সবার নজরে বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ 10:25 am | November 10, 2022

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, কালের আলো:

বন্ধুপ্রতিম দেশ থেকে শুরু করে জাতিসংঘসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার নজরে রয়েছে বাংলাদেশ। সব দল, প্রার্থী ও ভোটারের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে কূটনীতিকরা। পাশাপাশি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার মাত্রা যেন না বাড়ে সে জন্য সংলাপের মাধ্যমেই যাবতীয় সমাধানের সূত্র খোঁজার তাগিদ দিয়ে চলেছেন কূটনীতিকরা।

সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদেশি কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করছেন সরকারি দল আওয়ামী লীগ, বিরোধী বিএনপি ও জাতীয় পার্টি বা সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। এসব তৎপরতা কখনো উন্মুক্তও থাকছে। নিজেদের আশাবাদ কিংবা উদ্বেগের কথা ব্যক্ত করছেন প্রকাশ্যে। আবার রুদ্ধদ্বার বৈঠকও হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

রাজনীতি বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আগামী বছরের শুরু থেকে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে, ততই এই বিষয়ে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার তৎপরতা আরও বাড়বে। ২০২৩ সালের শেষ অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ অথবা সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অথবা সরকারের কাছ থেকে অনুরোধ না থাকলে নির্বাচন নিয়ে (জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের) ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই।

লুইস মনে করেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজনকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ। জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠানের জন্য সুযোগ খুঁজে নেবে।

কূটনীতিকদের তৎপরতার বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের আগ্রহ আগেও ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর থেকে এই আগ্রহে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। সেই নির্বাচনের ফল ঘোষণার সাত দিন পর চীন অভিনন্দন জানিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর ১২ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী লি সিয়াং। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের তদানীন্তন রাষ্ট্রদূত ক্যাং ঝু সে বছরের ৩১ ডিসেম্বর সকালে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চীনা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছে দেন। এতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীনের আগ্রহের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র আশা প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। তবে তেমন নির্বাচনের জন্য পরিবেশ তৈরি এবং বিরোধী দল যেন প্রচার চালাতে পারে, সভা-সমাবেশ করতে পারে, সে রকম পরিবেশ তৈরি করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেভ প্রাইস ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় সোমবার আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সামাজিক অংশগ্রহণ শক্তিশালী হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ তাদের সরকার নির্বাচিত করবে।’

মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আফরিন আখতার বাংলাদেশ সময় সোমবার সকালে ঢাকা ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নেড প্রাইস ওই মন্তব্য করলেন। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক ফেসবুক পোষ্ট অনুযায়ী, সফরকালে আফরিন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠকে সংসদ নির্বাচনে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোসহ সব অংশগ্রহণকারীর জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে, এমন বার্তা দিয়েছেন। অবশ্য আগামী জাতীয় নির্বাচনে কে জয়লাভ করছে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চিন্তা করে না বলে দাবি করেছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সব সংস্থাকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।

এদিকে বিভিন্ন সূত্র বলছে, দুইদিনের বাংলাদেশ সফরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপ সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ধরনের উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা জানাননি। ফলে বিশ্লেষকরা বলছেন বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বহি:বিশ্বের তেমন কোনো উদ্বেগ নেই। বরং বর্তমান রাজনৈতিক চর্চা দেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে, আরও বিকশিত করবে। কারণ এখন দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোর তাদের কর্মসূচি পালন করছে। যা গণতন্ত্র চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক মহল।

কালের আলো/এবি/এমএম