মোহাম্মদপুরের ‘গলা কাটা’ মোশাররফসহ গ্রেপ্তার ৬

প্রকাশিতঃ 8:18 pm | February 28, 2022

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ‘মোশারফ’ বাহিনীর মূলহোতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলেন- মোশারফ হোসেন ওরফে গাংচিল মোশারফ (৪৫), মো. বিল্লাল হোসেন (৩০), মো. মোহন (৩১), সাহাবুদ্দিন সাবু (৪৪), মো. রুবেল (৩৩) এবং মো. সুমন মিয়া (৩০)।

অভিযানের সময় একটি বিদেশি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, তিনটি বড় ছোরা, দুটি চাপাতি, দুটি চাকু, একটি চায়নিজ কুড়াল, একটি দা, একটি গ্রিল কাটার, একটি কাটার প্লায়ার্স এবং ৪২৩টি ইয়াবা জব্দ করা হয়।

সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কাওরানবাজারে র‍্যাবের মিডিয়ার সেন্টারে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় নৌপথ, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড ও হাউজিং প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অপহরণ, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল এ চক্রটি।

কিছুদিন আগে মোহাম্মদপুর এলাকার ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ কবির হোসেনকে আটক করার পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকিদের আটক করা করে র‌্যাব।

খন্দকার আল মঈন বলেন, কবিরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, ২০১৭ সালে গাংচিল গ্রুপের প্রধান আনারের মৃত্যুর পর গাংচিল গ্রুপ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়। ওই গ্যাংয়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড মোশারফের নেতৃত্বে মূল একটি অংশ পরিচালিত হয়; যারা মোহাম্মদপুর, আমিনবাজার ও তার পাশ্ববর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছিল।

ওই দলে ২৫ থেকে ৩০ জন রয়েছে জানিয়ে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, মোশারফের নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা ওইসব এলাকায় জমি দখল, হাউজিং, নৌপথ, মার্কেট ও বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ এবং মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করছিল এতদিন।

‘তারা বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীতে বালু ভর্তি ট্রলার, ইটের কার্গো ও অন্যান্য জাহাজ আটকিয়ে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি করত।’

মোশারফের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিনে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ১৯৯০ সালে ঢাকায় এসে প্রথমে বেবি ট্যাক্সি ও অটোরিকশা চালাত।

র‌্যাব বলছে, ২০০০ সালে রাজধানী কাফরুল এলাকায় ছিনতাইয়ের মাধ্যমে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে মোশারফ। পরে গাংচিল বাহিনীর প্রধান আনারের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু শুরু করে। ২০১৭ সালে আনারের মৃত্যু হলে গাংচিল বাহিনী বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। আর এর মধ্যে মূল অংশের নেতৃত্ব যায় মোশারফের হাতে।

তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যাচেষ্টা, ছিনতাই, ডাকাতি, অবৈধঅস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ, অপহরণসহ ১৫টির বেশি মামলা রয়েছে। একাধিকবার তিনি কারাগারেও ছিলেন।

আটক বিল্লাল হোসেনের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। ২০০৬ সালে ঢাকায় এসে বিল্লাল পোশাক কারখানায় চাকরি ও গাড়ির হেলপারের কাজ করতেন। ২০১৭ সালে মোশারফের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে এবং বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, বিল্লাল তালা ভাঙায় পারদর্শী হওয়ার কারণে ‘চোরা বিল্লাল’ হিসেবে পরিচিতি পায়। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধে ১০টি মামলা রয়েছে। সেও বিভিন্ন মেয়াদে একাধিক বার কারাগারে ছিল।

আটক মোহনের বিরুদ্ধেও ছিনতাই, ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধে আটটির বেশি মামলায় রয়েছে। আর সাহাবুদ্দিন সাবুর বিরুদ্ধে ছয়টি, রুবেলের বিরুদ্ধে তিনটি, সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে বলেও জানায় র‍্যাব।

কালের আলো/এসবি/এমএম