আমানের ইউটার্নে ক্ষুব্ধ তৃণমূল
প্রকাশিতঃ 10:50 am | December 12, 2022

গোলাম কিবরিয়া ও রাইসুল ইসলাম, কালের আলো:
মাস দুয়েক আগে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান ফাঁকা বুলিতে বলেছিলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা ও তারেক জিয়ার কথায় দেশ চলবে।’ আমানের সেই বক্তব্য তোলপাড় শুরু হয়েছিল। কিন্তু ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশে রীতিমতো ‘ইউটার্ন’ নিয়েছেন ঢাকসু’র সাবেক ভিপি। ঢাকার বাইরে থেকে নেতাকর্মীদের রাজধানীতে এনে তাদের শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফিরে যেতে বলেছেন। অথচ সমাবেশে উপস্থিত অনেকেই কাঁথা, কম্বল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন মূলত সরকার পতনের জন্য!
‘এদের কথায় আর বিশ্বাস নেই। আওয়ামী লীগ ঠিকই বলে, জোশে হুঁশ হারিয়ে প্রলাপ বকেছেন আমাদের সিনিয়র নেতারা। এই দল সরকার পতনের মতো শক্তি এখনও অর্জন করতে পারেনি।’ ক্ষোভ নিয়েই কথাগুলো বলছিলেন লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলা থেকে শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে আসা জুলফিকার ইসলাম। গজর গজর ভঙ্গিতে বলেন, ‘নয়াপল্টনে সমাবেশ না করতে পারা বড় রকমের পরাজয়। আসলে নেতারা ঝুঁকি নিতে চান না।’
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থেকে আসা ছাত্রদলকর্মী আমান মিয়া বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম সরকার পতন ঘটবে। সবাই মাঠেই বসে যাবেন। কিন্তু আশায় গুড়ে বালি। আমাদের সিনিয়র নেতাদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেললাম। নেতাদের কন্ঠে নমনীয় সুর আমাদের আশাহত করেছে।’
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গোলাপবাগে বসে ঢাকায় আসা বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা এভাবেই হতাশা ও ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন দৈনিক সন্ধানী বার্তার সঙ্গে।
বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভাষ্য— এখানে (সমাবেশে) সবাই নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে হাজারো বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে, তেজোদীপ্ত হয়ে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে জড়ো হয়েছে। অনেকে কাফনের কাপড় পরে সমাবেশে এসেছে। কিন্তু কোনো রূপ দিকনির্দেশনা না পেয়ে ব্যর্থমনোরথে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
সমাবেশে ফখরুল-রিজভী না থাকায় ড.খোন্দকার মোশাররফের বক্তব্যে কোন চমক ছিল না। নিয়মরক্ষার আন্দোলন কর্মসূচি তৃণমূলকে হতাশার সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছে বলেও মনে করছেন দলটির নিবেদিত কর্মীরা। তারা বলছেন, ‘যদি মির্জা ফখরুল, রুহুল কবির রিজভী বা এ্যানির মতো নেতারা এই সমাবেশে উপস্থিত থাকতেন, তাহলে আমরা নিশ্চয়ই আশানুরূপ দিকনির্দেশনা পেতাম।’
কুমিল্লার মুরাদনগর থানা থেকে ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় আসেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সমাবেশে মির্জা ফখরুলকে না দেখে আমি হতাশ। ৮ তারিখ থেকে আমি একাধিকবার পল্টনে প্রধান কার্যালয়ে গিয়েছি, কিন্তু ভেতরে যেতে পারি নাই। আমি মহাসচিবকে অনেক ভালোবাসি। তিনি অনেক ভালো মানুষ। তাই ওনাকে দেখতে এসেছি।’
বিএনপির মহাসচিবকে এক পলক দেখতে ঢাকার সমাবেশে আসেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট এলাকার আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘আমি ৭ তারিখ এসেছি। মহাসচিব স্যারকে এক পলক দেখবো বলে।’
হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সংসদ কথা বলার জায়গা। আমাদের এমপিরা ভালোই করছিলেন সেখানে। কিন্তু হুট করে তাদের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ভুল। আমাদের ছোট মাথা। হয়তো বড়রা ভেবে-চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু তারা সংসদে আরও কিছুদিন থাকলে কী এমন ক্ষতি হতো?’
কালের আলো/জিকে/এমকে