রোগমুক্তির ব্যাপারে হতাশ, তবু ঢাকায় আসবে না মুক্তামণি
প্রকাশিতঃ 9:19 am | February 03, 2018
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা:
রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত সাতক্ষীরার মুক্তামণিকে হাসপাতাল থেকে এক মাসের ছুটিতে বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। বাড়িতে এক মাসের বেশি সময় পার হলেও ঢাকায় ফিরে যেতে চাইছে না মুক্তামণি। রোগমুক্তির ব্যাপারে হতাশ মুক্তামণি চায় বাড়িতে থেকেই কষ্ট করবে সে।
শুক্রবার এসব কথা জানান মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম হোসেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের বাড়িতে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মুক্তামণিরও। হতাশার পাশাপাশি তার ঢাকায় না যাওয়ার আরেকটি কারণ রাস্তার কষ্ট।
ইব্রাহিমের যমজ দুই মেয়ের বড়জন মুক্তামণি বলে, ‘বাড়িতেই ভালো আছি। রাস্তার যে অবস্থা, বাড়ি আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে। আমি আর ঢাকা যেতে চাই না। আর আব্বুর সাথে ডাক্তার কাকুদের কথা হয়েছে। একটু গরম পড়লে ঢাকায় যেতে বলেছেন তারা।’
মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে এক মাসের ছুটিতে গত ২২ ডিসেম্বর বাড়ি এসেছিলাম। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের সামন্ত লাল সেন স্যারের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা হয়। উনি বলেছেন শীতের সময় হাসপাতালে একটু বেশি ভিড় থাকে। সেজন্য একটু গরম পড়লে মুক্তামণিকে নিয়ে যেতে। আর ডাক্তার বলেছেন, ফোন দিয়ে তারা ঢাকায় ডেকে নেবেন আমাদের।’
বাড়ি আসার পর মুক্তামণির হাত অতিরিক্ত ফুলে উঠেছে বলে জানান তার বাবা। বতর্মানে ওই অবস্থাতেই আছে হাত।
ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘শীতের সকালে রোদের জন্য আম্মুকে (মক্তামণিকে) ঘর থেকে বের করি। রোদে শুয়ে থাকে ও। এ ছাড়া ঢাকা থেকে বাড়ি আসার সময় ড্রেসিং করা দেখিয়ে দিয়েছিল আমাকে। সেভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ডাক্তার যেসব ওষুধ লিখে দিয়েছিলেন, সেগুলো নিয়ম মেনে খাওয়ানো হচ্ছে। ও (মুক্তমনি) আত্মীয়-স্বজন, বান্ধবীদের সঙ্গে গল্প করে। বাড়ির পোষা শালিকের সঙ্গে সারাক্ষণ গল্প করে মুক্তামণি।’
ঢাকায় যাওয়ার বিষয়ে মুক্তামণির বরাত দিয়ে ইব্রাহিম বলেন, ‘আম্মু (মুক্তামণি) আর ঢাকা যেতে চাচ্ছে না। মরে গেলেও তাকে যেন আর ঢাকায় না নিই। তার (মুক্তামণি) কথা, ঢাকার ডাক্তাররা তো অনেক চেষ্টা করেছেন। এখন আল্লাহ যদি ভালো করে, ভালো হব; আর না করলেও বাড়িতেই থাকব।’
গত বছরের ১২ জুলাই রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত মুক্তামণিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এরপর ৫ আগস্ট প্রথম অস্ত্রোপচার করা হয় মুক্তামণির হাতে। তার হাতের ফোলা অংশ অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেন চিকিৎসকরা। পরে দুই পায়ের চামড়া নিয়ে দুই দফায় তার হাতে লাগানো হয়। ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালামের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ একদল চিকিৎসক মুক্তামণির স্কিন গ্রাফটিং (চামড়া লাগানো) অপারেশনে অংশ নেন।
পরে মুক্তামণির হাত আবার ফুলে যাওয়ায় ফোলা কমানোর জন্য হাতে প্রেশার ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর প্রায় পাঁচ মাস পর গত ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে বাবা-মার সঙ্গে সে নিজ বাড়িতে ফেরে।