মাস্কে যত অনীহা, উপেক্ষিত নির্দেশনা
প্রকাশিতঃ 10:11 am | June 30, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড় এলাকা। বুধবার (২৯ জুন) বিকেল সাড়ে ৫ টা। দীর্ঘ যানজটে মোটর সাইকেলের দীর্ঘ সারি। এখানেই আলাপ তরুণ জুলফিকার ইসলামের (৩২) সঙ্গে। মাস্ক নেই তার মুখে।
মাস্ক না পরার বিষয়ে জানতে চাইলে খানিকটা হেসে জবাব-‘আসলে মাস্ক ভুল করে বাসায় ফেলে এসেছি। সামনের কোন দোকান থেকে কিনে নিবো।’
একটু আগ বাড়িয়েই থমকে দাঁড়ালেন পাশ দিয়ে হেঁটে চলা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে মোহাব্বত হোসেন (৪৫)। গজর গজর ভঙ্গিতে উল্টো প্রশ্ন করলেন, ‘দুই ডোজ টিকা নিয়েছি। মাস্ক না থাকলে কী এমন ক্ষতি?’
করোনার টিকা নেওয়ার পরে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় সংক্রমণ বাড়ছে লাফিয়ে। সরকারও বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে নির্দেশনা দিয়েছে। এসব প্রসঙ্গ সামনে আনতেই ফের হনহন করে ছুট দিলেন।
শুধু জুলফিকার বা মোহাব্বত হোসেন নয়- মাস্কে অনীহার এই প্রবণতা জেঁকে বসেছে সব বয়সী অনেকের মাঝেই। আবার কারো-কারো সঙ্গে মাস্ক থাকলেও না পরে সেটি পকেটে, হাতে বা গলায় ঝুলিয়ে রাখছেন।
বুধবার (২৯ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচা, মগবাজার, কাকরাইল, পল্টন, গুলিস্তান, প্রেসক্লাব, সুপ্রিম কোর্টসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরেই এমন অভিন্ন চিত্রের দেখা মিলেছে।
দেখা গেছে, সাধারণ মানুষ মাস্ক ছাড়াই দেদারসে ঘুরছে। দোকানপাট, বাজার, পরিবহণ বা গণপরিবহন, শপিংমলেও মাস্ক পরার বালাই নেই।
অথচ টানা দুই সপ্তাহ করোনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে। নিশ্চিত হয়েছে করোনার চতুর্থ ঢেউ। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই কারও।

রাজধানীর সেগুন বাগিচা এলাকার আফতাব ফাস্ট ফুডের দোকানি রাকিব হোসেন (২৪) বলেন, ‘সরকারি
আদেশের খবর জানি না। তবে আদেশ হলে অবশ্যই পড়বো।’
প্রেসক্লাবের সামনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দেলোয়ারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘মাস্ক আমি সব সময় পরি। তবে আজকে ফেলে আসছি। এখন কিনে পরতেছি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২১০১ জনের, এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৭৯ জন, মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। ক্রমশ সংক্রমণ ও শনাক্তের হার বাড়ছে। সংক্রমণের উর্ধ্বগতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জোরদার চলছে টিকাদান কার্যক্রম। এরইমধ্যে দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ পূর্ণ ডোজের আওতায় চলে আসবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
টিকার কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমুক আর না কমুক মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই বলে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সংক্রমণ বেড়ে চলার মধ্যে এই ভাইরাসের উর্ধ্বগতি রুখতে একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি।
সম্প্রতি এই কমিটির দেওয়া পরামর্শগুলোর মধ্যে রয়েছে—স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণকে পুনরায় উদ্বুদ্ধ করতে সব ধরনের গণমাধ্যমে অনুরোধ জানানো, সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগ করা; সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম বর্জন করা; ধর্মীয় প্রার্থনার স্থানে (মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) মাস্ক পরা।
জ্বর, সর্দি, কাশি হলেও অনেকে করোনা পরীক্ষা করছেন না। এ কারণে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। সংক্রমণও বাড়ছে এ কারণে। কারো উপসর্গ দেখা দিলে এবং সংক্রমিত মানুষের সংস্পর্শে গেলে তাদের করোনা পরীক্ষা করার জন্য অনুরোধ করার পরামর্শও দিয়েছে টেকনিক্যাল কমিটি।

দেশ করোনার চতুর্থ ঢেউয়ে ঢুকলেও সাধারণের মধ্যে এই ভাইরাসটি নিয়ে সচেতনতার অভাব স্পষ্ট। আর সরকারও আগের তিন ঢেউয়ের মতো করোনা নিয়ে তেমন বিধিনিষেধ দেয়নি। যদিও ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি আবার ঘোষণা করা হয়েছে, তবে এর বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে।
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় দোকান, শপিংমল, বাজার, ক্রেতা-বিক্রেতা, হোটেল রেস্টুরেন্টে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। গত মঙ্গলবার (২৮ জুন) মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে ৬ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনায় বলা হয়, সাম্প্রতিককালে সারাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের হার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ও জনসাধারণের মধ্যে মাস্ক পরিধান এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে যথেষ্ট শৈথিল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে মর্মে সরকারের উচ্চ মহলে আলোচনা হচ্ছে। কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ১৪ জুনের সভায় গৃহিত সুপারিশ প্রতিপালনের জন্য এবং কোভিড প্রতিরোধকল্পে নির্দেশনা বাস্তবায়নের অনুরোধ করা হলো।
তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের তীব্রতা কম হলেও, দ্রুত এতে আক্রান্তের হার বাড়ছে। ওমিক্রনের এই শাখা ভ্যারিয়ন্ট থেকে মুক্ত থাকতে সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা ও জনাসমাগম এড়িয়ে চলারও পরামর্শ তাদের।
কালের আলো/এসবি/এমএম