়েক বছরে স্থিতিশীলতা ও নেতৃত্বের পরিপক্কতার কারণে বাংলাদেশ অন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশে কূটনীতি। বড় শক্তিগুলোর বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের ওপর ভর করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শীতায় ড. এ কে আব্দুল মোমেন’র নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘টিম ওয়ার্ক’ কূটনীতিতে আলোড়ন তুলেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অপরিবর্তিত আছে। চীনের সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পর্কের হেরফের হয়নি। বাংলাদেশ কখনোই ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা চায় না। তাই চীন ও ভারতের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রও যে বাংলাদেশের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান বদল করেছে এমন ইঙ্গিতও মিলছে। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অস্বস্তি কেটে গেছে। আবার, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক করেই জাপানের সঙ্গেও অর্থনৈতিক মিত্রতা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরে কারও একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে দেয় না। আর এ জন্যই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বাংলাদেশ সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখেও ঢাকার অবস্থানের প্রশংসা করেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বাংলাদেশে এসে ‘জলের গান’ শুনে গেলেন। ব্রিকস এবং জি-২০ সম্মেলনে আলো ছড়ান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বেও সব প্রভাবশালী দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের আগ্রহের কেন্দ্রে এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই একঝলক দেখা গেছে সম্প্রতি। কূটনৈতিক এসব সফলতার অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে ড.মোমেনও নিজেকে প্রমাণ করেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কেন তাঁর ওপর আস্থা রেখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক বিচক্ষণতায় মুগ্ধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন একাধিকবার বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভের পর বাংলাদেশের শাসনভার নিজের কাঁধে নিয়ে যে শান্তি ও প্রগতির রাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনাও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে একই নীতি অনুসরণ করে এগিয়ে চলেছেন সামনে। ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ বিশ্বশান্তির পক্ষে বঙ্গবন্ধুর এই অমোঘ নীতিই এখনো বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র। এই মূলমন্ত্রের ওপর ভর করেই সব বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন এদেশের সর্বকালের সফল প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তার শাসনামলের প্রতিটি পদে পদে রচিত হচ্ছে সফলতার ইতিহাস।’
কালের আলো/এমএএএমকে