এতিম কিশোরীকে গণধর্ষণ, অভিযুক্তকে ধরল পুলিশ
প্রকাশিতঃ 9:20 pm | May 13, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলোঃ
ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছেন। দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন বাবা। তবে সেই সংসারে ঠাঁই হয়নি ১৬-১৭ বছরের কিশোরীর। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় দাদির সঙ্গে থাকে সে। দাদিকে নিয়েই কষ্টের সংসার কিশোরীর।
সিরাজগঞ্জের রায়পুরে থাকে তার এক বান্ধবী। সে জানায়, সিরাজগঞ্জে আসলে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে। বাধ্য হয়ে গত ৬ মে চাকরির খোঁজে বেরিয়ে পড়ে কিশোরী।
তবে করোনা পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধে সড়কে গাড়ি নেই। ভেঙে ভেঙে সিরাজগঞ্জে পৌঁছানোর চেষ্টা করে সে। যাত্রাপথে টাঙ্গাইলের কালিহাতি পর্যন্ত পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয় তার। সেখানে গিয়ে আর গাড়ি না পেয়ে রেল স্টেশনে গিয়ে আশ্রয় নেয় সে। খুঁজতে থাকে সিরাজগঞ্জে যাওয়ার উপায়। অথব নিরাপদে রাতটা পার করার কোনো আশ্রয়।
রাতে স্টেশনে কিশোরীকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার দিকে এগিয়ে যান এক লেগুনাচালক। সিরাজগঞ্জে তার বান্ধবীর বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দেয় চালক। বাধ্য হয়ে ওই কিশোরী লেগুনায় চড়ে। পথে ওই লেগুনায় ওঠেন আরও কয়েকজন যুবক।
তারা কিশোরীকে নিয়ে হাতিয়া ও সল্লার মাঝামাঝি এলাকায় অবস্থিত বটতলা গ্রামের দিকে যায়। সেখানে গাড়ি থেকে নামিয়ে টেনে-হিঁচড়ে একটি ধানক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে তারা। ভোরের দিকে কিশোরীকে ছেড়ে দেয় তারা।
ধর্ষণের শিকার কিশোরী অসুস্থ শরীরে সেখান থেকে চলে যাওয়ার সময় পথে এক ব্যক্তিকে পুরো ঘটনা জানান। ওই সময় মেয়েটি ভয়ে কাঁপছিল। সে ভয়ে কারও কাছে সাহায্য চাইতেও পারেনি।
গত ৬ মে এর এমন ঘটনা ১২ মে বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং পরিচালিত পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের ইনবক্সে মেসেজ করেন। মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাটি কালিহাতি থানার ওসি সওগাতুল আলমকে লিখিত আকারে পাঠিয়ে মেয়েটিকে এবং ধর্ষকদের খুঁজে বের করার নির্দেশনা দেন।
কালিহাতি থানার ওসি তৎপরতায় পরিদর্শক রাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে এসআই রাজু আহমেদ এবং এএসআই তৈয়ব আলীসহ পুলিশের একটি টিম ঘটনার তদন্তে নামেন। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা খুঁজে পায় তারা।
তবে ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশেষ কোনো ক্লু না থাকায় প্রথমে বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকে। তবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তারা অল্প সময়ের মধ্যেই কিশোরীকে শনাক্ত করেন। কিশোরীর দাদির ঠিকানা খুঁজে পায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে পাওয়া যায় কিশোরীকেও। সেখান থেকে তাকে কালিহাতি থানায় আনা হয়। তাকে অভয় এবং আশ্বাস দেয়া হয়, অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেয়েটির বর্ণনা ও দেয়া তথ্যমতে আসামিদের শনাক্ত করে পুলিশ। বুধবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামিসহ দুই ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়। অন্য অসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন- সল্লা গামের খলিলুর রহমানের ছেলে মো. লালন (২০), শাহ আলমের ছেলে মো. রাসেল, আব্দুল আজিজের ছেলৈ মো. সুমন, শাহ জামালের ছেলে মো. রিপন। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হয়েছে।
ভুক্তভোগী কিশোরী বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন। মেয়েটির একটি পুনর্বাসনের জন্য চেষ্টাও করছে পুলিশ।
পুরো প্রক্রিয়ায় পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং পরামর্শক এবং সমন্বয়ক হিসেবে পাশে থেকেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মে) বাংলাদেশ পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দেয়া স্ট্যাটাসে এসব তথ্য জানানো হয়।
কালের আলো/বিএস/এমএইচ