ফায়ারি-এ দক্ষতা একজন সৈনিকের মৌলিক গুণাবলীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ : সেনাপ্রধান
প্রকাশিতঃ 7:23 pm | December 02, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো :
ফায়ারি-এ দক্ষতা একজন সৈনিকের মৌলিক গুণাবলীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেছেন, সৈনিক জীবনের পেশাগত ক্ষেত্রে ফায়ারিং একটি মৌলিক ও অপরিহার্য বিষয়। প্রাচীনকাল থেকেই ফায়ারি-এর দক্ষতাকেই একজন সৈনিকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আর তাই সৈনিক জীবনের শুরু থেকেই ফায়ারিং-এ দক্ষতা অর্জন করার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
বুধবার (০১ ডিসেম্বর) মোমেনশাহী সেনানিবাসে আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ড’র আয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিএএস ট্রফি ফায়ারিং প্রতিযোগিতা-২০২১ এর পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
৫০ তম বিজয় মাসের প্রথম দিন, মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর মাহেন্দ্রক্ষণে সেনাপ্রধান নিজের বক্তব্যের শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন বাঙালি জাতির ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ।’

জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার উপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখে আমাকে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব প্রদানের দায়িত্ব প্রদান করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক আগ্রহ এবং প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভূতপূর্ব আধুনিকায়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।’
যেভাবে সিএএস ট্রফি ফায়ারিং প্রতিযোগিতার সূত্রপাত
সেনাপ্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সেনাসদস্যদের ফায়ারিং এর মানোন্নয়ন এবং আগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৮৯ সাল থেকে সকল ফিল্ড এবং স্ট্যাটিক ইউনিটসমূহকে অন্তর্ভূক্ত করে সিএএস ট্রফি ফায়ারিং প্রতিযোগিতা চালু হয়েছিল। প্রাথমিক সময়ে, ক্লাসিফিকেশন ফায়ারিং-এর ফলাফলের ভিত্তিতে এই ট্রফি প্রদান করা হতো। পরবর্তীতে ২০১৪ সাল হতে ক্লাসিফিকেশন ফায়ারিং পদ্ধতি অনুসরণ করে পৃথকভাবে সিএএস ট্রফি ফায়ারিং প্রতিযোগিতার সূত্রপাত হয়।’
তিনি বলেন, ‘২০২১ প্রশিক্ষণ বছর থেকেই প্রথম বারের মত সিএএস ট্রফি ফায়ারিং প্রতিযোগিতা দুইটি পর্বে পরিচালিত হয়েছে। প্রথম পর্বটি পরিচালিত হয়েছে ফর্মেশন এর দায়িত্বে যেখানে ফর্মেশনের অধীনস্থ সকল মেজর এবং মাইনর ইউনিট প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে।

পরবর্তীতে প্রথম পর্বে বিজয়ী দলসমূহ হেডকোয়ার্টার্স আর্টডক-এর নিবিড় তত্বাবধানে পুনরায় সিএএস ট্রফি ফায়ারিং প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় পর্বে অবতীর্ণ হয়েছে, যা চলতি বছরের ১৪ নভেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত হয়েছে। এই ফায়ারিং প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ টি পদাতিক ডিভিশন, লজিষ্টিকস্ এরিয়া এবং ৫ টি স্বতন্ত্র ব্রিগেড অর্থাৎ মোট ১৫টি ফর্মেশন হতে ২৯টি দল অংশগ্রহণ করেছে।
কৃতিত্বের জন্য তিন ফায়ারারকে মোবারকবাদ
সেনাপ্রধান বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতায় মেজর ইউনিট শ্রেনীতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এর ১ বীর দল চ্যাম্পিয়ন এবং ৫৫ পদাতিক ডিভিশন-এর ১৪ ইস্ট বেংগল দল রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। অপরদিকে, মাইনর ইউনিট হতে ৫৫ পদাতিক ডিভিশন-এর সদর দপ্তর ১০৫ পদাতিক ব্রিগেড দল চ্যাম্পিয়ন এবং ৩৩ পদাতিক ডিভিশন-এর ৩৯ ডিভ লোকেটিং ব্যাটারী দল রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।

আমি চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ উভয় ইউনিটকে জানাই আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন। প্রতিযোগিতায় ১ বীর-এর সৈনিক আব্দুল্লাহ শেখ শ্রেষ্ঠ ফায়ারার এবং ১৪ ইস্ট বেংগল-এর ল্যান্স কর্পোরাল মো: রবিউল ইসলাম ২য় শ্রেষ্ঠ ফায়ারার এবং সিএডি-এর ওয়ারেন্ট অফিসার মো: আজিজুল হক ওয় শ্রেষ্ঠ ফায়ারার নির্বাচিত হয়েছেন। আমি এ তিনজন ফায়ারারকে তাদের কৃতিত্বের জন্য জানাচ্ছি আন্তরিক মোবারকবাদ।
আশা করি তাদের এই সাফল্য অন্যদেরকেও অনুপ্রাণিত করবে এবং একই সাথে আমি অন্যান্য সকল প্রতিযোগী দলের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি।
আর্টডকের জিওসি ও প্রতিযোগীদের অভিনন্দন
প্রথমবারের মত দু’পর্বে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতা সুষ্ঠু এবং সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ড’র জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম মতিউর রহমান এবং প্রতিযোগিতার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান।

এ সময় তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সকল স্তরের অধিনায়ক, অফিসার, জেসিও এবং এনসিও সহ সর্বস্তরের সৈনিকদের জন্য ফায়ারিং অনুশীলন করা এবং ফায়ারিং এ দক্ষতা অর্জন করা একটি অভিষ্ট লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমি এই লক্ষ্য অর্জনে সকলকে ঐকান্তিক প্রচেষ্টার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ড’র জেনারেল অফিসার কমান্ডিং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম মতিউর রহমানসহ সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/জিকেএম/এমএএএমকে