বাজেট অধিবেশনে ভিজ্যুয়ালি ‘অগ্রযাত্রার বাংলাদেশ’

প্রকাশিতঃ 2:44 pm | June 04, 2021

সংসদ সংবাদদাতা, কালের আলো

স্বাধীনতার ৫০ বছরে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বিধ্বস্ত দেশকে গড়তে শূন্য থেকে শুরু করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু।। আজ তাঁর বাংলাদেশ কীভাবে বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠলো, বাজেট অধিবেশনে অডিও ভিজ্যুয়ালে উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য গতি আর বদলে যাওয়া বাংলাদেশের বাস্তবচিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির পূর্ণ ব্যবহার আর প্রাণঘাতী করোনার মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) সংক্ষিপ্ত সময়ে দেশের ৫০তম বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট অধিবেশনে অডিও ভিজ্যুয়ালে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা। স্বাধীনতার পর জাতীয় সংসদে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ।

দেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। এবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশের ৫০তম বাজেট উপস্থাপন করলেন। দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এই বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট।

দেশের ৫০তম বাজেটের শিরোনাম রাখা হয়েছে- ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ।’ বর্তমান সরকারের এটি টানা ১৩তম এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি তৃতীয় বাজেট উপস্থাপন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় করোনাকালের দ্বিতীয় বাজেট সংক্ষিপ্ত সময়ে পেশ করা হয়েছে।

গতবছর মাত্র পৌনে এক ঘণ্টায় বাজেট পেশ করা হলেও এবার ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা। করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ নিশ্চিত করে অধিবেশন পরিচালনা করায় বাজেট পেশকালে অধিবেশনে উৎসবের আমেজ দেখা যায়নি। বরং সর্বত্র ছিল কঠোর সতর্কতা।

বাজেট অধিবেশনে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ স্বল্পসংখ্যক সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বাজেট পেশের পর বৈঠক শেষ হয় ৪টা ৩২ মিনিটে। বাজেট পেশ ছাড়াও এ সময় অর্থবিল-২০২০ পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আগামী ২৯ জুন এই বিল পাস হবে। আর বাজেট পাস হবে ৩০ জুন। এর আগে আগামী রোববার (৬ জুন) থেকে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে। সবমিলিয়ে বাজেট পাসের প্রক্রিয়া ১০ দিন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রতিবছরই বাজেট উত্থাপনের দিন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণ, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকলেও এবার কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আগেই সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার স্থগিত করা হয়।

তবে বরাবরের মতো রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সংসদে উপস্থিত থেকে বাজেট পেশ প্রত্যক্ষ করেন। অধিবেশন শুরুর আগে প্রস্তাবিত অর্থবিলে স্বাক্ষর করেন তিনি।

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট সংসদে উত্থাপনের আগে তা অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভার কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বিশেষ এই বৈঠক হয়। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর এই বাজেট প্রস্তাব ও অর্থবিল রাষ্ট্রপতির সই করার জন্য নেয়া হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাতে সই করার পর সংসদ অধিবেশনে বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

এদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের শুরুতেই সংসদ অধিবেশনে ১৯৭১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ ৫০ বছরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। সংক্ষিপ্ত পরিসরে উত্থাপিত লিখিত বাজেট বক্তৃতা ছিল ১৯২ পৃষ্ঠার। গত কয়েক অর্থবছরে বাজেট পেশের পাশাপাশি তার চুম্বক অংশ পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় দেখানো হলেও এবারই প্রথম অর্থমন্ত্রী পাঠ না করে প্রায় পুরো অংশই ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপস্থাপন করেন।

সেখানে কীভাবে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আজ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠল সেই বিষয়টি দেখানো হয়। উপস্থাপনার শুরুতেই বলা হয়, শূন্য ক্যানভাসে কী নিখুঁত শিল্পীর মতো পুনর্গঠনের ছবি আঁকা শুরু করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরিকল্পনা কমিশন, কৃষি গবেষণা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, পরমাণু শক্তি কমিশন, বিসিএসআইসহ সবগুলো অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান নির্মাণ করে গেছেন বা প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠার শুরুটা করে দিয়ে গেছেন। সোনার বাংলা গঠনের মজবুত ভীত তাঁর হাত দিয়েই শুরু হয়েছে।

অডিও ভিজ্যুয়ালে ১৯৭৪-৭৫ সালে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৯-এর ওপরে জিডিপি অর্জিতের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, যদি একদল বিপথগামীর কারণে এই দেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে না হারাতো, তাহলে প্রবৃদ্ধি একইহারে থাকত এবং আজ সুবর্ণজয়ন্তীতে এক দশমিক দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছুঁয়ে থাকত বাংলাদেশ।

মাত্র এক দশকে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার অংশে বলা হয়, ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন মৃত্যু ঝুঁকি মাথায় নিয়ে। শুরু করেন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধারের কাজ।

পরবর্তীতে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের কাজ শুরু করেন, শুরু হয় সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। এরপর ২০০১ সালে আবারও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে উন্নয়নের চাকা আবার ঘুরতে শুরু করে। টানা তিন মেয়াদে গত এক দশকে বাংলাদেশের সামনে শুধুই এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। প্রতিবছর বাজেট পেশের দিনটিতে সংসদ ভবন জুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে গতবছর থেকে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশে ছিল কড়াকড়ি।

সংসদ ভবনে প্রবেশের সময় সকলকে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়েছে। আর মূল ভবনে স্বল্পসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করেছেন। সংসদ ভবনের প্রবেশমুখে সকলকেই জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়। এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের তাপমাত্রা মাপা হয়। অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত সংসদ সদস্যরা বিগত দিনের আসন বণ্টন এড়িয়ে করোনা সতর্কতা মেনে আসন গ্রহণ করেন। অধিবেশন কক্ষে এক থেকে দুটি আসন পর পর তারা বসেছিলেন। অধিকাংশের মুখে মাস্ক, হাতে গ্ল্যাভস ও মাথায় ক্যাপ ছিল। সংসদ পরিচালনায় দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও একই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

কালের আলো/এসবি/এমআরকে