জীবনযুদ্ধে জয়ী ফকরুলের বিসিএস ক্যাডার হয়ে ওঠার গল্প
প্রকাশিতঃ 12:16 am | January 20, 2018
কালের আলো: ঘরে দরজা ছিল না। নারিকেল পাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়েছে ফাঁকা জায়গা। ছিলো না চেয়ার-টেবিলও। মেঝেতেই করতে হয়েছে পড়াশোনা। ভালো জামা-কাপড় পরা ছিলো স্বপ্নের মতো। প্রতিবেশির ছেলের লুঙ্গি পরে প্রথম স্কুলে যাওয়া। ফকরুল আলমের শৈশব-কৈশোর কেটে এভাবেই।
তবে এগুলো এখন অতীতের কথা। দিনমজুর বাবার এই ছেলে এখন বিসিএস ক্যাডার। ৩৬তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে পড়াচ্ছেন সরকারি কলেজে। দারিদ্র্যপীড়িত অতীত ভুলে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় নিজের বাড়িটি পাকা করে তৈরি করছেন ফকরুল। মা-বাবা মুখে ফুটিয়েছেন হাসি।
ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিদ্যানন্দ গ্রামে ফকরুল আলমের পুরোনো বাড়িটি এখন বহাল তবিয়েতই আছে। অদম্য এই যুবকের জীবনযুদ্ধের সাক্ষী এটি। চার ভাইবোন থাকলেও একজনকে পড়ালেখা করানোর সুযোগ করে দিতে পেরেছিলেন বাবা। ভাগ্যবান সেই সন্তান হলেন ফকরুল। নিজে কম খেয়ে-কম পরে ছেলের পড়ার খরচ যুগিয়েছেন মা-বাবা।
ফকরুলের ভাষায় সেই অতীতের স্মৃতি, ‘আমার বয়স সতেরো হওয়া পর্যন্ত ঘরে কোনো দরজা ছিলো না। বাঁশের মাচা দিয়ে আব্বা ঢাকনা টাইপের কিছু একটা বানিয়ে দিয়েছিলেন। রাতে ওটাকে দরজা হিসেবে ব্যবহার করতাম আমরা।’
যে ঘরের দরজাই নেই, সেখানে চেয়ার-টেবিলে বসে পড়ার চিন্তা তো সুখকল্পনা! মেজেতে ঝুঁকে পড়তে পড়তে ঘাড়ে ব্যথা করতো ফকরুলের। বলছিলেন, ‘ফ্লোরে পড়তে পড়তে আর পারতেছিলাম না। তখন আব্বা বাজার থেকে ৬০ টাকা দিয়ে একটা চেয়ার কিনে দিছিলেন।’
প্রথম হাইস্কুলে যাওয়ার কথা মনে পড়ে আজকের এই শিক্ষকের। পরিবারের অবস্থা এতই শোচনীয় ছিলো যে, স্কুলে পরে যাওয়ার মতো একটা ভাল লুঙ্গিও ছিল না ফকরুলের। সেদিনের কথা বললেন এভাবে, ‘তখন স্কুলে পরে যাওয়ার মতো ভাল তেমন কিছু ছিল না। মা পাশের বাড়ির মেম্বারের ছেলের একটা লুঙ্গি নিয়ে আসছিলেন। সেই লুঙ্গি পরেই সিক্সে ক্লাস করতে গেছি।’
এতদুর আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দিলেন বাবাকে। ‘কারো অবদানের কথা বলতে গেলে অবশ্যই বাবার কথা বলতে হবে। উনি কোনোদিন একশো টাকা দিয়ে একটা লুঙ্গি কিনে পরতে পারেন নাই। উনি যা কিছু করেছেন সব আমার জন্যই করেছেন।’
ছেলের এগিয়ে যাওয়া খুব কাছ থেকে দেখেছেন বাবা ফজলুল হক ও মা মনোয়ারা বেগম। ভাবতেন, বড় হয়ে তাদের ফকরুল একদিন মুখ উজ্জল করবে সবার। ভেজা কণ্ঠে মা বললেন, ‘মুরগি যে ডিম পাড়তো সেগুলো ছেলেমেয়েদের খাওয়াতে পারতাম না। ওগুলো দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে তারপর সেগুলো বিক্রি করে ওর পড়ার খরচ দিতাম।’
ফজলুল হক বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ও ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ছে। এখন চাকরিও পাইছে। আল্লাহর কাছে আমি শুকরিয়া আদায় করি।’
সূত্র: যমুনা টেলিভিশন