‘তোমরা ক্ষমা করোনি, আমরাও ক্ষমা করব না’

প্রকাশিতঃ 1:44 pm | December 05, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় স্কুলের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলছে। নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।

এ সময় অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরার আহ্বান জানালে তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘তোমরা ক্ষমা করোনি, আমরাও ক্ষমা করব না।’

বুধবার সকাল থেকেই অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিনা বেগম বলেন, ক্লাস বন্ধ করা যাবে না, সামনে নির্বাচন হাতে সময় কম; আমি মেয়েদের আহ্বান করছি-সবাই ক্লাসে ফিরে এসো, জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

শিক্ষক প্রতিনিধি মোস্তারি বেগম বলেন, শাস্তি সঙ্গে সঙ্গে হয় না-এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, দোষীদের শাস্তি পেতে হবে। তোমাদের দাবি পূরণ হবে সেটি আইনি প্রক্রিয়ায়। আমি তোমাদের দ্বিতীয় মা, তোমরা আমার দ্বিতীয় সন্তান।

বিশেষ করে নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ‘শাসন করুন অপমান নয়,’ ‘কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আর কত শিক্ষার্থী প্রাণ দেবে,’ ‘শিক্ষার্থীদের অপরাধের শাস্তি যদি টিসি হয়, তবে শিক্ষকদের অপরাধের শাস্তি কি হবে?’ বলে স্লোগান দিচ্ছে।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস অনুযায়ী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষকদের কখনও বাচ্চাদের সমস্যা নিয়ে গার্ডিয়ানদের সঙ্গে কথা বলতে চায় না, বাচ্চার কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে সমাধান করার চেষ্টা করে না।

খায়রুল আলমের মেয়ে স্কুলটিতে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। শিক্ষকদের খারাপ আচরণের বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, তারা আমাদের মূল্যায়ন করে না, বাচ্চারা এখান থেকে কী শিখবে!

‘আমরা সন্তানকে স্কুলে পাঠাই শিক্ষার জন্য। কিন্তু স্কুলের প্রত্যেকটা শিক্ষকের কাছে ব্যক্তিগত কোচিংয়ে পড়াতে হয়।

আরেক অভিভাবক আফরোজা ইয়াসমিন বলেন, শিক্ষকরা কেবল শাসন না এখানে শোসনও করেন। কোচিংটা বাধ্যতামূলক করে ফেলেছে- সবার সঙ্গে অমানবিক আচরণ করে।

তিনি বলেন, বাচ্চাদের শাসন করবে করুক। কিন্তু বাচ্চার সামনে বাবা-মাকে অপমান করে এমন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমরা চাই না। মামলা হয়েছে আমরা অতিসত্বর দোষীদের গ্রেফতার দেখতে চাই।

বিক্ষোভে অংশ নিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী রুবানা বলেন, আমরা পরীক্ষা বয়কট করে এখানে এসেছি, আমি ১০ বছর ধরে এখানে পড়ছি। সামান্য বিষয় নিয়ে বাবাকে ডেকে অপমান করা হয়, যার জন্য আমরা মানসিক চাপে থাকি। এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু আমরা চাই না, এমন যেন আর না হয়, সে জন্য শিক্ষক ও সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।

অরিত্রির সহপাঠীর মা কনিকা শেখ বলেন, এমন শিক্ষকের কাছ থেকে বাচ্চারা কি শিখবে! শিক্ষকরা বাচ্চাদের অনেক মানসিক চাপে রাখেন, এখানে শিক্ষার কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, ক্লাসে প্রমোশন না পেয়ে ২০১২ সালের ১২ মে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী চৈতী রায় আত্মহত্যা করেছেন, যার বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি।

কালের আলো/এমএইচএ