নারী ইউপি চেয়ারম্যান সালিনা চৌধুরীর ব্যতিক্রমী মিশন

প্রকাশিতঃ 7:55 pm | April 09, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

দুরন্ত শৈশব-কৈশোর বা উদ্দীপ্ত তারুণ্য কেটেছে শহরে। গ্রামের মাটি ও মানুষের সংস্পর্শে আসা হয়নি কখনোই। রাজনীতিও ছিল তাঁর বড় অপছন্দ। কিন্তু দুর্গম তৃণমূলের শ্বশুরের মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়ার দৃষ্টান্ত তার মানসিকতাকে বদলে দেয়।

এরপর ভোটে দাঁড়িয়ে স্থানীয় জনসাধারণের ভোটে রাঙামাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম নারী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। রাজনীতিতেও জড়িয়ে যান উচ্চ শিক্ষিত সালিনা চৌধুরী সুষমা। এ ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রাম তাঁর মুখস্থ। এসব গ্রামের মানুষজনের সঙ্গেও রয়েছে তার আত্নিক যোগাযোগ।

তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে সালিনা চৌধুরী সুষমা প্রথমেই উদ্যোগ নেন নারীদের সচেতনতা জাগাতে। কার্যকরী এ মিশন নিয়েই তিনি ছুটেছেন ইউনিয়নের এ গ্রাম ওই গ্রাম। নারী শিক্ষার্থীদের উদ্ধুদ্ধ করেছেন বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে। এ পদক্ষেপে বাল্য বিয়ের অভিশাপ মুক্ত হতে চলেছে স্থানীয় রাঙামাটিয়া ইউনিয়ন।

একই সঙ্গে তাদের স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শদানের পাশাপাশি এলাকার অতি দরিদ্র নারীদের কুটির শিল্পের কাজে মনোনিবেশ করিয়েছেন। তাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানায়, স্থানীয় রাঙামাটিয়া ইউনিয়নে দিনের পর দিন অবহেলিত নারী সমাজ নানা কুসংস্কারে ডুবে আছে। তারা বঞ্চিত হয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ নিজের মৌলিক অধিকার থেকেও। এ গ্রামটিতে এক সময় কন্যাশিশুদের জন্য শিক্ষা বলতে, ভোর বেলা মসজিদ কিংবা মক্তবের বারান্দায় ধর্মীয় শিক্ষাতেই সীমাবদ্ধ ছিল।

কিন্তু দিন বদলের পালায় এখন পুরোপুরি বদলে গেছে এ ইউনিয়নের চিত্র। এখন পাড়া-মহল্লায় বিদ্যালয়। গ্রামের কারো ছোটখাটো রোগে তারা ছুটে যায় হাসপাতাল অথবা পাশের কমিউনিটি ক্লিনিকে। রাঙামাটিয়া ইউনিয়নের মতো গ্রামের এ ছবি বদলে যাবার নেপথ্যে রয়েছে এক দল মানুষের নিরলস পরিশ্রম, উদ্যোগ আর সাহসী অনেক প্রচেষ্টা।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সালিনা চৌধুরী সুষমা দৈনিক কালের আলোকে জানান, তাঁর শ্বশুর সারাটা জীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। মূলত তাঁর শ্বশুরের মানুষের কল্যাণে কাজ করার মানসিকতা দেখে তিনি বদলে যান। এ ভাবনা থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন।

সালিনা চৌধুরী সুষমা হলেন এমন এক ইউপি চেয়ারম্যান যিনি পায়ে হেঁটে প্রতিটি গ্রাম ঘুরেছেন। কাজের মাধ্যমেই তাদের কাছে হয়ে ওঠেছেন ‘প্রাণভোমরা’। এ ইউনিয়নের হাতিলেইট গ্রামে গিয়ে দেখা গেলো ইউপি চেয়ারম্যান সুষমা’র সরব উপস্থিতি। তাকে কাছে পেয়ে যেন আনন্দে উদ্বেল বর্মণপাড়ার বিমলা, সরস্বতী, অনিতারা।

তাঁরা বলছেন, দিন-রাত নেই, চেয়ারম্যান আপাকে দু:খে-সুখে সব সময় আমরা পাশে পাই। আমরা তাকে ভোট দিয়ে প্রথম নারী ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছি। তিনি আমাদের হৃদয় দিয়ে ভালোবাসেন। তাকে নিয়ে আমরা গর্বিত।’

বিমলা, সরস্বতীদের খোঁজ খবর নেয়া শেষ করে এ নারী ইউপি চেয়ারম্যান বেরিয়ে পড়েন শিশু-কিশোরদের মজার পাঠের আসর বাবুগঞ্জে পাণ্ডুলিপি পাঠাগার কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে। সেখানে শিশু-কিশোরদের মজার মজার গল্প পড়ে শোনান তিনি।

স্থানীয় রাঙামাটিয়া ইউনিয়নের প্রথম নারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সালিনা চৌধুরী সুষমা বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের লোকজনই আমার পরিবারের সদস্য। তাদের নিয়ে হাসি-আনন্দেই জনপ্রতিনিধিত্বের জীবন কাটাতে চাই।

 

কালের আলো/এমকে/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email