ফখরুল নিজে কাঁদলেন, অন্যদেরও কাঁদালেন

প্রকাশিতঃ 5:44 pm | November 26, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক,কালের আলোঃ
গুলশালে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কাঁদলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এই প্রথম নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি, এ পর্যন্ত বলেন কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এ সময় গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনস্থলে থাকা দলটির অন্য নেতারাও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। কাঁদতে থাকায় প্রায় ২ মিনিট তিনি কোনো কথা বলতে পারেননি তিনি। এরপর আবার সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বিএনপির এই নেতা।

বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মনোনয়নের চিঠি বিতরণের মাধ্যমে শুরু হয়েছে দলটির চূড়ান্ত মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়নের চিঠি বিতরণ কার্যক্রম। আজ সোমবার বিকেল তিনটায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এ চিঠি বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্তদের চিঠি বিতরণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিচ্ছিলেন মির্জা ফখরুল। তবে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তিনি কেন বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে সে সম্পর্কে বক্তব্য দেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলেও আবার জানান তিনি। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো আলামত তিনি দেখছেন না বলেও জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি দলীয় চেয়ারপারসনকে কারাগারে রেখে তাকে ছাড়া এই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো দাবি নির্বাচন কমিশন মানেনি উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, তারপরেও শুধু জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ে তারা নির্বাচনে যাচ্ছেন। এই কমিশনের অধীনে নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে সে নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনারা জানেন যে আমরা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সরকারকে দাবি দিয়েছিলাম, সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়েছি কিন্তু তারা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। উপরোন্ত তারা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করেছেন। আমরা বারবার বলেছি কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যা করা প্রয়োজন তা তারা করতে পারেননি। প্রশাসনে রদবদলের কথা বলেছিলাম। তাও হয়নি। ইভিএম বন্ধ রাখতে বলেছিলাম। সেটাও করা হচ্ছে না। প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা প্রকাশ্যেই বলেছেন যে, পুলিশ যা করছে তা তার নির্দেশেই করছে। তার মানে এখন সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের যে গ্রেফতার করা হচ্ছে তা তার নির্দেশেই করা হচ্ছে।

প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা অর্তাৎ সিইসির বোনের ছেলে পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা হওয়ার পর সিইসি দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। সেখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এর মাধ্যমে তার রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, কারণ সিইসি নিজেই নিরপেক্ষ নন।

নির্বাচন কতটুকু নিরপেক্ষ হবে সে বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের সন্দেহ দূর করতে সিইসি একটুও কাজ করেননি বলে অভিযোগ বিএনপির এই শীর্ষ নেতার। তিনি বলেন, তবু আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে এসেছি। এখন নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করবে যে তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চান কি না, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান কি না, জনগণ যে দায়িত্ব দিয়েছে তা পালন করতে চান কি না।

মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে, গণজাগরণ সৃষ্টি করতে, সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করাই ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রধান লক্ষ্য।

প্রসঙ্গত, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নিহত হওয়ার পর ১৯৮২ সালে রাজনীতিতে আসেন খালেদা জিয়া। ১৯৮৬ সালে তার নেতৃত্বে বিএনপি প্রথম জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন। এরপর ১৯৯১ ও ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। আর খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দী হন খালেদা জিয়া। এখনো তিনি জেলে আছেন। এই নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ অনেকটাই অনিশ্চিত।

খালেদা জিয়া তিনটি আসনে দলের প্রার্থী হচ্ছেন বলে বিএনপি থেকে জানানো হয়েছে। এগুলো হলো ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭।

কালের আলো/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email