কথা রেখেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী; সাহসিকতার প্রশংসায় জাপার এমপিরা

প্রকাশিতঃ 11:57 pm | April 04, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে নদী দখলমুক্ত করার উচ্ছেদ অভিযানের সূচনা করেছিলেন ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি। ঢাকার চারপাশের চারটি নদী দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনায় প্রতিমন্ত্রীর অ্যাকশনের সময়কালে অনেকেই ভেবেছিলেন শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সম্ভবত তিনি অনড় থাকতে পারবেন না সিদ্ধান্তে। চাপের মুখে নিজেকে গুটিয়ে নিবেন উচ্ছেদ অভিযান থেকে।

কিন্তু প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী দেখিয়েছেন সাহস, নৈতিক দৃঢ়তা আর একান্ত ইচ্ছা-এই তিনের সমন্বয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জেও উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা নদী বন্দর এলাকার অধীনে ২১০.৫৭ একর ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর এলাকার অধীনে ৯০ একর তীর ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বরাবরই পুরো কৃতিত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সাহস ও অনুপ্রেরণায় ঢাকার চারপাশ দখলমুক্ত করেছি।’

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সম্মুখ সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে চমক তৈরি করায় এবার সেই প্রশংসা উচ্চারিত হয়েছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের কন্ঠেও। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রেখেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলটির চার সংসদ সদস্য। এ সময় সংসদ নেতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, সোমবার (৪ এপ্রিল) সংসদে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বিল পাসের সময় বিলটি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়। এ সময় জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা বক্তব্য রাখেন। বিলটির জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্ন বলেন, ‘নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বুড়িগঙ্গা নদীর দখলমুক্ত করেছেন সাহকিতার সঙ্গে।

বুড়িগঙ্গা নদীর যারা দখলদার ছিল; তাদের মধ্যে সরকারি দলেরও অনেকে ছিল। তিনি তাদের সবকিছু উপেক্ষা করে দখলমুক্ত করেছেন। অনেক অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলে সরকারের আয়ত্তে এনেছেন। আমরা শুধু সমালোচনাই করি না। ভালো কাজের জন্য ধন্যবাদ দেই। এজন্য বুড়িগঙ্গা দখলমুক্ত করতে তাকে ধন্যবাদ দেওয়া প্রয়োজন।’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বুড়িগঙ্গার দখল হয়ে যাওয়া ভূমি উদ্ধারে অত্যন্ত সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। সততার সাথে তিনি অনেক প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান করেছেন।’

জাতীয় পার্টিরই আরেকজন সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা দখল মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এটা আবার দখল হয়ে যেতে পারে। এতো কষ্ট করে দখলমুক্ত করা হয়েছে। এটা যেন আর দখল হতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এক সময় বুড়িগঙ্গায় নৌবিহার হতো, এটা যদি এই সরকারের সময় আবার চালু হয়, তাহলে ভালো হবে।’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘গত ১৩ বছরে ২৬টি ঈদ হয়েছে। আমরা যারা সড়ক ও বিমানে বাড়ি গিয়েছি কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়েছি এবং যানজটে পড়েছি। বিকল্প সমাধান অধিক সংখ্যক বিমানবন্দর ও নৌ চ্যানেল তৈরি করা। বর্তমান নৌপ্রতিমন্ত্রী অনেকগুলো নৌ চ্যানেল বের করেছেন। উদ্ভাবনী শক্তি দেখাচ্ছেন। তবে এটা আরও অনেকগুণ প্রয়োজন।’

এদিন জাতীয় সংসদে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বিলের ওপর আলোচনায় বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও। এ সময় তিনি বলেন, ‘সারা দেশে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে অল্প কিছুদিনের মধ্যে রাজধানীর পাশের বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌভ্রমণ করা যাবে।’

প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মৃতপ্রায় এই বন্দরকে সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়। কিন্তু পরে জামায়াত-বিএনপি এসে আবার পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত ১৩ বছরে এই বন্দরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মাসেতু হয়ে গেলে এই বন্দর অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিএনপির রুমিন ফারহানার ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগের কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘ঘুষ দুর্নীতির কি সমস্যা তা আপনারা হারে হারে টের পাচ্ছেন। আপনাদের একজন পলাতক এবং একজন জেলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এখন আর হাওয়া ভবন নাই, হাওয়া ভবন হাওয়া হয়ে গেছে। যারা চোর অন্যদেরকে তাদের বেশি বেশি করে চোর মনে হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগোযোগী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে এই বন্দরের উন্নয়ন ঘটছে।’

কালের আলো/এবি/এমএম