ড্রোন দিয়ে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা: বিমানবন্দরের আশেপাশে বিশেষ নজরদারি

প্রকাশিতঃ 11:09 am | December 04, 2019

কালের আলো ডেস্ক:

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশেপাশের দুটি এলাকায় ড্রোন দিয়ে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা থাকায় নিরাপত্তা বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) সতর্ক করার পর বিমানবন্দরের বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ এলাকা বিশেষ করে উত্তরা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

বেবিচক সূত্র জানায়, গত সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে ওই সংস্থাটি বেবিচককে চিঠি দিয়ে জানায়, বিমানবন্দরের আশেপাশের সুউচ্চ ভবনের ছাদে বা সুবিধাজনক স্থান হতে ড্রোন বা আগ্নেয়াস্ত্রের মাধ্যমে বিমান ওঠা নামার সময় হামলার পরিকল্পনা করছে জঙ্গিরা। এ তথ্য পাওয়ার পর নিরাপত্তা জোরদার ও ব্যবস্থা নিতে বেবিচকের সদস্য (নিরাপত্তা) ইমদাদুল হক স্বাক্ষরিত চিঠি বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীকে দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে, একটি বিশেষ জঙ্গি গোষ্ঠী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় ফানেলের অর্ন্তভুক্ত উত্তরা ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের কিছু অংশ এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি-ব্লক এর কিছু অংশের সুউচ্চ ভবনের ছাদে বা সুবিধাজনক স্থান হতে ড্রোন বা আগ্নেয়াস্ত্রের মাধ্যমে হামলার পরিকল্পনা করছে। সে প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।

সূত্র জানায়, বরাবরই জঙ্গিরা জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলার চেষ্টা চালিয়েছে। সরাসরি বিমানবন্দরে হামলা করতে না পারলেও বিমানবন্দরের আশেপাশে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা।

২০১৭ সালের ১৭ মার্চ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অদূরে র্যা বের নির্মাণাধীন ভবনে আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। বোমা বিস্ফোরেণে হামলাকারী নিহত হয়। সেই ঘটনায় র্যাবের দুই সদস্যও আহত হয়।

এর কিছু দিন পর ২৪ মার্চ বিমানবন্দরের মূল সড়কের সামনে পুলিশের চেকপোস্টে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটে। সে ঘটনায় হামলাকারী নিহত হয়। তার ট্র্যাভেল ট্রলির ভেতর থেকে বেশ কয়েকটি বোমা উদ্ধার করা হয়। এই আত্মঘাতী বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস।

এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য (নিরাপত্তা) মো. শহীদুজ্জামান ফারুকী বলেন, আমাদের এভিয়েশন সিকিউরিটির সদস্যরা বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তাই অন্যান্য আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বেবিচকের এ চিঠি পাওয়ার পর তৎপরতা বাড়ায় বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ও ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগ। পুলিশের পক্ষ থেকে উত্তরা ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের বাড়ি মালিক ও কল্যাণ সমিতিগুলোকে সর্তক করা হয়।

পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়ির মালিকদের জানানো হয়েছে, বাড়িতে অধিবাসী ছাড়া অন্যদের ছাদে প্রবেশে করতে না দিতে।

এ প্রসঙ্গে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শরিফুর রহমান বলেন, মাস দুয়েক আগে পুলিশের পক্ষ থেকে ছাদে ওঠা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। যদিও এমনিতেই আমাদের এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে সিকিউরিটি গার্ড রয়েছে। ফলে অপরিচিত কারও পক্ষে ভবনে গিয়ে ছাদে ওঠার সুযোগ নেই। তারপরও আমরা সমিতি পক্ষ থেকে বাড়ির মালিকদের সতর্ক থাকার জন্য বলেছি।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জঙ্গি আস্তানা থেকে ড্রোন উদ্ধার হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিরা দেশে ড্রোন ব্যবহার করে হামলার পরিকল্পনা কথাও জানিয়েছে।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় যাত্রাবাড়ি এলাকার একটি বাড়ি থেকে ড্রোন তৈরির যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জামসহ দুই জঙ্গিকে আটক করে পুলিশ। সে বাড়িতে আটক তানজিল হোসেন বাবু ও গোলাম মাওলা মোহন জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য৷ তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে, ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের।

২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার এলেঙ্গা মসিন্দা এলাকার জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ড্রোন ও দেশি অস্ত্রসহ দুজনকে আটক করে র্যাব। আটক মাসুদ ও খোকন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সক্রিয় সদস্য।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্রথম ড্রোন ওড়ানো নিয়ে বিধি নিষেধ আরোপ হয়। সে সময় ড্রোন ওড়ানোর বিধিবিধান মানার অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)।

বলা হয়, ড্রোন বা রিমোট কন্ট্রোল চালিত বিমান/হেলিকপ্টার আকাশে ওড়ানোর আগে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও বিমান বাহিনীর অনুমোদন নিতে হবে।

এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে বেবিচকও ড্রোন উড়ানোর বিধি নিষেধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

গত ১৩ আগস্ট জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা আকাশে অনুমতি ছাড়া ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

আবেদনের ভিত্তিতে ড্রোন ওড়ানোর অনুমতি দিলেও নিয়ম মেনে ওড়ানা হচ্ছে কিনা এসব মনিটরিং এর সক্ষমতা নেই বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের। একইসঙ্গে দেশে কতগুলো ড্রোন রয়েছে, এসব ড্রোনের মালিক কারা– এমন তথ্যও নেই বেবিচকের কাছে।

জঙ্গিদের হামলার শঙ্কা প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ কয়েক মাস আগেই ঢাকার আকাশে অনুমতি ছাড়া ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছে। এ বিষয়টি আমরাও নজরদারিতে রাখছি। এ ছাড়া জঙ্গি তৎপরতা রোধে বাড়ির মালিক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে উঠান বৈঠক, জনসংযোগ, প্রচারণা চলমান আছে। এছাড়া বাড়ির মালিক, ভাড়াটিয়াদের তথ্যও নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে।

কালের আলো/এডিবি