ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব নষ্ট করতেই সাম্প্রদায়িক হামলা: কাদের

প্রকাশিতঃ 7:08 pm | November 02, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলোঃ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনা টানা ১২ বছর ধরে এ দেশের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এর মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় কোনো অনুষ্ঠানে হামলা ও দুর্ঘটনা হয়নি। কিন্তু এখন নির্বাচন সামনে রেখে দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করেছে একটি দল। আওয়ামী লীগের প্রতি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যে আস্থা তা নষ্ট করার জন্য ও পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমি মনে করি।

মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয় ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের’ মাঝে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে থেকে মানবিক উপহার প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা টানা ১২ বছর ধরে এদেশের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এর মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীও কোনো অনুষ্ঠানে হামলা ও দুর্ঘটনা হয়নি। কিন্তু এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সৃষ্টি করার জন্য সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করেছে একটি দল। আওয়ামী লীগের প্রতি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যে আস্থা তা নষ্ট করার জন্য ও পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমি মনে করি।

তিনি বলেন, কুমিল্লার ঘটনার পর সারাদেশের নেতাকর্মীরা সর্তক থাকলে অন্যান্য জায়গায় এসব ঘটনা ঘটতো না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আরও সর্তক থাকলে সাম্প্রদায়িক ঘটনা করার সাহস পেত না। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের যে ব্যর্থতা আছে তা খুঁজে বের করতে হবে। বাংলাদেশ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক অভয়ে থাকবে। কেন তারা দেশ ছাড়বে, তারা তো মুক্তিযুদ্ধ করেছে। জীবন দিয়েছে, এই দেশে থাকার তাদেরও অধিকার আছে। তারাও এদেশের প্রথম শ্রেণির মানুষ।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভোট এলেই হিন্দুদের কাছে গিয়ে আমরা যারা মায়াকান্না করি, হিন্দুদের দরদ দেখাই, কিন্তু তাদের বিপদের সময় আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পারিনি কেন? এ প্রশ্ন আপনাদের প্রত্যেকের বিবেকের কাছে আমি রেখে গেলাম।

সবকিছু প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের এত বড় সংগঠন, এত কর্মী বাহিনী। কুমিল্লার ঘটনার পরদিন, চৌমুহনীর ঘটনা ঘটেছে। যদি কঠোরভাবে সতর্কতা আপনারা অবলম্বন করতেন, আওয়ামী লীগ সতর্ক থাকলে এদের এত দুঃসাহস হতো? এ রকম তাণ্ডব চৌমুহনীতে তারা করে গেল।

ওবায়দুল কাদের বলেন, এতগুলো মণ্ডপ চৌমুহনীতে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিলো, আপনারা কী নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন? একটা প্রতিরোধও তো হলো না। এটা নোয়াখালীর সন্তান হিসেবে আমাকে দুঃখ দিয়েছে। আমি নিজেও লজ্জা পেয়েছি। কী জবাব দেবো আজকে হিন্দু সম্প্রদায়কে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আপনাদের সঙ্গে আছে, আওয়ামী লীগ আপনাদের সঙ্গে আছে, ভবিষ্যতে থাকবে, ভয় পাবেন না। সাম্প্রদায়িক হামলায় যেসব পূজামণ্ডপ ভাঙা হয়েছে সেগুলো আবার নতুন করে সরকারি সহায়তায় নির্মাণ করা হবে। শেখ হাসিনার সরকার মুখে নয় কাজে প্রমাণ করে অসাম্প্রদায়িক।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাম্প্রদায়িক ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের মধ্যে কিছু চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদেরকে চিনে রাখতে হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত করছে বিএনপি। সাম্প্রদায়িকদের নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হচ্ছে বিএনপি।

রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কার্যালয় প্রান্তে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহামুদ স্বপন, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।

এ সময় নোয়াখালী থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ এ এইচ এম খায়রুল আনাম চৌধুরী সেলিম, আমেনা নূর ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা আহম্মদ আল জামান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিন ও শহিদ উল্যাহ খান সোহেল, বেগমগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. এ বি এম জাফর উল্যাহ, চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র খালেদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে নগদ ১০ লাখ টাকার মানবিক সহায়তা বিতরণ করা হয়।

এর মধ্যে নিহত প্রান্ত চন্দ্র দাস ও যতন সাহার পরিবারকে এক লাখ টাকা করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত সাতটি মন্দিরে ৫০ হাজার টাকা করে, সাতটি পূজামণ্ডপে ২৫ হাজার টাকা করে এবং আহতদের ২০ জনকে ১০ হাজার করে দেওয়া হয়েছে।

কালের আলো/টিআরকে/এসআইএল