স্মার্ট র‍্যাবের আত্মপ্রকাশে দৃঢ়প্রত্যয়ী ডিজির সতর্ক সংকেত, কঠোর বার্তায় গুরুত্ব নিরবচ্ছিন্ন সেবায়

প্রকাশিতঃ 10:28 pm | March 20, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

স্মার্ট বাহিনী হিসেবে র‍্যাবের আত্মপ্রকাশের দৃঢ়প্রত্যয়ের কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর দরবারে জানিয়েছিলেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন, বিপিএম (বার), পিপিএম। বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’ এই মূলমন্ত্রকে বুকে লালন করে আগামীতে আরও উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র‌্যাব। ঠিক পরদিনই সোমবার (২০ মার্চ) মহাপরিচালক হিসেবে দরবারেও তিনি সাধারণ মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন সেবায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। বিপদগ্রস্ত মানুষকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়ার বার্তার দিয়েছেন র‌্যাব ফোর্সেসকে।

নরম পলিমাটির মতোই মন নিয়ে তিনি কথা বলেছেন সেবা প্রার্থীদের জন্য। চাকরি জীবনের পুরোটা সময় সাধারণ মানুষের কথা শোনেছেন। মহাপরিচালক পদে আসীন হওয়ার পর এখনও গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন সাক্ষাত প্রার্থীকে সময় দেন, কথা বলেন। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের মাধ্যমে র‌্যাবের জনবান্ধব ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করতে ক্যাম্পের কমান্ডারদেরও দিয়েছেন একগুচ্ছ নির্দেশনা।

সেবার কেন্দ্রবিন্দুতে রূপ দিতে বলেছেন র‌্যাবের ক্যাম্প কমান্ডারদের কার্যালয়কে। অহংকারের উইপোকা থেকে দূরে থেকে আশার আলো জ্বালিয়ে বলেছেন- ‘আমরা শাসক না, সেবক হতে চাই।’ নিজ বাহিনীর সদস্যদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘আপনারা এদেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় চলেন, তাই সাধারণ মানুষকে সার্ভিস দিতে হবে।’ র‌্যাবের কমান্ডারদের কাছে আসা সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষের মর্মযাতনা উপলব্ধি করে দ্বিধাহীনভাবে নিজের অহর্নিশ ভালোবাসা প্রকাশ করে প্রকারান্তরে নিজ বাহিনীর সদস্যদের বুঝিয়ে দিয়েছেন নাগরিক প্রত্যাশার বিষয়টি। বাতলে দিয়েছেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে সেবক হিসেবে ভূমিকা রাখার পথও।

সোমবার (২০ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা র‌্যাব সদর দপ্তরের শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে আয়োজিত ‘র‌্যাবের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও র‌্যাব মেমোরিয়াল ডে-২০২৩’ উপলক্ষে র‌্যাব মহাপরিচালকের দরবার অনুষ্ঠানে র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন সব কাঠিন্যকে জয় করে নির্ভীকচিত্তে সাধারণ মানুষের আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে, তাদের প্রতি অধিক সংবেদনশীলতা, সহমর্মিতা এবং জনসেবার মূল্যবোধের অধিকারী হয়ে পেশাদারিত্বের সঙ্গেই নিজ বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালনে কঠোর বার্তার মাধ্যমেই যেন নিজ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দিয়েছেন।

দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেছেন, ‘অনেক ক্যাম্পের কমান্ডাররা অসহায় সাধারণ মানুষের কথা ঠিকমত শোনেন না, আমি অভিযোগ পাচ্ছি। পুনরায় এমন অভিযোগ শুনতে চাই না আমি। র‌্যাবে কর্মরত অবস্থায় যারা শহীদ হয়েছেন বা সাধারণ মানুষ যারা র‌্যাবের সহায়তা চাইতে যাবেন তাদের সঙ্গে অবশ্যই ক্যাম্প কমান্ডাররা কথা বলবেন। তাদের সহায়তা করবেন।’

এম খুরশীদ হোসেন বলেন, ‘আমি বলব, অসহায় মানুষ আমাদের কাছে আসবে। তাদের কথা শুনব, আইনের মধ্য থেকে সহায়তা করব। তবে নিয়ত ঠিক থাকতে হবে – আমরা যেন তার (অসহায় মানুষের) সমস্যাটা পুঁজি করে অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ না করি। মানুষ যাতে মনে করে র‌্যাবের কাছে গেলে কষ্টের কথা বলা যায়, অভিযোগ করা যায়, র‌্যাব মানুষের কথা শোনে। আমি কিন্তু বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি, র‌্যাবের সিওরা সাধারণ মানুষের কথা শুনলেও ক্যাম্প কমান্ডাররা কথা শোনেন কম। আজ সরাসরি বলে দিই, শুধু আমাদের শহীদ পরিবার না; বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তের মানুষ ক্যাম্পে যাবে। অবশ্যই ক্যাম্প কমান্ডার তার কথা শুনবেন। পুনরায় কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনতে চাই না।’

র‌্যাব সদস্যদের উদ্দেশে ডিজি বলেন, ‘আপনারা এদেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় চলেন, তাই সাধারণ মানুষকে সার্ভিস দিতে হবে। আমি যেসব জায়গায় কাজ করেছি, সব জায়গায় সাধারণ মানুষের কথা শুনেছি। আমি এখনও মানুষের কথা শুনি। থানায় বা এসপিকে ফোন করে বলে দিই। এতে যদি কারও উপকার হয়। প্রয়োজনে ক্যাম্প কমান্ডাররা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বা দেখা করার সময় বেঁধে দেবেন। এসময় অবশ্যই ক্যাম্পে উপস্থিত থাকতে হবে। এটা সিওরা নিশ্চিত করবেন। আমি কিন্তু পুনরায় এই অভিযোগ শুনতে চাই না। আমরা শাসক না, সেবক হতে চাই। আমি চাই যারা অসহায় মানুষ, বিপদগ্রস্ত মানুষ আমাদের আন্তরিকতা, ক্ষমতা দিয়ে তাদের সহায়তা করব। যদি দিন চাকরি আছে মানুষকে সহায়তা করে যাবেন।’

নিশ্চিত করতে হবে আন্তরিকতা
‘র‌্যাবে কর্মরত অবস্থায় যারা শহীদ হয়েছেন সেসব পরিবারকে আমরা প্রতিবছর আমন্ত্রণ জানাই। আমরা তাদের আর্থিক সহায়তা, উপহার সামগ্রী প্রদান করি। তবে আজ যে সন্তান পিতা হারা, যে স্ত্রী স্বামী হারা আমরা সেই শুন্যতা কোনো অবস্থাতেই অর্থ দিয়ে বা পুরস্কার দিয়ে পূরণ করতে পারব না। কর্নেল আজাদের স্ত্রী এখানে বক্তব্যে বলেছেন, র‌্যাব বাংলাদেশের অহংকার ও গর্ব। যেসব সদস্য দেশের জন্য শাহাদাত বরণ করেছেন তারা আমাদের গর্ব। আমরা জানি আল্লাহর কাছে শহীদের মর্যাদা অনেক বেশি। আমরা যারা কর্মজীবী রয়েছি তাদের দায়িত্ব হবে, সমস্ত শহীদ যে যেখানে থাকুক না কেন তাদের সহায়তা করা। আমার পক্ষ থেকে ডিরেক্টর বা সিওদের অনুরোধ থাকবে আমার কোনো শহীদ পরিবার আপনাদের কাছে উপকার না পেলেও অন্তত আন্তরিকতার কমতি না থাকে; এটা নিশ্চিত করতে হবে’-উদার হৃদয়ে সোচ্চার কন্ঠেই বলছিলেন র‌্যাব মহাপরিচালক।

এম খুরশীদ হোসেন বলেন, ‘আজকে আমরা যারা জীবিত রয়েছি, তারা কে কোন অবস্থায় মারা যাব কেউ জানি না। কিন্তু শহীদ পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের অনুভূতি যদি বুঝতে পারি তাহলে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব। শহীদ পরিবারের অনেক সদস্য পড়াশোনায় ভালো ফলাফল করছে। শহীদ পরিবারের সন্তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব থাকবে, আমাদের মাধ্যমে যদি কর্মসংস্থান হয় সেটা অবশ্যই করব। শহীদদের অনেকের সহধর্মিণী রয়েছে, তাদেরও যদি কর্মের ব্যবস্থা করা যায় সেটাও আমরা সবাই চেষ্টা করব। চাকরি জীবনে আমরা যতটুকু মানুষের জন্য উপকার করে যেতে পারি সেটাই কিন্তু সব সেটিসফেকশন, আত্মতৃপ্তি। যখন অবসরে চলে যাবো তখন এ সুযোগ থাকবে না।’

র‌্যাব কর্মকর্তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি
প্রয়াত র‌্যাব সদস্যদের প্রতি অকুন্ঠ শ্রদ্ধাবোধ, তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীরতম ভালোবাসা থেকে উৎসারিত অপরিসীম মমত্ববোধ ও সহনশীলতায় মর্মস্পর্শী অনুভূতির অনুরণকে প্রোজ্জ্বলিত করেছেন র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন। র‌্যাব কর্মকর্তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেছেন, ‘র‌্যাবের এডিজি, অধিনায়ক বা কোনো ক্যাম্পে গিয়ে আমাদের শহীদ পরিবারের সদস্যদের এমন অনুভূতি না জাগে যে, আজ আমার বাবা-স্বামী বেঁচে নেই কিন্তু র‌্যাবের কাছে এসে সহায়তা পেলাম না। সবাইকে বলব শহীদ পরিবারের প্রতি আমাদের আন্তরিকতার কমতি থাকবে না। তারা যেন মনে কষ্ট না পায়। কোন ব্যাটালিয়নে গিয়ে যদি কেউ উপকার না পান কষ্ট করে ঢাকায় চলে আসবেন, আমরা তাদের সহায়তার চেষ্টা করবো। আর শহীদ পরিবারের সদস্য যারা আমাদের কাছে দাবি-দাওয়া রেখেছেন তাদের বিষয়ে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’

র‌্যাব মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘দরবারের প্রথমদিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। আমাদের অন্য কোনো কিছু চিন্তা করলে চলবে না। ভয়ের কোনো কাজ নেই। আমাদের একটাই আস্থা আমরা এদেশের সন্তান, এদেশের জন্য কাজ করি। সবার মধ্যে একটা আস্থা তৈরি হয়েছে র‌্যাব মানুষের নিরাপত্তা ও ভরসার প্রতীক। আমি চাই, আমাদের সকল সদস্য মানুষের মধ্যে ভরসা-আস্থা আরও বাড়াতে কাজ করবে। আমরা যারা সরকারি কর্ম করি, যাদের ইউনির্ফ আছে তাদের পরিবার সিকিউরিটিতে আছে। কিন্তু সমাজের বাস্তব চিত্র আলাদা।’

এ সময় র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল মো.কামরুল হাসান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অ্যাডমিন) ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ র‌্যাব মহাপরিচালকের দরবার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

র‌্যাব মহাপরিচালক পদকে ভূষিত ৮৫ সদস্য
অনুষ্ঠানে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) আভিযানিক কার্যক্রমের বীরত্বপূর্ণ ও সেবামূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ র‌্যাব মহাপরিচালক পদক পেয়েছেন ৮৫ সদস্য। এ বছর বিশেষ সম্মাননা (সাহসিকতা) ৩৫ জন ও বিশেষ সম্মানা (সেবা) পুরস্কার পেয়েছেন ৫০ র‌্যাব সদস্য। এ বছর র‌্যাব মহাপরিচালকের দরবার অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মত র‌্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ডগ স্কোয়াডের কুকুর ‘চিতা’ বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য র‌্যাব মহাপরিচালক পদক পেয়েছেন। র‌্যাবের ডগ স্কোয়াডের কুকুর ‘চিতা’ রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্ধার কার্যক্রম অংশগ্রহণ করে। সেখানে দুর্ঘটনায় নিহত ৩ ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করার বীরত্বপূর্ণ কাজে পদক পেয়েছে এই কুকুর ‘চিতা’।

কালের আলো/ডিএস/এমএইচএ