বাজেট : মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দ বেড়েছে

প্রকাশিতঃ 10:20 am | June 05, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

দেশের বিভিন্ন এলাকায় ২৬টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে, যার সার্বিক তত্ত্বাবধান করছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার সার্বিক চেহেরা বদলে যাবে। তৈরি হবে অর্থনীতির নতুন নতুন ক্ষেত্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত ১২ বছরে সড়কের উন্নয়নে বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৩৩১টি প্রকল্প। চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে ৪৫৩ কিলোমিটার মহাসড়ক। নতুন প্রকল্প নিয়েছে আরও ৪৫২টি। তাই ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের বাজেটে সেতু বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৮২০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

৭ কোটি টাকা পরিচালনব্যয় বাদে বাকিটা খরচ হবে উন্নয়ন প্রকল্পে। সেতু বিভাগের বরাদ্দের বড় অংশই যাবে পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে।

৩ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেটে রেল খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১৭ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে বাজেটে এর আকার ছিল ১৬ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমে হয় ১৫ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।

রেলে বাজেটের ২২ শতাংশের বেশি অর্থাৎ ৩ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা যাবে ট্রেন পরিচালনা ও কর্মীদের বেতন-ভাতায়। ১৩ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

রেল মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা কালের আলোকে বলেন, বরাদ্দের বেশির ভাগ অর্থ ব্যয় হয়ে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ’ ও ‘দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ’, যমুনা নদীর ওপর ‘বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পে।

এদিকে নৌপরিবহন খাতে ৬ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা, বিমান পরিবহনে ৪ হাজার ৩২ কোটি টাকা এবং টেলিযোগাযোগে ২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এছাড়া বিমান খাতের বরাদ্দের বড় অংশ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হবে।

সূত্র জানায়, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র’ নির্মাণ প্রকল্প ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা, যা এই অর্থবছরে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সর্বোচ্চ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

ঢাকা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত এই প্রকল্পটি রাশিয়ার সহযোগিতায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

কর্মকর্তারা বলেন, দেশের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে এখান থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে এবং ২৪ থেকে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

অর্থাৎ বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করবে প্রকল্পটি। এ কাজে রাশিয়া দিচ্ছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত এ প্রকল্পের কাজ আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা হবে।

অন্যদিকে বাজেটে মাতারবাড়ী ৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার প্রজেক্ট পেয়েছে প্রায় ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) বরাদ্দ পেয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু রেলসংযোগ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প পেয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।

পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পে মোট ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প পেয়েছে ৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (সংশোধিত) প্রকল্প পেয়েছে ২ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা।

সরক পরিবহন ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় ২০২১-২২ অর্থবছরেরও বাজেটে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে ৭২ হাজার ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। আগের বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৬৪ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে বরাদ্দ করা হয় ৬০ হাজার ১১০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে আধুনিক ও নিরাপদ যোগাযোগ অবকাঠামো গুরুত্বপূর্ণ। সে লক্ষ্য পূরণে সড়কপথ, সেতু, রেলপথ, নৌপথ ও আকাশপথে ধারাবাহিক ও সমন্বিত বিনিয়োগের মাধ্যমে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরিতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

কালের আলো/এসএম/ডিএসকে