দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়
প্রকাশিতঃ 10:34 pm | March 23, 2022

স্পোর্টস ডেস্ক, কালের আলো:
দারুণ বোলিংয়ে কাজটা সহজ করে দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। দক্ষিণ আফ্রিকাকে থামিয়ে দিয়েছেন মাত্র ১৫৪ রানে। ব্যাট হাতে বাকি কাজ সারলেন তামিম ইকবাল। লিটন-সাকিবকে নিয়ে চমৎকার ইনিংস উপহার দিয়েছেন অধিনায়ক। ব্যাটে-বলের দাপুটে দিনে বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। বড় জয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ল লাল-সবুজের দল।
বুধবার (২৩ মার্চ) শেষ ম্যাচে ‘অঘোষিত ফাইনালে’ স্বাগতিকদের ১৫৪ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে ১৪১ বল হাতে রেখে ৯ উইকেটের বিশাল জয়ে সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়ে টাইগাররা।
১৫৫ রানের সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে অনবদ্য ব্যাটিং করে ১২৫ বলে ১২৭ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান লিটন দাস ও তামিম ইকবাল।
আর মাত্র ২ রান হলেই ফিফটি পূর্ণ হতো লিটনের। দলের জয়ে প্রয়োজন ছিল মাত্র ২৮ রান। হাতে ছিল ২৯.১ ওভার। খেলার এমন অবস্থায় বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন লিটন। ২০.৫ ওভারে দলীয় ১২৭ রানে ৫৭ বলে ৮টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৪৮ রান করেন লিটন।
এরপর সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন তামিম ইকবাল। দলের জয়ে ৮২ বলে ১৪টি চারের সাহায্যে অপরাজিত ৮৭ রান করেন তামিম।
এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের শুরুটা হয় বেশ দাপুটে। সেঞ্চুরিয়ানে কুইন্টন ডি ককের পরিসংখ্যান বেশ সমৃদ্ধ। আজ তাকে একপাশে রেখে ইনিংস শুরু করতে নেমে আগ্রাসী ছিল ইয়ানেমান মালামের ব্যাট। ইনিংসের প্রথম ৬ ওভারেই স্কোর বোর্ডে ৪০ রান। এই জুটি যখন ধীরে ধীরে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন দৃশ্যপটে মেহেদী হাসান মিরাজ। বিধ্বংসী হওয়ার আগে ফেরালেন ডি কককে।
মালানের সঙ্গে কাইল ভেরেইনার দ্বিতীয় উইকেটের জুটিটাও ভয় ধরাচ্ছিল। এবার দায়িত্ব নিলেন পুরোনো বলে বিধ্বংসী হয়ে ওঠা তাসকিন। ইনিংসের ১৩তম তৃতীয় বলে ফেরালেন ভেরেইনাকে। অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করেন ভেরেইনা। বল তার ব্যাটে লেগে ভেঙে দেয় স্টাম্প। ১৬ বলে একটি চারে ভেরেইনা করেন ৯ রান। এই উইকেটের পরেই যেন মোমেন্টাম পেয়ে যায় সফরকারী শিবির। ৬৬ রানে ১ উইকেট থেকে ৮৩ রানে পাঁচ! ১৭ রানে নেই ৪ উইকেট।
ভেরেইনাকে আউট করার পর তাসকিন ফেরান ওপেনার মালানকে। ডানহাতি পেসারকে বাড়তি বাউন্স পাওয়া বল মালানের ব্যাটে ছুঁয়ে জমা পড়ে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ৫৬ বলে ৭ চারে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান করেন ৩৯ রান।
পারিবারিক জটিলতায় জর্জরিত সাকিব ফেরান প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে। এলবিডব্লিউয়ের হয়ে ১১ বলে করেন ২ রান করে বিদায় নেন টেম্বা বাভুমা। সাকিবের পর সাফল্য পান শরিফুল ইসলাম। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে প্রথম বলেই দারুণ এক ডেলিভারিতে আউট করেন রাসি ফন ডার ডুসেনকে। এই প্রোটিয়া করেন ৪ রান।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ডাক পেয়েও খেলতে না যাওয়া তাসকিন দেশের জন্য কতটা নিবেদিত তার প্রমাণ দিলেই মাঠেই। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে স্বাগতিকদের পরের ৩ উইকেট তুলে নিয়ে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেটের স্বাদ পান তিনি। একে একে ফেরান ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস (২০), ডেভিড মিলার (১৬) আর কাগিসো রাবাদাকে (৪)। রাবাদাকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেটের কোটা পূর্ণ করেন তাসকিন। ১২৬ রানে ৮ উইকেট হারানো দলটি শেষদিকে কেশভ মহারাজের ২৭ রানের পরেও গুটিয়ে যায় ১৫৪ রানে। তামিম-লিটন-সাকিবের সাবলীল ব্যাটিংয়ে যা হেসে খেলেই তাড়া করে ফেলে বাংলাদেশ। গড়ে ফেলে ইতিহাস।
এই জয়ের ফলে সুপার লিগে নিজেদের নামের পাশে গুরুত্বপূর্ণ আরো ১০ পয়েন্ট যোগ করল বাংলাদেশ দল। ১৮ ম্যাচে ১২ ম্যাচে ১২০ পয়েন্ট লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইংল্যান্ড বাংলাদেশের চেয়ে ২৫ পয়েন্ট পিছিয়ে।
কালের আলো/বিএসবি/এমএন