প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে দেশের সর্বোচ্চ সেবায় আত্মত্যাগে প্রস্তুতের বার্তা সেনাপ্রধানের

প্রকাশিতঃ 9:29 pm | October 13, 2022

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:

শিশির বিন্দু ঝিকমিকিয়ে উঠা আশ্বিনের সকাল। বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর)। সাভার সেনানিবাসে সিএমপি সেন্টার এন্ড স্কুলে সদর দপ্তর ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেড, ১৫ ও ৪০ ইস্ট বেঙ্গল (মেকানাইজড) এবং ৯ ও ১১ বীর (মেকানাইজড) এর পতাকা প্রদান অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজের দীর্ঘ তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্যে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ জাতীয় যেকোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানালেন।

আরও পড়ুন: জলপাই রাঙা ক্যাপে স্বকীয়তায় জ্যোতির্ময় প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনীকে আন্তরিকভাবে দেশসেবার আহ্বান

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড. এস এম শফিউদ্দিন আহমেদসহ সকল সেনা সদস্যকে ধন্যবাদ জানালেন সম্প্রতি সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোণা জেলায় আকস্মিক ভয়াবহ বন্যায় প্রশংসনীয় ভূমিকার পালনের জন্য। দেশের যেকোন দুর্যোগে মোকাবেলায় জনগণের সঙ্গে সেনাবাহিনীর একাত্মতা, পাশে দাঁড়ানোর অগ্রণী কর্মযজ্ঞের উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে নিজের বক্তব্যে যেন সরকারপ্রধানের সঙ্গেই কন্ঠ মিলেয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ড. এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ নিজেও।

অভিন্ন কন্ঠে অমিত দৃঢ়তায় জানিয়ে দিলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি- আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনায় দেশপ্রেমে উজ্জীবিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতির আস্থার প্রতীক হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ সেবায় আত্মত্যাগে প্রস্তুত থাকবে। ‘সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে’ এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশমাতৃকার সেবায় তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে, এই বিশ্বাস আমি করি।’

সেনাপ্রধান পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর নতুন ব্রিগেড ও ইউনিটসমূহের সকল সদস্যদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেড’র পতাকা উত্তোলন করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলম, মাস্টার জেনারেল অব অর্ডন্যান্স মেজর জেনারেল মো. আবু সাঈদ সিদ্দিক, নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও সাভারের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক এবং ১১ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও বগুড়ার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. খালেদ-আল-মামুন অন্যান্য ইউনিটসমূহের পতাকা উত্তোলন করেন।

এ সময় আর্টডকের ভারপ্রাপ্ত জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) মেজর জেনারেল এস এম কামরুল হাসানসহ উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা, অসামরিক কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পদবীর সেনা সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

গভীর শ্রদ্ধায় স্বাধীনতার মূল নায়ক বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ নিজের বক্তব্যের শুরুতেই মহান আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে শুকরিয়া আদায় করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা সকলে সুস্থ থেকে আজকের এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে।

আজকের এই অনুষ্ঠানের বিশেষ মুহুর্তে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে চাই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি ছিলেন আমাদের স্বাধীনতার মূল নায়ক এবং যার একক নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্নোৎসর্গকারী ৩০ লক্ষ শহীদদের এবং সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাদের অসামান্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা ও জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা। আমি স্মরণ করছি সশস্ত্র বাহিনীর সকল শহীদদের যারা শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধেই নয় তার পরবর্তী সময়েও দেশে বিদেশে আমাদের দেশের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছে।’

বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বেই ক্রমাগত বাস্তবায়ন হচ্ছে জাতির পিতার সোনার বাংলা
বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বেই ক্রমাগত বাস্তবায়ন হচ্ছে জাতির পিতার সোনার বাংলা-এমন উচ্ছ্বসিত বাণী উচ্চারণ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘সকল শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন ক্রমাগত বাস্তবায়ন হচ্ছে, যার সুযোগ্য নেতৃত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অঙ্গন এগিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান অনস্বীকার্য। আমি এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’

সেনবাহিনীর সার্বিক অগ্রযাত্রায় সশ্রদ্ধচিত্তে উচ্চারণ প্রধানমন্ত্রীর অবদান
সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি দক্ষ, সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত বাহিনীরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে মন্তব্য করে এই চারতারকা জেনারেল বলেন, ‘আমাদের অকুতোভয় সেনানীরা দেশ গঠনমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন করে সুখ্যাতি ও প্রভূত সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ সেনাবাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষে আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনায় ফোর্সেস গোল-২০৩০ একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ, যা আজ বাস্তবায়নের পথে।’

তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একমাত্র মেকানাইজড ব্রিগেড ও মেকানাইজড ব্যাটালিয়নগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। ১১ বীর প্রথম মেকানাইজড ব্যাটালিয়ন হিসেবে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে ১৫ ইস্ট বেঙ্গল, ৪০ ইস্ট বেঙ্গল ও ৯ বীরকে পর্যায়ক্রমে মেকানাইজড ব্যাটালিয়নে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এরই মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যুদ্ধ উপযুক্ততা এবং নতুন মাত্রা অর্জনে সক্ষম হয়। ২০১৩ সালে ৭১ পদাতিক ব্রিগেড নতুন নামকরণে ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেড হিসেবে প্রকাশ লাভ করে, যা আমাদের সেনাবাহিনীর একমাত্র মেকানাইজড ব্রিগেড। সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে এই অগ্রযাত্রার একজন অগ্রজ সেনানী হিসেবে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি এবং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীর আধুনিকয়ন ও উৎকর্ষতা সাধনে সর্বদা পৃষ্ঠপোষকতা, অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য এবং সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে আমার ওপর আস্থা এবং সার্বিক অগ্রযাত্রায় আমাকে অংশীদার করার জন্য আপনার অবদান সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি এবং আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি’-যোগ করেন সেনাপ্রধান।

পরে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সাভার সেনানিবাসের সিএমপি সেন্টার এন্ড স্কুলে অনুষ্ঠিত সিএমপি বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন এবং কোরটির অধিনায়কদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।

কালের আলো/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email