আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিতঃ 9:50 am | August 24, 2023

কালের আলো ডেস্ক:

আফ্রিকান দেশগুলোতে নিয়োজিত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্থানীয় সময় বুধবার (২৩ আগস্ট) দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে প্রধানমন্ত্রী তার আবাসস্থল হোটেল রেডিসন ব্লু স্যান্ডটনে ‘আফ্রিকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সম্মেলনে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘অর্থনৈতিক কূটনীতিকে গুরুত্ব দিন, কারণ রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনীতিও গুরুত্বপূর্ণ। আপনি এখানে যে দেশে কাজ করছেন, সেখানে বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সম্ভাবনা খুঁজে বের করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী আফ্রিকার দেশগুলোতে আরও বাংলাদেশি দক্ষ জনশক্তি পাঠানো, রেমিটেন্স বাড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে আফ্রিকার দেশগুলোতে জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, তারা বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।

বাংলাদেশ যাতে মাথা উঁচু করে বিশ্ব মঞ্চে এগিয়ে যেতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশ দেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিঞা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
এতে অংশ নেন দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার নূর-ই-হেলাল সাইফুর রহমান, মরক্কোর রাবাত দূতাবাসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, মিশরের কায়রোতে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলাম, মরিশাসের পোর্ট লুইসে বাংলাদেশ হাইকমিশনের হাইকমিশনার রেজিনা আহমেদ, নাইজেরিয়ার আবুজাতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের হাইকমিশনার মাসুদুর রহমান, আলজেরিয়ার আলজিয়ার্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মো. জুলকার নাইন, কেনিয়ার নাইরোবিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের হাইকমিশনার তারেক মুহাম্মদ, লিবিয়ার ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ খায়রুল বাশার ও সুদানের খার্তুমে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ।

সরকার আফ্রিকার দেশগুলোতে আরও দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে চায় বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের এ বিষয়ে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।’

কোনও অদক্ষ জনশক্তি ভুয়া সনদ নিয়ে যেন এসব দেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যখন কোনও ব্যক্তি চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও আইসিটি বিশেষজ্ঞ না হয়েও ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশ গিয়ে সমস্যায় পড়েন এবং এভাবে তারা শুধু তাদেরই নিজেদেরই নয়, বরং দেশেরও ক্ষতি করছেন। তাদের জন্য দক্ষ জনশক্তি বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।’

তিনি পারস্পরিক সুবিধার জন্য একে অপরের সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা বিনিময় করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।

প্রধানমন্ত্রী আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের যত্ন নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, যেখানে তারা সম্মানের সঙ্গে কাজ করছেন এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের যত্ন নিতে হবে, কারণ তারা জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করার সময় বিরল মানবিক গুণাবলি প্রদর্শন করছে, যার জন্য তারা স্থানীয়দের প্রিয়ভাজন হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সব প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছে।

তিনি ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত ‘তথাকথিত আন্দোলন’-এর নামে যাত্রীবাহী বাস, লঞ্চ, ট্রেন, সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ‘বিএনপি-জামায়াত চক্রের অগ্নিসংযোগ’ এবং এভাবে ‘মানুষকে পুড়িয়ে মারা’র কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি-জামায়াত) এমন সন্ত্রাসের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে চেয়েছিল। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আজ অবধি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও স্থিতিশীলতার ধারাবাহিকতার কারণে এই ধরনের অসাধারণ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহন ও সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নের উল্লেখ করেন, যার জন্য দেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে বিবেচিত। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়।

তিনি বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক বা তাদের দোসররা যখন ক্ষমতায় ছিল সেই ২৯ বছরে বাংলাদেশে কোনও উন্নয়ন হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্থ করার যেকোনও পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমরা চাই দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং কেউ এতে বাধা দিতে পারবে না।

কালের আলো/ডিএস/পিএমকে