দেশের অগ্রযাত্রা বজায় রাখার দৃঢ় প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিতঃ 6:34 pm | November 21, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে দেশের অগ্রযাত্রা বজায় রাখার দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সামনে নির্বাচন, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিলে আবারও তাদের সেবায় ফিরে আসবো। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবো।

আমরা দেশকে গড়ে তুলতে চাই, এ দেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ। যতই অন্ধকার হোক-তা পেছনে পেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বুধবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ থেকে আবৃত্তি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলে যাব তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’ আগামীর শিশুর জন্য এ দেশ হবে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত ও সমৃদ্ধ একটি বাসযোগ্য দেশ।

জাতির পিতার ডাকে ‘যার যা কিছু আছে তা নিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিলো বাংলার মানুষ। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এই সময়ে আমাদের সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। পাশাপাশি প্রতিটি প্রতিষ্ঠান গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি, বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

‘তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে সশস্ত্র বাহিনীকে যুগোপযোগী ও আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। পঁচাত্তরের কালো রাত না এলে বহু আগেই এদেশ বিশ্ব দরবারে উন্নত সমৃদ্ধ হিসেবে জায়গা করে নিতো।’

শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর দেশের কোনো উন্নয়ন হয়নি। একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখন নানা উদ্যোগ নিই। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান-সংস্থাকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে কাজ করি।

‘বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, সশস্ত্র বাহিনী স্বাধীনতার প্রতীক; যে বাহিনী গড়ে ওঠেছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চলাকালীন সময়ে। একদিকে যেমন মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছে তেমনি সকল বাহিনী একত্রিত করে এই সশস্ত্র বাহিনী একুশে নভেম্বর গড়ে তোলা হয় সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য। যে যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করেছি।’

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে যুগোপযুগী করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিই। পাঁচবছর ক্ষমতায় ছিলাম কতটুকু উন্নয়ন করেছি সেটা আপনারা উপলব্ধি করতে পারেন। এরপর থেকে আমরা আমাদের ইশতেহার ‘দিন বদলের সনদ’ অনুযায়ী কাজ করেছি- এটা আমরা দাবি করতে পারি।

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলবার ঘোষণা দিয়েছিলোম, সেভাবে আমরা তা করেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু দৃশ্যমান। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবে, মহাকাশ জয় করেছি।’

দেশের মানুষের কাছে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কতটুকু উন্নয়ন করেছি তা আপনারা অবশ্যই দেখছেন। আগে বাংলাদেশ ছিলো প্রাকৃতিক দুযোগের দেশ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ২০০৮ সালে সরকার গঠনের পর আমরা উন্নত দেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করি।

‘২০১৪ সালে নির্বাচনে অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে জ্বালাও- পোড়াওয়ের মধ্য দিয়ে আবারও সরকার গঠন করি। এরপর মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য নানা পরিকল্পনা নিই। মানুষের জীবনমান উন্নত করতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি থেকে শুরু করে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে আমরা তা বাস্তবায়ন করেছি।’

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া আমার মানবিক কর্তব্য ও দায়িত্ব। আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি। তাদের (রোহিঙ্গা) খাদ্য, বাসস্থান থেকে শুরু করে সব কিছুতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র‌্যাব, নৌবাহিনী, বিজিবিসহ অন্যান্য বাহিনী কাজ করেছে। অন্যান্য সংস্থাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছি।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি তাদের নিরাপদে নিজ দেশে ফেরাতে মিয়ানমারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছি। অবশেষে তারা স্বীকার করে নিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। ফলে কমংসংস্থান বেড়েছে। রফতানি যেনো বাড়ে সেজন্যও কাজ করেছি। দারিদ্র্যসীমা নামিয়ে আনা হয়েছে। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদসহ সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

‘কেউই এই গতিকে রুখতে পারবে না, ইনশাল্লাহ’
‘আমরা অবশ্যই লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব এবং অনেক ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে আমরা আজকের অবস্থানে এসেছি এবং কেউই এই গতিকে রুখতে পারবে না, ইনশাল্লাহ’ এমন কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনা এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ আমার কাছে যতটা না মূল্যবান তার চাইতে এইটা একটা বড় সুযোগ জনকল্যাণের এবং জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের। আমি প্রধানমন্ত্রীত্বকে জনগণের সেবা করার সুযোগ হিসেবে দেখি।

এদিন ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্রবাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার-পরিজন এবং মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্রবাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে সেনানিবাসের মাল্টি পারপাস কমপ্লেক্সে এই সংবর্ধনার আয়োজন করেন।

সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমদ এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর ১০১ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ৭জন বীরশ্রেষ্ঠের ঘনিষ্ট পরিবার-পরিজন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে এখন উন্নয়নের রোল মডেল এবং এটি একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। তিনি বলেন,‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল বলেই আজকে আমরা এই সম্মান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি এবং বিশ্বের বহু দেশ এখন বাংলাদেশকে অনুকরণ করতে চাইছে।’

শিখা অনির্বাণে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও তিন বাহিনীর প্রধানের পুস্পস্তবক অর্পণ
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।

এই সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে পৃথক পৃথকভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পুস্পস্তবক অর্পণকালে শহীদদের স্মরণে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে রক্ষিত পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

এর আগে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে এসে পৌঁছলে তাঁদেরকে স্বাগত জানান তিন বাহিনী প্রধান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার।

মুক্তিযুদ্ধে শাহাদত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মরণে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে সম্মিলিতভাবে শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।

তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাত
শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণের প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে যান। সেখানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এবং মহাপরিচালকরা। পরে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।

সাক্ষাত শেষে প্রধানমন্ত্রী আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্ধারিত সংখ্যক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা প্রদান করেন। তিনি তাদের হাতে সম্মানী চেক এবং উপহার তুলে দেন।

কালের আলো/এএ