র্যাব দেশের মানুষের আস্থা ও নির্ভরশীলতার জায়গা করে নিয়েছে : ডিজি
প্রকাশিতঃ 12:52 pm | September 28, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
র্যাব দেশের মানুষের আস্থা ও নির্ভরশীলতার জায়গা করে নিয়েছে জানিয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, এটা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মহাপরিচালকের বিদায়ী মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গত বৃহস্পতিবার চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি পুলিশপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এর আগে ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল র্যাবের ডিজি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পান।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন অর্জন ও সফলতা তুলে ধরেন র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা আইনানুগ প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে দায়িত্ব পালন করি। অপরাধীরা যে কত কুখ্যাত, তাদের সামনে যা আসে, সব বাধা উপেক্ষা করে তারা অপরাধ সংঘটিত করতে চায়। আমরা যখন তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াই, তখন অপরাধীরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে অপরাধ সংঘটিত করতে চায়।
তিনি বলেন, আমার দুই বছর দায়িত্ব পালনকালে মাদক চোরচালান বন্ধে অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। এই সময়ে ৩৬ হাজার মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তিন হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ মাদক জব্দ করা হয়েছে।’
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ তা বৈশ্বিক যুদ্ধ। সারা বিশ্বিই মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। কারাগারে থাকা বন্দিদের মধ্যে মাদক মামলার আসামিই বেশি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। মাদকের সমস্যা একটি সামাজিক সমস্যা। সবাইকেই দায়িত্বশীল হতে হবে।
তিনি বলেন, আমার সন্তানের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া আমার দায়িত্ব, আমাদের শিক্ষকের দায়িত্ব রয়েছে, জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব রয়েছে। আমরা সেভাবে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো। মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে নেই, এটা বলার সুযোগ নেই। আমরা যখনই খবর পাই, তখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
নবনিযুক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, মাদক অভিযানের সময়ে আমরা আইন অনুযায় দায়িত্ব পালন করি। আইনের বাইরে বিন্দুমাত্র কোনও কিছু প্রয়োগ করি না। প্রচলিত আইন অনুযায় ব্যবস্থা নিই। কোনও ব্যক্তি একটু ধাক্কা দিলো, আর আমাদের সদস্যরা গুলি করে দেবে, বিষয়টা এমন না। যখন যেভাবে যা প্রয়োজন, সেভাবেই প্রচলিত আইনের মধ্যে থেকে কাজ করি।
ইদানিং বন্দুকযুদ্ধ কমে গেছে। তাহলে র্যাবের ওপর হামলা কমে গেছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে র্যাব ডিজি বলেন, ‘যেখানে যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই আমরা শক্তি প্রয়োগ করি। একটা লোক দৌড় দিলো, ধাক্কা দিলো আর গুলি করে দিতে হবে? সিচুয়েশন যে ডিমান্ড করে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আমাদের দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’
তিনি বলেন, ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই একটার সঙ্গে আরেকটা জড়িত। এটা বন্ধে আমরা কাজ করছি। মাদক নিয়ন্ত্রণে নেই এটা বলার অবকাশ নেই। যেখানেই খবর পাচ্ছি সেখানেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা যদি মাদকের বিরুদ্ধে ব্যর্থই হতাম তাহলে কারাগারে এতো মাদকের আসামি থাকতো না। আমরা সবাই সোচ্চার হলে শিগগিরই মাদকমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা দেখতে পাবো বলে বিশ্বাস করি।
র্যাব ডিজি বলেন, ‘আমি মনে করি, অতীতে যেমন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পেরেছি, তেমনি অভিজ্ঞতার আলোকে আগামীতেও আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। মহামারির সময়টিতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় করোনা আক্রান্ত র্যাব সদস্যদের ডাটাবেজ ব্যবস্থাপনা, সুচিকিৎসা ও তদারকির জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন চালু করা হয়। পর্যাপ্ত সুবিধা সম্মিলিত হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন, পর্যাপ্ত আইসিইউ স্থাপন, ভেন্টিলেটর, সার্বক্ষণিক নার্স ও চিকিৎসকদের সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এই জন্যেই অর্ধেকের বেশি র্যাব সদস্য করোনা আক্রান্ত হলেও ক্যাজুয়াল্টির সংখ্যা ছিল খুবই অল্প। এছাড়াও, মহামারীর সময়টিতে র্যাব ফোর্সেস দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের সদস্যরা করোনা আক্রান্ত সদস্যকে ছেড়ে চলে গেলেও র্যাব সদস্যরা পাশে দাঁড়িয়ে সেবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদেরকে র্যাবের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নিয়ে এসে রাজধানীতে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে র্যাব। করোনা পীড়িত সময়ে অচিন্তনীয় ঘরবন্দি অবরুদ্ধতার সময়টিতে সামাজিক দূরত্ব, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের মনোভাবের মাধ্যমেই অতীতের ক্ষিপ্রতায় উগ্র জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন, মাদকের বিস্তার নিরসন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করে র্যাব।’
র্যাবের বিদায়ী ডিজি বলেন, ‘করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্য খাতে নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতিতে ভীতিকর এক পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাস্থ্য খাতের অপরাধীদের দুর্গে হানা দিয়েছিল র্যাব। মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স, করোনা পরীক্ষায় ভুয়া সনদ প্রদান, অর্থের বিনিময়ে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা এবং করোনা চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রতারক সাহেদকে গ্রেফতার ছিল করোনাকালীন সময়ে র্যাবের গুরুত্বপূর্ণ এক অর্জন। এছাড়াও করোনাসহ বিভিন্ন রোগের টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্ট জব্দ ও প্রতারক চক্রের মূলহোতাদের গ্রেফতার করে র্যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ নিরসনে বর্তমানে বিশ্বের বুকে রোল মডেল। র্যাব ফোর্সেস প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জঙ্গিবাদের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির আলোকে কাজ করে যাচ্ছে। র্যাব ফোর্সেস এর দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান পরিচালনা করার পাশাপাশি ভুল বুঝতে পারা জঙ্গিদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। দায়িত্বকালীন প্রায় ৮ শতাধিক বিভিন্ন সংগঠনের জঙ্গিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে র্যাব। সাইবার জগতে জঙ্গিদের কার্যক্রম রোধে সার্বক্ষণিক সাইবার নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’
‘সাম্প্রতিক সময়ে, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পলাতক আসামি জঙ্গি ইকবাল, রমনা বটমূলে বোমা হামলার মৃত্যুদন্ড ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মুফতি শফিকুর রহমান, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা ও রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি সংগঠন হুজিবি’র প্রতিষ্ঠাতা আমির মুফতি আব্দুল হাইসহ বিভিন্ন নৃশংস মামলার আসামিদের গ্রেফতারের আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র্যাব। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানগণের বাংলাদেশ সফরকালীন সময়ে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা শুরু করে স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র। চিহ্নিত সেই চক্রটির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও ভাংচুরের ঘটনায় জড়িত প্রায় অর্ধশতাধিক অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে নানামুখী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে র্যাব ফোর্সেস।’
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এলিট ফোর্সেস র্যাবকে সময়োপযোগী আধুনিক বাহিনীতে পরিণত করার লক্ষে দায়িত্বকালীন সময়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সুবিধার আওতায় এনে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছি। অতি দ্রুত অপরাধীদের পরিচয় শনাক্ত করে বিগত বছরে উন্নত প্রযুক্তির সংযোজন করার মাধ্যমে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর অপরাধের রহস্য দ্রুত সময়ে উদঘাটনপূর্বক অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। ক্রাইম সিন অ্যানালাইসিস দক্ষতা বৃদ্ধিতে র্যাব ফরেনসিক টিমের আধুনিকায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়াও সাইবার জগতে অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়াতে সার্বক্ষণিক র্যাবের সাইবার নজরদারি বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
কালের আলো/ডিএস/এমএম