তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে: জাতিসংঘ

প্রকাশিতঃ 11:13 am | March 08, 2023

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

তুরস্কে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এমন আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) একজন কর্মকর্তা। আগামী সপ্তাহে দাতাদের একটি সম্মেলনের আগে এ কথা জানালেন তিনি।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউএনডিপির কর্মকর্তা লুইসা ভিনটন মঙ্গলবার তুরস্কের গাজিয়ানটেপ শহর থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে একটি সংবাদ ব্রিফিংয়ে কথা বলেন। গত মাসের বিপর্যয়কর ওই ভূমিকম্পে তুর্কি এই শহরটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে লুইসা ভিনটন বলেন, ‘ভূমিকম্পের পর থেকে এখন পর্যন্ত করা হিসেবে এটি স্পষ্ট যে- সরকারের উপস্থাপিত এবং … আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহায়তায় প্রস্তুতকৃত মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি হবে।’

গত ৬ ফেব্রুয়ারি ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিম সিরিয়া। এতে এখন পর্যন্ত ৫২ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল তুরস্কেই প্রাণ হারিয়েছেন ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ।

ভূমিকম্পে তুরস্কে ১ লাখ ৭৩ হাজার ভবন ধসে গেছে বা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতের আঁধারে এই ভূমিকম্প হওয়ায় অনেকেই ঘুমের মধ্যেই পিষ্ট হয়ে মারা যান।

এরপর ক্ষয়ক্ষতির অস্থায়ী পরিসংখ্যান তৈরি করা হয় এবং ভিনটন বলছেন, ওই পরিসংখ্যানে শুধুমাত্র তুরস্ককেই কভার করা হয়েছে। আর ওই পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করেই ভূমিকম্প-পীড়িত জীবিত মানুষ ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে আগামী ১৬ মার্চ ব্রাসেলসে একটি দাতা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

এর আগে ভূমিকম্পের ফলে তুরস্কের প্রত্যক্ষ ক্ষয়ক্ষতি ৩৪.২ বিলিয়ন বলে অনুমান করেছিল বিশ্বব্যাংক। কিন্তু সংস্থাটি এখন বলছে, ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত এই দেশটিতে পুনরুদ্ধার এবং পুনর্গঠনের খরচ অনেক বেশি হবে এবং ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতির সাথে যুক্ত তুরস্কের মোট দেশীয় পণ্যের ক্ষতিও বাড়তি যোগ হবে।

মঙ্গলবারের সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভিনটন বলেন, ইউএনডিপি, বিশ্বব্যাংক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় তুরস্ক সরকার অনেক বেশি ক্ষতির হিসাব করেছে। ক্ষয়ক্ষতির ধারণাটি একবার সম্পন্ন হলে সেটিই আগামী সপ্তাহে দাতা সম্মেলনের ভিত্তি হয়ে উঠবে।

তিনি আরও বলেন, পুনরুদ্ধারের খরচ, উন্নত এবং আরও পরিবেশগতভাবে টেকসই অবকাঠামো নির্মাণসহ মোট ক্ষয়ক্ষতির বা খরচের পরিমাণ ‘অবশ্যই সেই পরিমাণ (১০০ বিলিয়ন ডলার) ছাড়িয়ে যাবে’।

ভিনটন তুরস্কের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হাতায় প্রদেশের অবস্থাকে ‘অ্যাপোক্যালিপটিক’ হিসাবে উল্লেখ করে বলেছেন, তুর্কি এই প্রদেশে লাখ লাখ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। তার ভাষায়, ‘ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন অনেক বেশি, কিন্তু (অর্থ) সংস্থান দুষ্প্রাপ্য’।

তুরস্কের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, বিপর্যয়কর ভূমিকম্পের পর বেঁচে যাওয়া প্রায় ২০ লাখ মানুষকে অস্থায়ী বাসস্থানে রাখা হয়েছে বা ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তাঁবুতে বাস করছেন এবং আরও ৪৬ হাজার মানুষকে কন্টেইনার হাউসে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

অন্য দুর্গতরা ডরমেটরি এবং গেস্টহাউসে বসবাস করছে বলে সরকার জানিয়েছে।

কালের আলো/এমএইচ/এসবি