খুতবার সময় করণীয়
প্রকাশিতঃ 10:16 am | September 24, 2021

মাওলানা মুহাম্মদ মুনিরুল হাছান:
সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ ও মহিমান্বিত দিন শুক্রবার। যাকে আমরা জুমার দিন বলে থাকি। জুমার নামাজ মুসলিম জাতির জন্য ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সমাজ ও তাকওয়া অর্জনের অনন্য এক মাধ্যম। জুমা শব্দের অর্থ একত্রিত হওয়া। দিনটি হলো মুসলমানদের সাপ্তাহিক সমাবেশের দিন। এ দিন সবাই একত্রিত হয়ে নামাজ আদায় করে বলেই একে জুমা বলা হয়। ইসলাম পূর্ব আরবে এটাকে ‘আরুবা’ বলা হতো। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্ব পুরুষ কাব বিন লুয়াই সর্বপ্রথম এই নাম রেখেছিলেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার মদিনা পৌঁছে কুবা পল্লীতে অবস্থান নেন। জুমার দিন তিনি মদিনা অভিমুখে রওনা হন। পথিমধ্যে সালেম ইবনে আউফের ‘বতনে ওয়াদি’ নামক এলাকায় জুমার সময় উপস্থিত হলে তিনি জুমা আদায় করেন এবং খুতবা দেন।
খুতবা জুমার নামাজের শর্ত। খুতবা ছাড়া জুমার নামাজ হয় না। মুসল্লিদের জন্য খুতবা শোনা ওয়াজিব। অনেক ইসলামি স্কলার খুতবা শোনাকে ফরজ বলেছেন। জুমার দিন প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর জিকিরের দিকে ধাবিত হও।’ সুরা জুমা : ৯
হজরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রা.) ও অন্যান্য ইমামরা বলেন, বর্ণিত আয়াতে আল্লাহতায়ালা যে জিকিরের নির্দেশ দিয়েছেন তা হলো খুতবার মধ্যে (জিকির)। ইমাম মাহমুদ আলুসী (রহ.) বলেন, আল্লাহর জিকির দ্বারা উদ্দেশ্য হলো খুতবা ও নামাজ। রুহুল মাআনি : ৩/৭০২
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ও জিকির বলে খুতবার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আর যখন ইমাম বেরিয়ে আসেন তখন তারা (ফেরেশতারা) তাদের কাগজগুলো গুটিয়ে ফেলেন এবং মনোযোগ দিয়ে জিকির শুনতে থাকেন। সহিহ্ বোখারি
যখন জুমার খুতবা পাঠ করা হয় তখন মুসল্লিদের করণীয় হলো মনোযোগী হয়ে খুতবা শ্রবণ করা এবং যে সব কাজ নামাজের মধ্যে নিষিদ্ধ তা থেকে বিরত থাকা। যে সমস্ত লোক ইমাম থেকে দূরে এবং খুতবার আওয়াজ শুনতে পায় না তাদের ওপরও নীরব থাকা ওয়াজিব। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, জুমার খুতবার সময় যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে চুপ করো বলো সেটাও অনর্থক। সহিহ্ বোখারি
হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বারে বসে মানুষের উদ্দেশ্যে খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি একটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন। আমার পাশে হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বসা ছিলেন। আমি তাকে বললাম, এই আয়াতটি কখন নাজিল হয়েছে? তিনি আমার কথার কোনো জবাব দিলেন না। আমি আবারও জিজ্ঞাসা করলে, তিনি তখনো কোনো সাড়া দিলেন না। একপর্যায়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বার থেকে নামলেন। তখন উনি আমাকে বললেন, তুমি যে অনর্থক কথা বলেছ সেটা ছাড়া তুমি জুমার কোনো সওয়াব পাবে না। অতঃপর হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন নামাজ শেষ করলেন তখন আমি তার কাছে এসে বিষয়টি জানালাম। তিনি বললেন, উবাই সঠিক বলেছে। যখন ইমাম কথা বলা শুরু করে তখন ইমাম শেষ না করা পর্যন্ত চুপ থাকবে। মুসনাদে আহমদ এসব হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, খুতবার সময় চুপ থাকা ওয়াজিব; কথা বলা হারাম। এমনকি খুতবা চলাকালীন সুন্নত ও নফল নামাজ আদায় করাও বৈধ নয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন ইমাম খুতবার জন্য বের হন তখন নামাজ পড়বে না কথাও বলবে না। সুনানে আবু দাউদ ইমাম ইবনে আবেদিন শামী (রহ.) বলেন, যেসব কাজ নামাজের মধ্যে হারাম তা খুতবা চলাকালীন ও হারাম। যেমন, কথাবার্তা বলা, পানাহার করা ইত্যাদি। ফতোয়ায়ে শামি : ৩/৩৫
ইমাম হাসান ইবনে আম্মার আল মিসরি বলেন, যখন ইমাম (নিজ কামরা থেকে) বের হন, তখন কোনো নামাজ পড়া অথবা কোনো রকম কথা বলা জায়েজ নয়। নামাজ শেষ করা পর্যন্ত কারও সালামের উত্তর দেবে না এবং হাঁচির জবাবও দেবে না। খুতবায় উপস্থিত ব্যক্তির পানাহার করা, কাজ করা, এদিক-ওদিক তাকানো মকরুহ। নুরুল ইজাহ, জুমা অধ্যায় হজরত ওমর (রা.), হজরত উসমান (রা.), হজরত আলী (রা.) সহ অধিকাংশ সাহাবি, তাবেয়ি, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও পূর্ববর্তী ইমামদের মতে খুতবা চলাকালীন নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ। শরহে মুসলিম হজরত আলী (রা.) বলেন, নিশ্চয়ই ইমামের মিম্বারে বসা নামাজ বন্ধ করে দেয় আর কথা বলা (অন্যজনের) কথাকে বন্ধ করে দেয়। তাহাবি শরিফ
কালের আলো/ডিএসকে/এমএম