২৮ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৭৪ শিশুর মৃত্যু
প্রকাশিতঃ 5:17 pm | May 19, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
সড়ক ও সড়ক পরিবহন খাতে অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্যের কারণে শিশুরা অস্বাভাবিক হারে দুর্ঘটনাকবলিত হচ্ছে। দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুহার উদ্বেগজনক পর্যায়ে। ২০২০ থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৬৭৪ শিশু নিহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে শিশু নিহতের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর ঘটনা বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছে ৩৩১ শিশু, যা মোট নিহতের ১৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। রাস্তা পারাপার ও রাস্তা ধরে হাঁটার সময় যানবাহনের চাপায় বা ধাক্কায় নিহত হয়েছে ১ হাজার ২৭ শিশু, যা মোট নিহতের ৬১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ট্রাক, পিকআপ, ট্রাক্টর, ড্রাম ট্রাক ইত্যাদি পণ্যবাহী যানবাহনের চালক ও সহকারী হিসেবে নিহত হয়েছে ৪৮ শিশু, অর্থাৎ ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছে ২৬৮ শিশু, অর্থাৎ ১৬ শতাংশ।
যাত্রী হিসেবে শিশু নিহতের যানবাহনভিত্তিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাস যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছে ৭২ শিশু (২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ) প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী হিসেবে ২৫ শিশু (৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ), থ্রি-হুইলার (সিএনজি, অটোরিকশা, ইজিবাইক ইত্যাদি) যাত্রী হিসেবে ১৮৩ শিশু (৫৫.২৮ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের (নসিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, টমটম ইত্যাদি) যাত্রী হিসেবে ৫১ শিশু (১৫.৪০%) নিহত হয়েছে।
বিভিন্ন যানবাহনের চাপা ধাক্কায় শিশু নিহতের ঘটনা পর্যবেক্ষণে অনুযায়ী,
১. পণ্যবাহী যানবাহনের (ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, ড্রামট্রাক, ট্রাক্টর, ট্রলি ইত্যাদি) চাপায় বা ধাক্কায় নিহত হয়েছে ২৫৮ শিশু (২৫.১২%)
২. বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সের চাপায় বা ধাক্কায় নিহত হয়েছে ১৪৩ শিশু (১৩.৯২%)
৩. থ্রি-হুইলারের (সিএনজি, অটৈারিকশা, ইজিবাইক ইত্যাদি) চাপায় বা ধাক্কায় নিহত হয়েছে ৩২১ শিশু (৩১.২৫%)
৪. স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের (নসিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, টমটম ইত্যাদি) চাপায় বা ধাক্কায় নিহত হয়েছে ২০৮ শিশু (২০.২৫%)
৫. বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত হয়েছে ৯৭ শিশু (৯.৪৪%)।
বিজ্ঞপ্তিতে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়:
১. দেশের সড়ক ও সড়ক পরিবহন শিশুবান্ধব না হওয়া;
২. সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে শিশুদের মধ্যে সচেতনতার অভাব;
৩. পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে শিশুদের পরামর্শ ও পশিক্ষণ না দেওয়া;
৪. অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক কর্তৃক যানবাহন চালানো;
৫. দুর্ঘটনায় আহত শিশুদের উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার সংকট;
৬. আহত শিশুদের চিকিৎসায় পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা।
এমন অনাকাঙ্ক্ষিত সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে সংগঠনটি কিছু সুপারিশমালাও তুলে ধরা হলো:
১. সড়ক ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা শিশুদের জন্য নিরাপদ করা;
২. নিরাপদে সড়ক ব্যবহার বিষয়ে পরিবারে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের সচেতন করা;
৩. অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক কর্তৃক যানবাহন চালানো বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
৪. জেলা পর্যায়ের হাসপাতালসমূহে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার সুযোগ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা;
৫. সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় বিশেষ সরকারি তহবিল গঠন করা;
৬. ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ বাস্তবায়ন করা।
এদিকে, সড়ক ও সড়ক পরিবহন খাতে অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্যের কারণে শিশুরা সড়ক দুর্ঘটনায় অস্বাভাবিক হারে হতাহত হচ্ছে বলেও জানায় সংগঠনটি।
কালের আলো/এমএইচ/এসবি