নৌবাহিনীর সদস্যরা শান্তিরক্ষা মিশনে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করছে : নৌবাহিনী প্রধান

প্রকাশিতঃ 7:43 pm | May 28, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল বলেছেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিভিন্ন পদবীর পুরুষ ও নারী কর্মকর্তা এবং নাবিকগণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে স্টাফ অফিসার, মিলিটারি অবজারভার ও কন্টিনজেন্ট সদস্য হিসেবে উচ্চ পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলাবোধ, আনুগত্য এবং একনিষ্ঠতার সাথে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

রোববার (২৯ মে) আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।

নৌবাহিনী প্রধান বলেন, বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম এবং শান্তি অর্জনের দৃঢ় সংকল্পে, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশে ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২২ পালন করা হচ্ছে জেনে আমি অত্যান্ত আনন্দিত ও গর্বিত। আজকের এই মহান দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তাঁর বাংলায় দেয়া ভাষণে সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন। একইসাথে তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এ বিষয়ে দিনটিতে আমি স্বরণ করছি সকল ব্লু হেলমেট পরিহিত মৃত্যুঞ্জয়ী বীর শহীদদের যারা বিশ্বশান্তি, ঐক্য, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা রক্ষায় তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।

তিনি বলেন, বিশ্বশান্তি, ভ্রাতৃত্ব এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সর্বপ্রথম ১৯৯৩ সালে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তার যাত্রা শুরু করে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় প্রথমবারের মত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দুইটি যুদ্ধজাহাজ ২০১০ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন লেবানন (UNIFIL-United Nation Interim Force in Lebanon) এ যোগদান করে যা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের মর্যাদা এবং ভাবমুর্তিকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। বর্তমানে উক্ত মিশনে নৌবাহিনীর একটি উন্নততর প্রযুক্তির Corvette শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজ ‘বানৌজা সংগ্রাম’ মেরিটাইম টাস্ক ফোর্সের অংশ হিসেবে লেবানন ভূ-খন্ডে অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদের অনুপ্রবেশ রোধ, মেরিটাইম ইন্টারডিকশান অপারেশান, দূর্ঘটনা কবলিত জাহাজ উদ্ধার তৎপরতাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনাল কার্যক্রম পালনে ভূ-মধ্যসাগরে নিয়োজিত রয়েছে।

এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল বলেন, অপরদিকে, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর স্পেশাল ফোর্সের সমন্বয়ে গঠিত একটি নৌ কন্টিনজেন্ট গত ২০১৫ সাল থেকে দক্ষিণ সুদানে ‘ফোর্স মেরিন ইউনিট (FMU)’ হিসেবে মোতায়েন রয়েছে। কন্টিনজেন্টটি জাতিসংঘের নিত্য প্রয়োজনীয় জ্বালানী, খাদ্য-সামগ্রী, ঔষধ ও মানবিক সাহায্য বহনকারী বার্জসমূহের নদীপথে (White Nile) নিরাপদে চলাচলের নিশ্চয়তাসহ, স্থানীয় জনগণকে জরুরি চিকিৎসা প্রদান, মিশনে নিয়োজিত সামরিক এবং অসামরিক সদস্যদের প্রয়োজনীয় রসদ সামগ্রী পরিবহনে সহায়তার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

তিনি বলেন, এ মুহুর্তে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সৈন্য প্রেরণকারী দেশ হিসেবে জাতিসংঘের তালিকায় রয়েছে যা আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং বাংলাদেশ পুলিশ এর পেশাগত দক্ষতারই বহিঃপ্রকাশ। অধিকন্তু, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় যে কোন স্থানে মোতায়েনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ, কন্টিনজেন্ট এবং একটি বিশেষায়িত ইউনিটকে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রবর্তিত United Nations Peacekeeping Capabilities Readiness System (UNPCRS) এর আওতায় সর্বদা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এম শাহীন ইকবাল আরও বলেন, সারাবিশ্ব যখন প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসসহ মনুষ্য সৃষ্ট বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় নিয়োজিত তখনও আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং বাংলাদেশ পুলিশ এর সদস্যগণ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিজ জীবন বিপন্ন করে নিরলসভাবে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

এ সময় তিনি সকলের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল, সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য একটি যুদ্ধ, সংঘাত, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তামুক্ত পৃথিবীর নিশ্চিতকল্পে আমাদের এ দুর্বার পথচলা অব্যাহত থাকবে, এ হোক ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২২’ এ আমাদের নতুন প্রত্যয়।

আরও পড়ুন:

কালের আলো/এসবি/এমএম