প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় নতুন উচ্চতায় বাংলাদেশ-কাতার; সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োগে বাড়বে রেমিট্যান্স প্রবাহ

প্রকাশিতঃ 8:45 pm | March 08, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

বৈশ্বিক রাজনীতিতে শক্ত অবস্থানে থাকা আরব উপদ্বীপের তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ দেশ কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় নতুন দিক উন্মোচন হয়েছে। ভূ-কৌশলগত অবস্থানে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ দেশটি সামরিক শক্তিতেও সমীহ করার মতোই। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রীতিসহ পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিরক্ষা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) স্বাক্ষরের ৫ মাসের মাথায় বাংলাদেশ ও কাতারের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সামরিক সহায়তা সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৭ মার্চ) কাতারের দোহায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও কাতার সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল সালেম হামাদ আকিল আল নাযিতের মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। এই চুক্তির ফলে কাতারের সশস্ত্র বাহিনীতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা যাবে। আপাতত ১১২৯টি নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। এটি একটি ওপেন চুক্তি, যে কারণে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আর্ম ফোর্সেস যেকোনও সংখ্যক সদস্য নিয়োগ করতে পারবে। আপাতত নিয়োগকৃতদের মধ্যে অফিসারের সংখ্যা কম, সৈনিকের সংখ্যা বেশি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানা যায়, কাতার সশস্ত্র বাহিনীতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের এই নিয়োগ দেশে বাড়াবে অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিট্যান্সের প্রবাহও। প্রতি মাসে আসবে ৩ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স। দ্বিপাক্ষিক সামরিক কূটনীতিতে নতুন মাত্রার পাশাপাশি দু’দেশের মানুষের মাঝেও রচিত হবে সেতুবন্ধ। শুধু তাই নয়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এ ধরনের অগ্রগতি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও দু’দেশের সহযোগিতাকে করবে আরও বেগবান।

দু’দেশের সশস্ত্র বাহিনীর চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করার পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনটিও কার্যত হয়ে উঠে এক স্বপ্নযাত্রার প্রতিচ্ছবি। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার- উজ-জামান।

আশাবাদী উচ্চারণে তিনি বলেছেন, ‘কাতারের আর্মড ফোর্স হলো প্রফেশনাল আর্মড ফোর্স। আমি মনে করি আমাদের আর্মড ফোর্সেসের সঙ্গে কাজ করলে তারাও উপকৃত হবে। এর মাধ্যমে দুই দেশের আর্মড ফোর্সেসের মধ্যে সেতুবন্ধন স্থাপিত হবে। পাশাপাশি দুই দেশের জনগণের মধ্যেও সেতুবন্ধন স্থাপিত হবে।’

চুক্তির আদ্যোপান্ত জানিয়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আরও বলেন, ‘গত অক্টোবরে এমওইউ যেটা স্বাক্ষর হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় আজ এই অ্যাগ্রিমেন্ট।’

তিনি বলেন, ‘এই চুক্তি এখানেই শেষ না। ভবিষ্যতে আরও লোক নেওয়া সম্ভব হবে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী থেকে। আপাতত ১১২৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের দেশে যথেষ্ট রেমিট্যান্স যাবে। আমরা হিসাব করেছি ৩ মিলিয়ন ডলার প্রতিমাসে রেমিট্যান্স যাওয়া সম্ভব হবে। কাতারে আমাদের সৈন্যদের থাকা-খাওয়া সব ফ্রি থাকবে।’

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন কাতারে নিযুক্ত ডিফেন্স অ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসেন। এ সময় কাতারে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলামসহ বাংলাদেশের গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email