মেয়র জাহাঙ্গীরের ‘ঘরে’ ফেরা, আকাশ ভেঙে পড়েছে কুশীলবদের মাথায়
প্রকাশিতঃ 10:45 pm | December 22, 2022

রাজনৈতিক ভাষ্যকার, কালের আলো:
‘জনপ্রিয়’ ও ‘জনবান্ধব’ এই দুটি শব্দ তার নামের সঙ্গে জুতসই। বলা হয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রগাঢ় স্নেহেই নগর ও রাজনীতিতে উত্থান ঘটে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের। মাত্র ৩৯ বছর বয়সেই দলীয় মনোনয়নে মেয়র জাহাঙ্গীরের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
রেকর্ড ভোটে জিতে সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রেখেছিলেন জাহাঙ্গীরও। ছাত্রলীগের গাজীপুর জেলা ও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে হাত পাঁকানোর পর তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদেও। কিন্তু গত বছরের ১৯ নভেম্বর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। ৬ দিনের মাথায় ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকেও সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। একজন সম্ভাবনাময় কর্মীবান্ধব রাজনীতিকের ক্যারিয়ার এক ঝড়েই লন্ডভন্ড! এক সময় যাকে বিবেচনা করা হতো নগর আওয়ামী লীগ বা নগরের ‘প্রাণ’ সেই তাকে নিয়েই ‘অচ্ছুত’ ভাব! যেন সব শেষ! অনেকেই নানা কায়দা কানুনে তাকে হেনস্থার কূটকৌশলেও ক্ষ্যান্ত হননি মোটেও। ধৈর্য্য আর আদর্শের পরীক্ষায় আকাশের কালো মেঘ কেটে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজপথের ‘প্রিয় মুখ’ জাহাঙ্গীর আলম। দৃঢ় প্রত্যয় ছিল সুদিনে ফেরার।
একটি আধুনিক ও উন্নত গাজীপুর মহানগরের স্বপ্ন যারা দেখতেন জাহাঙ্গীরের না থাকায় ‘মলিন’ তাদের মুখায়ব। কিন্তু জাহাঙ্গীরের অনুপস্থিতির সুযোগে যারা স্বর্গসুখের আনন্দে মজেছিলেন, তিলকে তাল বানিয়ে মিথ্যার বেসাতি আর কথার তুবড়ি ছুটাচ্ছিলেন তাদের জন্য প্রথম দু:সংবাদটি এসেছিল সপ্তাহখানেক আগে, গত শনিবার।
ওইদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। নগরবাসী বিশেষ করে দলে তার সমর্থকদের মধ্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা তৈরি হয়। বিষয়টি দিবালোকের মতো পরিস্কার হলেও ‘সুযোগ সন্ধানী’ ও ‘বহুগামী’ কারও কারও যেন বিশ্বাসই হচ্ছিলো না তবুও! অত:পর স্বয়ং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আদ্যোপান্ত গণমাধ্যমকে জানানোর পর যেন হুঁশ ফিরে মহল বিশেষের। কেউ কেউ শোকাতাপে শীতনিদ্রায়!
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি যখন প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করলেন জাহাঙ্গীরের মেয়র পদে ফেরার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন তখন রীতিমতো ঘুম হারাম কথিত কুচক্রী মহলের, যারা দলের অন্দরে-বাইরে পরিচিত ‘কুশীলব’ নামে। দলের আন্দোলন-সংগ্রামে বরাবরই ‘পাততাড়ি’ গুটিয়ে কর্মীর মনোজমিন থেকে হারানো এসব কথিত নেতারা আবার জনবিচ্ছিন্নও।
তবে মন্ত্রীর এই ঘোষণায় অবারিত আনন্দের ফল্গুধারাই বয়ে চলেছে গাজীপুরের সচেতন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পিতা মুজিব অন্ত:প্রাণ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে। খুশির খবরে মিষ্টি মুখের আনন্দ উপলক্ষ্যে ছেড়েছেন স্বস্তির শ্বাস। বিপরীতে কর্পুরের মতো উড়ে গেছে ‘পূর্ণ মেয়র’ বা ‘মেয়র’ হওয়ার রঙিন স্বপ্নে বিভোর গুটিকয়েক ভেল্কিবাজ। আরাম চেয়ারে কেউ কেউ না কী বেহুহুঁশ! দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মিডিয়া কভারেজের দৌলতে ‘আন্দোলন নাটক’ মঞ্চস্থ করতে গিয়ে উল্টো নগরবাসীর কাছে ‘প্রত্যাখ্যাত’ ও ‘ধরাশায়ী’ হয়েছেন। রীতিমতো যেন জাহাঙ্গীরের ঘরে ফেরার দাবিতে অনড় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কাছে ‘চপেটাঘাত’ খাওয়ার প্রতীকী চিত্র।
বিভিন্ন সূত্র মনে করছে , মেয়র জাহাঙ্গীরের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের মাধ্যমে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের ঐক্যকে আরও সুসংহত করতে চায় আওয়ামী লীগ। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭ টি ওয়ার্ডেই মেয়র জাহাঙ্গীরের শক্ত ভিত্তি রয়েছে। পাশাপাশি জনবান্ধব চরিত্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সহজেই কাজে টেনে নেওয়ার সহজাত গুণ রয়েছে তাঁর। দল থেকে বহিস্কৃত হলেও সাধারণের হৃদয় মন্দির থেকে কখনও হারিয়ে যাননি। ভোটে এসব বিষয় আওয়ামী লীগের জন্য প্লাস হবে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে মূলোৎপাটনে জাহাঙ্গীর আলমের সাহসী নেতৃত্বকেও কাজে লাগাতে চায় হাইকমান্ড।
কেউ কেউ বলছেন, মেয়র পদেও জাহাঙ্গীরের ফেরা এখন কেবলই সময়ের অপেক্ষা। পাশাপাশি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। এর আগেই মেয়র নির্বাচন হতে পারে। সে নির্বাচনে জাহাঙ্গীরকে আবারও মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই নিশ্চিত। ভোট ও মাঠ রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীরের হাত ধরেই অনায়েসে নিবাচনী বৈতরণী আওয়ামী লীগ পাড়ি দিতে সক্ষম হবে বলেও বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার চিরায়ত বিচক্ষণ ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তের প্রথম ধাপ ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে। উন্নয়ন মন্ত্রে উজ্জীবিত গাজীপুর মহানগরীর বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন, জাহাঙ্গীরের পক্ষেই সম্ভব ২০১৮ সালের ২৬ জুনের ভোট বিপ্লবের পুনরাবৃত্তি। আওয়ামী লীগের উইনেবল ক্যান্ডিডেট।
কালের আলো/জিকে/এমকে