পাট নিয়ে কোন আশা নেই

প্রকাশিতঃ 9:43 am | July 15, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ৮২ কোটি ১ লাখ ৬০ হাজার ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক আগের অর্থ বছরের (২০২৩-২৪) চেয়ে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ কম।

পাটকল মালিক ও রপ্তানিকারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পাটপণ্যের চাহিদা কমে গেছে। বেড়ে গেছে পলি ফাইবারের চাহিদা। সে কারণে পাটপণ্যের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে গেছে। সে কারণে রপ্তানিও কমছে। সামনের দিনগুলোতে এই চিত্র বদলানোর কোনও আভাস নেই।

পাট দিয়ে তৈরি অন্যান্য পণ্য রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ১২ শতাংশ। এ সব পণ্য রপ্তানি থেকে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার আয় হয়েছে। পাটের দুর্দিনের মধ্যে এসেছে আরেকটি ধাক্কা। গত ২৮ জুন বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত সরকার। ভারত সরকার স্থলপথে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিলে আগামীতে পাট রপ্তানি আরও কমে যাবে বলে মনে করেন রপ্তানিকারকরা।

বছরের পর বছর লোকসানের কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) ২৫টি পাটকল ২০২০ সালের ১ জুলাই বন্ধ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।

সে কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত কোনও পাটকল এখন উৎপাদনে নেই; সরকারিভাবে পাট ও পাটজাত পণ্য এখন আর রপ্তানি হয় না। অথচ বন্ধ হওয়ার আগে বিজেএমসির পাটকলগুলো থেকে এ খাতের রপ্তানির ২০ শতাংশের মতো আসত।

এ প্রসঙ্গে বিজেএমসির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কবির উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘বিজেএমসির অধীনে এখন আর কোনও পাটকলে সরাসরি উৎপাদন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় না। তাই আমাদের মাধ্যমে কোনও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিও হয় না।’ তিনি বলেন, বন্ধ পাটকলগুলোর মধ্যে ১১টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দিয়ে চালু করা হয়েছে। সেগুলোয় বেসরকারি উদ্যোগেই উৎপাদন চলছে। সেখান থেকে রপ্তানিও হচ্ছে।

সব খাতের রপ্তানি বাড়লেও পাট রপ্তানি কমছে কেন- এ প্রশ্নে কবির উদ্দিন বলেন, ‘বিজেএমসি যেহেতু রপ্তানিতে নেই, সে কারণে আমার পাটের রপ্তানি বাজার সম্পর্কে খুব একটা খোঁজ-খবর রাখা হয় না। তবে রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে আলাপ করে যতটুকু জেনেছি তা হলো, বিশ্বজুড়েই পাট ও পাট পণ্যের চাহিদা কমেছে। সে কারণে হয়ত রপ্তানি কমে গেছে।’

২০২০-২১ অর্থ বছরে ১১৬ কোটি ১৫ লাখ (১.১৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করে চামড়া খাতকে পেছনে ফেলে রপ্তানি পণ্য তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে গিয়েছিল পাট খাত। এবার এই খাত ৮২ কেটি ডলার রপ্তানি করে পঞ্চম স্থানে নেমে এসেছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ সব মিলিয়ে ৪৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে ৩৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ দশমিক ২৮ শতাংশই এসেছে পোশাক খাত থেকে।

বাংলাদেশ পাটপণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিজেজিইএ) চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে প্রায় সোয়া বিলিয়ন ডলার আয় হওয়ায় আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম এই ভেবে যে আমাদের সোনালি আঁশ পাটের সুদিন হয়ত ফিরে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সে আশায় গুঁড়ে বালি।’

কালের আলো/এমএএইচএন