সব সঙ্কট কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই

প্রকাশিতঃ 11:26 am | December 27, 2022

কালের আলো রিপোর্ট:

কাগজের সঙ্কট, চড়ামূল্য বা লোডশেডিং। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বছরের প্রথম দিনেই পাঠ্যপুস্তক উৎসবের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর বেশ দেরিতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণের কাজ শুরু হলেও পাঠ্যপুস্তক উৎসব হবে যথাসময়েই। সব সঙ্কট মোকাবেলা করে নির্ধারিত সময়ে বই পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। নির্ধারিত সময়ে বই পৌছে দিতে দ্রুত ছাপার কাজ ও মান নিয়ন্ত্রণেও কঠোর মনিটরিং করেছেন মন্ত্রী। এসবের সুফল হিসেবে বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়ার কঠিন এক চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হতে চলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

২০১০ সাল থেকে সারা দেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বছরের প্রথম দিন পাঠ্যপুস্তক তুলে দিয়ে সারা বিশ্বে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। এমনকি মহামারির বছরও ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল। তবে এবার কাগজ সঙ্কট, বিলম্বিত টেন্ডার প্রক্রিয়া, লোডশেডিং, বিশ্ববাজারে কাগজের চাহিদা ও দামসহ নানান সঙ্কট মোকাবেলা করেই নির্ধারিত সময়েই কাগজের মান ও উজ্জ্বলতা ঠিক রেখেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার মিশনে আরও একটি টিম ওয়ার্কে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি।

দিন কয়েক আগে নাটোরের অনিমা চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় কাগজ, কালিসহ পুস্তক তৈরির সব উপকরণের দাম লাগামহীন। এমন পরিস্থিতিতেও শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকারে রেখেছে সরকার। এ জন্য আগামী ১ জানুয়ারি দেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হবে।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য এবার সাড়ে ৩৪ কোটির বেশি কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৩ হাজার এবং মাধ্যমিক স্তরে ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। গত ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাধ্যমিকের ৭৭ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর প্রাথমিকে পৌঁছেছে ৫৮ শতাংশ বই। ইতিমধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে শতভাগ বই ছাপার কাজ শেষ হয়েছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘বই পৌঁছাতে মাধ্যমিকের কোনো উপজেলা বাদ নেই। তবে প্রাথমিকে এখনো কিছু উপজেলায় বই পৌঁছাতে বাকি আছে। এখন দ্রুততার সঙ্গে প্রাথমিকের বইয়ের কাজ চলছে। উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো বই গোডাউনে না রেখে সঙ্গে সঙ্গেই স্কুলে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও জানুয়ারির ১ তারিখেই বই উৎসব হবে। সব শিক্ষার্থীই বই পাবে। কোনো শিক্ষার্থী না এলে তাদের অভিভাবকদের বই দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার বই মুদ্রণে নানা সঙ্কট ছিল। বিশেষ করে কাগজ নিয়েই বড় সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। মুদ্রাকরদের ২ টাকা ৯০ পয়সা ফর্মাপ্রতি দর দেওয়ার সুযোগ থাকলেও তারা কম দর দিয়ে সঙ্কট বড় করেছে। আমরা শতভাগ বইয়ের কাজ শেষ করতে দিনরাত পরিশ্রম করছি। কাগজের মিলমালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, কাগজের সিন্ডিকেট ভাঙাসহ নানা কাজ আমরা করেছি। এরপরও বইয়ের নির্ধারিত মানের ক্ষেত্রে আমরা আপস করছি না। নিম্নমানের কাগজে বই ছাপলে সঙ্গে সঙ্গেই তা বাতিল করা হচ্ছে।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বছর শুরুর প্রথম দিন সাধারণত সব শিক্ষার্থী বই নিতে আসে না। শিক্ষার্থীরা পর্যায়ক্রমে বই নিতে আসে। তবে শহরের স্কুলগুলোতে চিত্র ভিন্ন। সেখানে প্রথম দিনেই বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আসে। সেখানে শতভাগ বই পৌঁছানোর পরিকল্পনা রয়েছে এনসিটিবির।

জানা যায়, মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণির বইয়ের কাজ প্রায় শেষের পথে। তবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যসূচি হওয়ায় সেগুলোর ছাপা শুরু করতেই দেরি হয়েছে। ফলে ওই দুটি শ্রেণির বইয়ের কাজ কিছুটা পিছিয়ে আছে। অন্যদিকে প্রাথমিকে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বইয়ের কাজ তুলনামূলক এগিয়ে আছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যসূচি চালু হওয়ার কথা থাকায় এই দুই শ্রেণির বইয়ের কাজ পিছিয়ে আছে। অবশ্য আগামী বছর প্রাথমিকে শুধু প্রথম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যসূচি চালু হচ্ছে। মাধ্যমিকের তুলনায় প্রাথমিকের কাজ কিছুটা পিছিয়ে থাকায় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিকের বই মুদ্রণেই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, নিম্নমানের কাগজ হওয়ায় এরই মধ্যে ১০টির বেশি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু বই বাতিল করা হয়েছে। হাওলাদার অফসেটের তিন হাজার বই বিনষ্ট করা হয়েছে। সরকার প্রেস নামের আরেক প্রতিষ্ঠানের তিন লাখ কপি ফর্মা, সরকার অফসেট প্রেসের দুই লাখ কপি ফর্মা এবং আল-আমিন প্রেসের এক লাখ কপি ফর্মা নষ্ট করা হয়েছে।

একাধিক মুদ্রণকারী জানান, যত বেশি সম্ভব বই সরবরাহ করার জন্য বর্তমানে প্রেসগুলোতে দিনরাত কাজ হচ্ছে। শ্রমিকরা কোনো ধরনের ছুটি ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছেন। ছুটির দিনেও এনসিটিবির চেয়ারম্যান, সদস্যসহ সব মনিটরিং টিমের কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। সবার চেষ্টা থাকার পরও কিছু মুদ্রণকারী, যারা আগামী শিক্ষাবর্ষের বইয়ের কাজ পাননি তাদের কেউ কেউ অপপ্রচারে নেমেছেন। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে উল্টাপাল্টা তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষজনকে বিভ্রান্ত করছেন। আসলে তারা সরকারের সাফল্য ও পাঠ্যপুস্তক উৎসবকে বিতর্কিত করার জন্য নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কালের আলো/বিএস/এএএ