উদারতার নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 6:06 pm | July 28, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

ঘটনাটি গত সোমবারের (২৫ জুলাই)। সেদিন রাজধানীর দক্ষিণখানের চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায় এসএম মোজাম্মেল হক শিক্ষা কমপ্লেক্সের মাঠে থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি এমপি। 

এই অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল সাজানো এবং ব্যানার পোস্টার টানানোর কারণে ওই দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নজরে আসে শিক্ষামন্ত্রীরও। আর চুপ থাকতে পারেননি। বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে অনুষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেওয়ার ঘটনায় ক্ষমা চেয়ে বিরল এক দৃষ্টান্তই স্থাপন করলেন মন্ত্রী। 

বুধবার (২৭ জুলাই) রাতে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু অলিম্পিয়াড ও শিক্ষাঙ্গন ডটকমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি এমপি নিজে থেকেই এই বিষয়ে কথা বলেন। আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের কারণে শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষতি হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি সত্যিই ভীষণভাবে লজ্জিত। আশা করি, আপনারা ক্ষমা করবেন।’ পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের অনুষ্ঠান না করার আহ্বান জানান। 

‘বিব্রত’ শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়াকে অনেকেই তার রাজনৈতিক উদারতা হিসেবেই দেখছেন। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই শিক্ষামন্ত্রীর প্রশংসায় মজেছেন। এক বাক্যে প্রায় সবাই বলছেন, শিক্ষামন্ত্রীর বার্তা দেশের সব রাজনীতিকের জন্যই অনুকরণীয় উদাহরণ। শিক্ষামন্ত্রী সবাইকে পথ দেখিয়েছেন। সবার কাছ থেকেই এমন দায়িত্বশীল আচরণ কাম্য। 

বঙ্গবন্ধু অলিম্পিয়াড ও শিক্ষাঙ্গন ডটকমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আমরা বলেছি, আমাদের খেলার মাঠের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, এখন খেলার মাঠ বলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে মাঠ সেগুলো। আমরা সামাজিক, রাজনৈতিক, সংস্কৃতিক, ধর্মীয়- যেকোনও অনুষ্ঠান করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ ব্যবহার করি। আমাদের একটা নির্দেশনা আছে, শিক্ষা সংক্রান্ত অনুষ্ঠান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে করেন। ‌আমি আসলে খুবই বিব্রত। 

আমি গত পরশু ঢাকায় একটি রাজনৈতিক সমাবেশে গেছি। আমি চলে আসার পর জেনেছি যে, আশপাশে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওই মাঠ ব্যবহার করে। সেখানে রাজনৈতিক সমাবেশটি হয়েছে। পরে আমি খোঁজ নিলে আমাকে বলা হলো, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চলেছে। যদিও বলা হয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম চলেছে, আসলে কতটা চলেছে সেটা আমি জানি না। ওখানে যখন প্যান্ডেল করা হয়েছে তখন শিক্ষা কার্যক্রম একেবারে নির্বিঘ্নে হয়েছে এটা মনে করার কোনও কারণ নেই। সে কারণে আমি সত্যিই ভীষণভাবে লজ্জিত।’

শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষতি করে প্রতিষ্ঠানের মাঠে সমাবেশ না করার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছি। সেখানে বেশ কয়েকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে সেই জনসভাটি হয়েছে। আমি জানি না ওখানে বিকল্প কোনও মাঠ ছিল কিনা। যদি না থাকে যারা এ ধরনের অনুষ্ঠান করেন সেটি কোনও রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক বা অন্য কোনও অনুষ্ঠান হোক, যদি কোনও বিকল্প থাকে বিকল্প জায়গায় করা, আর যদি বিকল্প না থাকে তাহলে যেন শিক্ষা কার্যক্রম কোনোভাবে ব্যাহত না হয় অথবা ছুটির দিনে করা হয়।’

দীপু মনি বলেন, ‘সবার কাছে আহ্বান করবো, যদি এ ধরনের অনুষ্ঠান করা হয়, তাহলে যেন ছুটির দিনে করা হয় এবং ওই প্রাঙ্গণ নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার নিশ্চয়তা বিধান করেই যেন করা হয়।’ 

শিক্ষামন্ত্রীর এই দৃষ্টান্ত স্থাপনের ঘটনায় সোশ্যাল হ্যান্ডেলে চলছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ বলছেন, ডা.দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রী বলেই এমনটি সম্ভব হয়েছে। তিনি সব সময় সাদাকে সাদা বলতে পারেন। নৈতিক দৃঢ়তায় সত্যিই অনন্য আমাদের শিক্ষামন্ত্রী। 

কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন এমন- রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দৃষ্টান্ত খুব একটি নেই বললেই চলে। আর এক্ষেত্রেই শিক্ষামন্ত্রী ব্যতিক্রম। অনুকরণীয় উদাহরণ। তার মমতাময়ী মা একজন শিক্ষক ছিলেন। একজন শিক্ষকের সন্তানই পারবেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমূল বদলে দিতে। 

আরও কিছু মন্তব্য উল্লেখ করার মতো। একজন লিখেছেন, শিক্ষামন্ত্রী অন্যান্য রাজনীতিকদের জন্যও মোটা দাগে একটি বিষয়কে সামনে এনেছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য ভবিষ্যতে আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে না। শিক্ষামন্ত্রীর এই বার্তা সবার জন্যই অনুকরণীয়। 

কালের আলো/এএএমকে/এনএল

Print Friendly, PDF & Email