টিকায় পিছিয়ে ১৬ জেলা

প্রকাশিতঃ 10:35 am | January 17, 2022

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে টিকাদান শুরু হয়েছে প্রায় ১২ মাস। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র দেওয়া হচ্ছে টিকা। গণটিকার ব্যবস্থাও করেছে সরকার। তবে দেশের ১৮টি জেলা এখনো করোনাভাইরাসের টিকাদানে পিছিয়ে রয়েছে। এসব জেলার মানুষের টিকা নেয়ার হার এখনও ৩০ শতাংশের নিচে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত ভৌগোলিক অবস্থান ও সচেতনতার অভাবেই টিকাদান কার্যক্রমে জেলাগুলো পিছিয়ে রয়েছে।

সরকারের করোনাবিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের ১৮টি জেলায় টিকাদানের জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের ৫০ শতাংশের কম প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন। আর দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩০ শতাংশেরও কম। নদীভাঙনের শিকার, চর ও হাওরবেষ্টিত জেলাগুলোতেই মূলত টিকাদান কার্যক্রম পূর্ণ গতি পায়নি।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান কার্যক্রমে সব থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এ জেলায় ২৫ শতাংশ মানুষ দুই ডোজের আওতায় এসেছেন। ৩০ শতাংশের কম দ্বিতীয় ডোজ টিকার আওতায় আসা জেলাগুলোর মধ্যে সিলেট বিভাগের চারটি জেলাই রয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের তিনটি করে ছয়টি জেলা, রংপুরের চারটি, ঢাকার দুটি, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের একটি করে দুটি জেলা রয়েছে।

সুনামগঞ্জে ২৬ শতাংশ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, হবিগঞ্জ, গাইবান্ধা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার দ্বিতীয় ডোজ টিকার হার ২৭ শতাংশ। ২৮ শতাংশ টিকা পেয়েছেন ভোলা, মৌলভীবাজার, সিরাজগঞ্জ ও কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ। বাকি ছয়টি জেলায় এ টিকাদানের হার ২৯ শতাংশ। এসব জেলা হচ্ছে নেত্রকোনা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, সিলেট, বগুড়া ও দিনাজপুর।

হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কুড়িগ্রাম, ভোলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, টিকাদান কার্যক্রমে শুরুতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা যায়নি। পরবর্তী সময়ে তাদের মাধ্যমে টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে জনমানুষকে সচেতন করা হয়। নদীভাঙনের শিকার, চরাঞ্চল ও হাওরবেষ্টিত দুর্গম এসব জেলা স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের মতো টিকা গ্রহণেও পিছিয়ে রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেছেন, যেসব এলাকায় টিকাদানের হার কম সেখানে আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে। যারা টিকা নেননি তাদের তালিকা প্রস্তুত করে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। অনেকই প্রথম ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজ নিচ্ছেন না। যখন তালিকা তৈরি করা হবে তখন জানা যাবে কারা টিকা নেননি। তাদের বুঝিয়ে বলতে হবে। এলাকাভিত্তিক কার্যক্রমে গুরুত্ব দিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার পর্যন্ত দেশে ৮ কোটি ৬৯ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ ও তাদের মধ্যে ৫ কোটি ৬৪ লাখ জনকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হয়েছে। এতে নির্ধারিত জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশ মানুষ প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন। আর দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছেন ৪০ শতাংশ মানুষ।

এদিকে দেশে করোনা সংক্রমণের গতি ঊর্ধ্বমুখী। সর্বশেষ গতকাল আগের দিনের চেয়ে ৫১ শতাংশ রোগী শনাক্ত বেড়েছে। এতে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ফের পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেল। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরো ৫ হাজার ২২২ জনের শরীরের সংক্রমণের উপস্থিতি ধরা পড়ে। আর মারা গেছেন আটজন করোনা পজিটিভ রোগী।

গতকালের চেয়েও বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের ২৪ আগস্ট। সেদিন ৫ হাজার ২৪৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। গতকাল পাঁচ মাস পর নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ পর্যন্ত মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৭১১ এবং মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ১৪৪ জনের। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ও ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম মৃত্যু হয়েছে।

দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণপরিসরে করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ শুরু হয়। এরপর ৮ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা প্রয়োগ শুরু করা হয়। এ পর্যন্ত দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না, সিনোভ্যাক্স ও সিনোফার্মের টিকার প্রয়োগ চলছে।

কালের আলো/এসবি/এমএম

Print Friendly, PDF & Email