তিন বছরেই সড়ক অবকাঠামোয় বিপ্লব, বদলাতে শুরু করেছে ভাগ্য

প্রকাশিতঃ 10:36 am | June 28, 2022

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

৯০.১৭৩ বর্গকিলোমিটারের ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে প্রায় ৬৯ বর্গকিলোমিটারের নতুন ১২ টি ওয়ার্ড। আদতে পুরোপুরি গ্রামীণ আবহ। সড়ক বা ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। ছিল না সড়ক বাতি, নূন্যতম নাগরিক সুবিধাও। শুষ্ক মৌসুম তো বটেই বর্ষায় অবস্থা আরও ভয়াবহ। চর ঈশ্বরদিয়া, চর নীলক্ষিয়া, সিরতাসহ বিভিন্ন এলাকা চরাঞ্চল হওয়ায় সড়ক অবকাঠামোর বেশ নাজুক। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যন্ত্রণা পায়ে পায়ে।

নাগরিক ভোগান্তি কমিয়ে এসব ওয়ার্ডে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতেই মনোনিবেশ করেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। হতশ্রী চেহারা কাটিয়ে কাঁচা সড়কের বিপরীতে ১৮১ কোটি টাকা খরচায় নির্মাণ করা হচ্ছে আরসিসি বা বিসি সড়ক।

সিটি করপোরেশনের জোর তৎপরতায় পাল্টে যেতে শুরু করেছে নতুন এই ওয়ার্ডসমূহ। ইতোমধ্যেই এসব ওয়ার্ডে ৭৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। শক্তিশালী সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠার মাধ্যমে এখানে বদলে যেতে শুরু করেছে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের ভাগ্যও।

শুধু তাই নয়, পুরাতন ২১ টি ওয়ার্ডেও সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে নবদিগন্ত সূচিত হয়েছে। যানজট নিরসন ও জনভোগান্তি নিরসনে নগরীর স্টেশনরোড, বড়বাজার, কাশররোড, বাউন্ডারি রোড, বাঘমারা রেলক্রসিং রোড, মেহগনি রোড, আবুল মনসুর সড়কসহ নগরের ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কপ্রস্তকরণ কাজ শেষ হয়েছে। গত তিন বছরে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৮০ কিলোমিটার সড়ক।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন ১২ টি ওয়ার্ডে সড়ক অবকাঠামোকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন মেয়র মো.ইকরামুল হক টিটু। অনুন্নত ও চলাচল অনুপযোগী এসব ওয়ার্ডে শক্তিশালী সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে নগরজুড়ে দৃশ্যমান উন্নয়ন নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিজের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের পথেও অগ্রসর হয়েছেন। নানামুখী অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে তিনি বদলে দিতে চান ওয়ার্ডবাসীদের জীবনমান।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২১.৭৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছিল অধুনালুপ্ত ময়মনসিংহ পৌরসভা। এই পৌরসভার ২১ টি ওয়ার্ডের সঙ্গে সদর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ দু’টি ইউনিয়ন আকুয়া ও বয়ড়ার পুরো অংশ এবং সদর উপজেলার চর ঈশ্বরদিয়া, খাগডহর, সিরতা, ভাবখালী, দাপুনিয়া, চরনিলক্ষীয়া ইউনিয়ন নিয়ে গড়ে উঠে নতুন ১২ টি ওয়ার্ড।

মোট ৩৩ টি ওয়ার্ড নিয়ে দেশের ১২ তম সিটি করপোরেশন হিসেবে যাত্রা শুরু করে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। বর্তমানে করপোরেশনের মোট আয়তন ৯০.১৭৩ বর্গকিলোমিটার। মোট জনসংখ্যা ৮ লক্ষ।

সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২০ জুন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। পরের বছরের ডিসেম্বরে একনেকে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের অবকাঠামো উন্নয়ন ও নাগরিক সেবার উন্নয়নে ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় ১৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ওয়ার্ডসমূহে আরসিসি বা বিসি সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, তিন বছর বয়সী ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নতুন ওয়ার্ডগুলোর অনেক এলাকায় পায়ে হেঁটে চলাচলেরও কোন জো ছিল না। বর্ষায় কাঁদা বা হাঁটুপানি এ নিয়েই ছিল ওয়ার্ড বাসিন্দাদের যাপিত জীবন। মেঠোপথে চলতে গিয়ে হতে হয়েছে নাজেহাল। কিন্তু এখন ক্রমশ পাল্টে যেতে শুরু করেছে সেই চিত্র।

নতুন নতুন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা বলছেন, আধুনিক নগর গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন মেয়র ইকরামুল হক টিটু। তৈরি করা হচ্ছে নতুন নতুন সড়ক। প্রতিটি সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হবে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। মিলতে শুরু করবে সিটি করপোরেশনের সুফল।

একই সূত্র বলছে, সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি সুপেয় পানির সুবিধা নিশ্চিত করতেও নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে সিটি করপোরেশন। নাগরিকদের সুপেয় পানির জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৫ টি গভীর নলকূপ। পানি সরবরাহে পুরনো লাইনের সাথে নতুন যুক্ত করা হয়েছে ২৪ কিলোমিটার পাইপলাইন।

সূত্র জানায়, সড়ক নির্মাণ কাজে গুণগত মান ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু। বিভিন্ন সময়ে তিনি সরেজমিনে উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি উন্নয়নকাজের মান দেখার পাশাপাশি ও প্রকৌশলীদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। নির্মাণ কাজে অনিয়মের সংস্কৃতিকে চির বিদায় করতে মেয়র ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছেন।

জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.ইকরামুল হক টিটু কালের আলো’কে বলেন, ‘দৃশ্যমান পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন ১২ টি ওয়ার্ডে নতুন যাত্রার সূচনা হয়েছে। করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। উন্নত এবং সমৃদ্ধ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন গড়ে তুলতে হলে প্রথম প্রয়োজন একটি উন্নত সড়ক যোগাযোগ। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই নতুন ওয়ার্ডসমূহে সড়ক যোগাযোগে একটি মাইলফলক তৈরি হবে বলেও আমি মনে করি।’

কালের আলো/এসবি/এমএম

Print Friendly, PDF & Email