তেল নিয়ে ‘তেলেসমাতি’ করছে কারা?
প্রকাশিতঃ 10:21 am | May 12, 2022

কালের আলো রিপোর্ট:
ডিলারদের ‘দোষারোপ’ করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। বলছেন, দাম বাড়ানোর পরও ডিলারদের কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেল পাচ্ছেন না তাঁরা। আবার ডিলারদের অভিযোগের তীর কোম্পানির দিকে। সেই চিরায়ত উত্তর তাদের, সাপ্লাই নেই। একে অন্যের ঘাড়ে প্রত্যেকে দোষ চাপানোর ময়দানি এক লড়াইয়ে অবতীর্ণ বটে! কিন্তু বাজারের অবস্থা ভয়াবহ। সয়াবিন তেলের সঙ্কট কাটছে না কোন অবস্থাতেই।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মিলছে ‘সয়াবিনের খনি’। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সয়াবিন তেল মজুত করছেন ডিলার, খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা। তাদের আইনের আওতায়ও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সঙ্কট থেকে উত্তরণ মিলছে না। ফলত সবার মনে প্রশ্ন একটাই, তেল নিয়ে ‘তেলেসমাতি’ করছে কারা?
মঙ্গলবার (১০ মে) রাজধানীর মিরপুর, কল্যাণপুরসহ বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে এখনও সয়াবিন তেলের সঙ্কট রয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী ক্যাশ টাকা দিয়েও তেল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর মিরপুরে এলাকাভেদে রয়েছে একাধিক ডিলার। সরকারি নতুন দাম ঘোষণার পর ফ্রেশ, বসুন্ধরা, তীর, রূপচাঁদা ও পুষ্টি সয়াবিন তেলের ডিলার কিংবা ডিলারদের প্রতিনিধিরা অনেকটাই অমাবস্যার চাঁদ হয়ে উঠেছেন। চাহিদা অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। দু’-একটি দোকানে দু’-একটি প্রতিষ্ঠান তেল সরবরাহ করলেও নিমিষেই তা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
পাইকারি, খুচরা কিংবা বিভিন্ন এলাকার অলিগলির মুদি দোকানগুলোতেও সয়াবিন তেলের দেখা মিলছে না। সবার মুখে একই কথা, ডিলারের কাছ থেকে তেল পাচ্ছেন না তারা। কবে পাবেন তা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন। গ্রাহকদের অনেকেই তেল না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। নতুন নির্ধারিত দামে বাজারে তেল আসবে, সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে এবং ক্রেতারা নির্ধারিত দামে কিনতে পারবেন–এমন পরিস্থিতি দ্রুত আশা করছেন পাইকারি, খুচরা ও অলিগলির মুদি দোকানের ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর কল্যাণপুরের মুদি দোকানদার রিপন মিয়া বলেন, ‘আমার দোকানে সয়াবিন তেল নেই। ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি, তারা জানিয়েছেন, তাদের কাছে মজুত নেই।’
মিরপুর সিটি করপোরেশন মার্কেটের নববী এন্টারপ্রাইজের একজন কর্মচারী বলেন, মঙ্গলবার সকালের দিকে ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা জানিয়েছেন, তেল পেতে আরও দুই-তিন দিন লাগতে পারে। তারা নিজেরা অনেক বড় সিন্ডিকেট করে রেখেছেন। সে কারণেই তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সয়াবিন তেলের এক ডিলারের প্রতিনিধি বলেন, আমাদের কাছে আপাতত সয়াবিন তেলের মজুত নেই। নতুন মাল এলে আমরা বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করতে পারবো।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, দাম বাড়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা অনেক তেল মজুত করে রেখেছেন। এ কারণেই সংকট দেখা দিয়েছে।
ডিলারের এই প্রতিনিধি আরও বলেন, আমাদের কাছে যখনই তেল আসছে, তালিকা অনুযায়ী যারা আগে চাহিদা দিয়েছে, তাদের যতটুকু সম্ভব সাপ্লাই দিচ্ছি।
রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ জনগণের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, তারা সবসময়ই ভুক্তভোগী। দাম বাড়ার পরও সরবরাহ ঘাটতি দেখানো হচ্ছে। সিন্ডিকেট যে শক্তিশালী, এটাই প্রমাণ হয়েছে।
আহমেদ হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘সয়াবিন তেল বাদ দিয়ে সরিষার তেল খেতে হবে। মানুষ সরিষার তেল খেতে শুরু করলে আবার সেটার দাম বাড়াতে পাঁয়তারা শুরু করবে সিন্ডিকেটগুলো। আমরা মধ্যবিত্ত শ্রেণি, সবসময় কোনও না কোনও সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।’
সয়াবিন তেলের সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী মন্ত্রীও তাদের সঙ্গে পেরে উঠছেন না উল্লেখ করে জাহিদুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘তেল নেই, ভোগান্তিতে রয়েছি আমরা। একজন আরেকজনের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। এছাড়া আর কোনও কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। তাদের সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী, দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলোও কিছু করতে পারেনি এখন পর্যন্ত।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, তাহলে তেল নিয়ে তেলেসমাতি করছে কারা?
কালের আলো/এআরবি/এমএম