ছিনতাইকারী ধরতে অভিযান, বেরিয়ে এলো কিশোর গ্যাং

প্রকাশিতঃ 3:48 pm | November 23, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলোঃ

মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন এমন ভুক্তভোগীর একটি ফোনকলের ভিত্তিতে তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-২) টহল টিম।

এরপর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় চারজনকে। উদ্ধার করা হয় ছিনতাই হওয়া ঘড়ি ও ব্যাগ। এরপরই জানা যায়, ছিনতাইয়ে জড়িত সবাই কিশোর গ্যাং ‘ভাইব্বা ল কিং’ এর সদস্য। প্রায় তিন বছর ধরে মোহাম্মদপুরে চুরি-ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে আসছে তারা। এই গ্রুপের আরও ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যরাতে গ্যাংয়ের প্রধানসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়।

র‌্যাব জানায়, এ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। স্কুলের গন্ডি পার হতে না পারলেও নিজেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদেরকে একাধিক ভাষায় পারদর্শী হিসেবে পরিচয় দিতেন। তারা পেশাগতভাবে কেউ লেগুনা, অটোচালক, কেউ দোকানের কর্মচারী বা নির্মাণকর্মী।

প্রাথমিকভাবে কারও সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে তাদের কিছু পৃষ্ঠপোষকের তথ্য পাওয়া গেছে, শিগগিরই তাদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে ছিনতাই-চুরি বেড়ে যাওয়ার কিছু হটস্পট চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, বসিলা ও আশপাশের এলাকায় র‌্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম ও টহল জোরদার করা হয়।

তবে যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিশোর গ্যাং ‘ভাইব্বা ল কিং’ বেরিয়ে আসে তা সোমবার (২২ নভেম্বর) রাতের ঘটনা। এ সময় র‌্যাব-২ কন্ট্রোল রুমে ফোন আসে ছিনতাইয়ের। ফোন পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় র‌্যাবের টহল দল।

সোমবার (২২ নভেম্বর) রাতে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় এক দম্পতি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন বলে র‌্যাব-২ কন্ট্রোলরুমে ফোন আসে। ফোন পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে ১০ মিনিটের মধ্যে র‌্যাব-২ টহলটিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে ভুক্তভোগীর তথ্যের ভিত্তিতে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. নাঈম (১৪), মো. রুমান (১৮), মো. তামিম খাঁন (১৪) ও মো. সজীবকে (১৭) আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র, খেলনার পিস্তল ও মাদক উদ্ধার করা হয়। তারাও ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামে গ্রুপের সদস্য।

এ সময় তাদের কাছ থেকে লোহার তৈরি ৪টি ছুরি, ১টি স্টিলের হাতলযুক্ত কুঠার, ৫০ পুরিয়া গাঁজা, ২টি স্টিলের তৈরি ছোরা, ১টি স্টিলের তৈরি হোল্ডিং চাকু, ১টি প্লাস্টিকের পিস্তল, ৬৫ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা খাওয়ার সরঞ্জামাদি এবং ৩টি মোবাইল জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানায়, তাদের গ্রুপে ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। মোহনের নেতৃত্বে ২-৩ বছর আগে গ্রুপটি গঠন করা হয়। তারা মোহন সিন্ডিকেট নামেও পরিচিত। এই গ্রুপের সদস্যরা আগে ‘লেবেল হাই’ গ্যাং-এ অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে তারা ৫-৬টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। গ্রুপটির ফেসবুক ও টিকটকে নানা কার্যক্রম রয়েছে।

ছিনতাইকারী ধরতে বেরিয়ে এলো কিশোর গ্যাং ‘ভাইব্বা ল কিং’

এই কিশোর গ্যাংটি মোহাম্মদপুর এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চুরি-ডাকাতি আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল। এছাড়া ভাড়ায় বিভিন্ন স্থানে হুমকি ও মারপিটে অংশগ্রহণ করে তারা। ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এই গ্রুপের সদস্যরা নিজেদের কিং ভাবে। তারা অপরাধ কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের কিং হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়।

কালের আলো/টিআরকে/এসআইএল